‘দেশবিরোধী’ ‘উসকানিমূলক’ ও ‘কুৎসা’ প্রচার আটকাতে সোশাল মিডিয়ায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ বলবৎ করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মোদী সরকার। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্ল্যাটলর্মগুলিতে কি পোস্ট হচ্ছে তার কনটেন্ট দেশবিরোধী বা উসকানিমূলক কিনা যাচাই করতে বলা হয়েছে প্ল্যাটফর্মগুলিকে। এর আগেই অবশ্য তথ্য প্রযুক্তি আইন সংশোধন করে সরকার এই অধিকার নিজের হাতে নিয়েছে। যে কোনও কনটেন্ট সরকারের বিচারে দেশবিরোধী বা সার্বভৌমত্ব বিরোধী মনে হলেই সরকার একতরফাভাবে ব্যবস্থা নিতে পারবে। সেই পোস্টগুলি যেমন সরকার বন্ধ করে দিতে পারবে তেমনি যে সব অ্যাকাউন্ট থেকে সেগুলি পোস্ট হচ্ছে বা প্রচার হয়েছে সেগুলিও বন্ধ করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে ‘দেশবিরোধী’ বা ‘সার্বভৌমত্ববিরোধী’ শব্দদ্বয়ের সংজ্ঞা যেহেতু অস্পষ্ট ও অস্বচ্ছ তাই সরকার যথেচ্ছভাবে তাদের দমননীতি চালাতে পারবে। এই আইনি ক্ষমতা বলেই কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স ২৩৩৫টি অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে। প্রথমে জানা ছিল না কে বা কারা এর পেছনে সক্রিয়। ধরে নেওয়া হয়েছিল একাই একাজ করেছে। প্রবল হইচই শুরু হবার পর এরাই জানিয়ে দেয় এটা কেন্দ্রীয় সরকারই করেছে।
যে অ্যাকাউন্টগুলি ব্লক করা হয়েছে সেগুলি সব দেশবিরোধী বা সার্বভৌমত্ব বিরোধী কনটেন্ট পোস্ট করেছে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় কনটেন্ট সরকার বিরোধী বা বিজেপি বিরোধী। যে কোনও কট্টর দক্ষিণপন্থী রাজনীতির আধারে উদারতার ঠাঁই হয় না। এরা স্বতত বিরোধিতা বা সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। বিরোধিতা-সমালোচনাকে ওরা ভয় পায়। ক্ষমতা হারানোর উদ্বেগ থাকে। তাই বিরোধিতার কণ্ঠ, সমালোচনার কণ্ঠ, ভিন্ন মতের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে ওরা সদা সক্রিয় থাকে। গণতন্ত্রে বিরুদ্ধ মত সর্বদা স্বাগত। গণতন্ত্রের শক্তি নিহিত থাকে বিরোধিতার ও সমালোচনার অবাধ স্বাধীনতার মধ্যে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভারতের মতো দেশে সমালোচনার ও বিরোধিতার অধিকার থাকবে তার অর্থ এই নয় স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে নাগরিকরা সব দলে দলে দেশবিরোধী হয়ে যাবে বা দেশের শত্রু হয়ে যাবে। বরং স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে দেশপ্রেমিক মানুষ দেশের স্বার্থে সরকারের নীতি এবং শাসক দলের রাজনীতির বিরোধিতা ও সমালোচনা করবে। যদি দু’-একজন কোথাও দেশবিরোধী কোনও প্রচার করে থাকে দেশপ্রেমিক ভারতবাসী তাতে প্রভাবিত হবার মতো নির্বোধ নন। এমনটা ভাবারও কারণ নেই শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা এবং সরকারি আমলারা সব দেশপ্রেমের ঠিকাদারি নিয়ে বসে আছে। সাধারণ মানুষ কিছুই বোঝেন না।
আসলে আরএসএস-বিজেপি’র কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তাদের হিন্দুত্ববাদী কট্টর পন্থার সুরক্ষা। উদার গণতান্ত্রিক পরিসরে যুক্তির বিচারে টিকে থাকার আত্মবিশ্বাস তাদের কম। যুক্তি দিয়ে, বিজ্ঞান দিয়ে তারা তাদের অবস্থানকে আবদ্ধ করে জোর করে চাপিয়ে দিতে চায়। স্বৈরাচারী প্রবণতা এই জন্যই তাদের মধ্যে প্রবল হয়। তারা চায় জোর করে তাদের মত, অবস্থান মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে। মানুষের স্বাধীন মতামতের অধিকার কেড়ে নিতে। সেটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সহজ নয় বলে ভিন্ন স্বর ভিন্ন মতকে দেশবিরোধী দাগিয়ে দিয়ে স্তব্ধ করতে চায়।
Social media gag
স্বৈরাচারী পদক্ষেপ

×
Comments :0