গল্প — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
সামনাসামনি
সৌরীশ মিশ্র
রবিবারের সকাল। সোয়া সাতটা বাজতে চলেছে প্রায়।
এই গল্পের যে প্রধান চরিত্র সেই বছর দশেকের, ছোট্ট রুকু ওদের বাড়ির দোতলার সরু লম্বা বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছে এখন। এই একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছে ও।
ওদের বাড়ি লাগোয়া রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে ছিল রুকু। রাস্তাটা ভেজা। সম্ভবতঃ, এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। রাস্তাটা এখন একদম ফাঁকাও।
ব্রাশ করছিল রুকু আর ইতি-উতি চাইছিল।
হঠাৎই তখুনি, ওদের বাড়ির সামনে, ডান পাশে যে ইয়া বড় ঝাঁকড়া নিমগাছটা আছে, সেটার মোটা গুড়িটায় চোখ পড়তেই চোখ আটকে গেল সেখানেই রুকুর। আরে, ওটা কি নিমগাছটার গুড়ি বেয়ে উঠছে! স্ক্যুইরল, না? - মনে মনে নিজেকেই নিজে শুধোয় রুকু। ক'পা একটু এগিয়ে যায় সে। ভাল করে নজর করে এবার। তারপর নিজেই ফের নিজেকে বলে মনে মনে, হ্যাঁ, স্ক্যুইরলই তো!
কাঠবিড়ালিটা ততক্ষনে গুড়িটাকে চার পায়ে ধরে ধরে আরো বেশ কিছুটা উঠে গিয়েছে উপরে। তারপর, সেটা মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছেও গেল নিমগাছটার ডালপালাগুলো যেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে সেখানে। এক লাফে গুড়িটা থেকে এবার একটা ডালে উঠল ওটা। তারপর, এক ডাল থেকে আর একটা ডাল, সেখান থেকে আবার অন্য একটা ডালে ঘুরতে থাকল সেটা নিজের মনে। ব্রাশ করা ভুলে গিয়ে প্রায় রুদ্ধশ্বাসে একের পর এক এই দৃশ্যগুলো দেখে যাচ্ছিল রুকু। কিন্তু, আর বেশিক্ষণ দেখা গেল না কাঠবিড়ালিটাকে। ঝাঁকড়া গাছটার অজস্র পাতার মধ্যে কোথায় যে চলে গেল ওটা কে জানে! এদিক-ওদিক অনেক উঁকি-ঝুঁকি মেরেও আর দেখতে পেল না কাঠবিড়ালিটাকে রুকু।
রুকু এবার আর অপেক্ষা করল না। মুখে ব্রাশ নিয়েই সে ছুটে চলল বাড়ির রান্নাঘরের দিকে। রান্নাঘরটা ওদের বাড়ির একতলায়। সিঁড়ি দিয়ে দুড়দাড় করে নিচে নামতে থাকল সে। রুকু যে আর তার এক্সাইটমেন্ট ধরে রাখতে পারছে না কিছুতেই। মা আর ঠাম্মি রান্নাঘরেই আছে। তাই সেখানেই চলেছে ও এখন দারুণ খবরটা দিতে ওর মা আর ঠাম্মিকে। বাবা তো বাজারে গেছে। বাজার থেকে এলেই বাবাকেও খবরটা দেবে রুকু। তারপর, ফোন করে ওর দুই সবচাইতে কাছের বন্ধু প্রিয়া আর অদিতিকে। এসব ইতিমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছে ছোট্ট রুকু। স্ক্যুইরল ও আগেও দেখেছে ঠিকই। কিন্তু, তাতো শুধুই টিভির বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে, নয় তো বই-এ ছাপা ছবিতে। সামনাসামনি স্ক্যুইরল দেখা যে ওর এই প্রথমবার! এক্সাইটেড হবে না রুকু!
Comments :0