প্রায় এক বছর ধরে চীনের সঙ্গে তুঙ্গে ওঠা বাণিজ্য যুদ্ধ স্তিমিত করার লক্ষ্যে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিঙের সঙ্গে বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণ আগে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প পেন্টাগনকে নির্দেশ দিয়েছেন অবিলম্বে নতুন করে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে। আচমকা ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মহল একাধারে স্তম্ভিত এবং বিস্মিত। ৩৩ বছর আগে ১৯৯২ সালে আমেরিকা তাদের শেষ পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করেছিল। একইভাবে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯০ সালে এবং চীন ও ফ্রান্স তাদের সর্বশেষ পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায় ১৯৯৬ সালে। বস্তুত ১৯৯৬ সালেই সিটিবিটি পূর্ণাঙ্গ পরমাণু পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তির পর সেই অর্থে কোনও দেশই আর পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণে অগ্রাধিকার দেয়নি। তবে সিটিবিটি-তে স্বাক্ষর করেনি এমন দেশগুলি (ভারত, পাকিস্তান সহ) পরমাণু অস্ত্র গবেষণা থেকে বিরত হয়নি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে আমেরিকা বিশ্বে প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষা করে। পরের মাসেই সেই বোমা নিক্ষেপ করে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে। তারপর থেকে ১৯৯৬ সালে সিটিবিটি চুক্তি পর্যন্ত পাঁচ দশকে বিভিন্ন দেশ দু’হাজারেরও বেশি পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়। তারমধ্যে একা আমেরিকা ১০৩২টি, সোভিয়েত ৭১৫টি। সিটিবিটি’র পর ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়।
বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রের মজুত ভাণ্ডার সর্বোচ্চ হয় ১৯৮৬ সালে। ৭০ হাজারেরও বেশি পরমাণু অস্ত্র ছিল বিভিন্ন দেশের হাতে। সোভিয়েত বিপর্যয়ের পর তথাকথিত ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানে রুশ-আমেরিকা পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণে সম্মত হয়। তাতে পরমাণু অস্ত্র কমতে কমতে ১২ হাজারে এসে ঠেকে। বিশ্বকামী মানুষের চাপে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই প্রক্রিয়া উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে।
গত দু’তিন দশকে পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণ রোধে আমেরিকা বিশ্বজুড়ে যথেষ্ট দাদাগিরি চালিয়েছে। ভারত ১৯৭০-র দশকে প্রথম এবং ১৯৯০-র দশকে দ্বিতীয় পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানোর পর ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা চাপায় আমেরিকা। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে তো স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। ইরানের পরমাণু গবেষণা বন্ধ রাখতে গত কয়েক দশক ধরে চলছে নানা স্তরের নিষেধাজ্ঞা। কয়েকমাস আগেও ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানে সামরিক হামলা চালিয়ে তাদের পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ধ্বংস করে আমেরিকা।
সেই আমেরিকা এখন নিজেই নতুন করে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ঝাঁপিয়েছে। অর্থাৎ দুনিয়াজুড়ে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে আমেরিকা। আমেরিকার এই সিদ্ধান্তে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়াবে দেশে দেশে। সব দেশই এখন চাইবে দেশের সুরক্ষার জন্য পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে এবং নতুন নতুন আরও বেশি ধ্বংসাত্মক অস্ত্র বানিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীকে টেক্কা দিতে। বিশ্বকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তথা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবার আয়োজন করেছেন ট্রাম্প। বিশ্ব অর্থনীতি এমনিতে সঙ্কটের মধ্যে। এই অবস্থায় সরকারগুলি অস্ত্র গবেষণা ও উৎপাদনে বাড়তি ব্যয় করে তাহলে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্কট বাড়বে। তাই বিশ্বজুড়ে নতুন করে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির দাবিতে আন্দোলন জোরালো হওয়া জরুরি।
Arms Race
পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা
×
Comments :0