অভীক ঘোষ- চুঁচুড়া
ওড়িশার ঝারসুগুডা জেলায় কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশী সন্দেহে আটক হয়েছিলেন হুগলি জেলার চুঁচুড়া থানা এলাকার পরিযায়ী শ্রমিক দেবাশীষ দাস। বাড়ি ফিরে তিনি জানালেন চরম হয়রানীর শিকার হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ওড়িশার স্থানীয় পুলিশ তাদের হয়রান করেন। তাদের যে ভাড়া বাড়ি ছিল সেখান থেকে অন্য জায়গায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কি কি ডকুমেন্ট আছে তা দেখতে চাওয়া হয়। তাঁর কাছে পাসপোর্ট, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, জন্মের শংসাপত্র সহ মাধ্যমিকের এবং পুলিশ ভেরিফিকেশান সার্টিফিকেট ছিল। সেগুলো দেখালেও ছাড়া হয়নি তাঁকে। ফোন কেরে নেওয়া হয়। বাড়ি বা কোম্পানীর ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘‘পরিবারে অনটন থাকার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি ভিনরাজ্যে কাজে যায়। প্রতিবারের মতো গত জুন মাসের ১৪ জুন এক সংস্থার হয়ে কাজে গিয়েছিলেন হুগলির চুঁচুড়া ২ নং রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা দেবাশীষ দাস। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। বিভিন্ন প্রজেক্টে ফায়ার সিস্টেমের কাজ করেন তাঁরা। কিন্তু বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশী সন্দেহে চরম হয়রানী করে বিজেপি শাসিত রাজ্য ওড়িশার পুলিশ প্রশাসন। অবশেষে শুক্রবার বাড়ি ফিরে আসেন তিনি।’’ ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে দেবাশীষ দাস বলেন,‘‘ আমাদের ভাড়া বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে একটা থানায় প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে একটা মিটিং হলে আমাদেরকে রাখা হয়েছিল। দুবেলা কোনরকম দু মুঠো খেতে দিয়েছে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। মোবাইল ফোন পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেয়নি। আমার জামাকাপড় পর্যন্ত এখনও ভাড়া বাড়িতে রয়ে গেছে। সেখান থেকে কোন কিছুই সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারিনি। দেশের ১৪ টা রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে কাজে গিয়েছি। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যে পরতে হয়নি। এই ঘটনার পর বাইরে কাজে যেতে ভয় লাগছে। তবে কাজে না গেলে সংসার চলবে কি করে।’’
ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে কয়েকদিন খুবই চিন্তায় ছিলেন মা বিভা দাস। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে আটক করেছে এই খবর শোনার পর থেকে আমাদের নাওয়া খাওয়া ছিল না। মনে হচ্ছিল আমার ছেলেটাকে আর হয়তো পাবো না। ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারায় দিশাহারা হয়ে পড়ি। কি করব কোনো দিশা পাচ্ছিলাম না। তারপর যখন ফোন করল তখন ধরে প্রাণ এলো। পাসপোর্ট দেখে তারপর ছেড়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন কি ভরসায় বাইরে ছাড়ব ছেলেকে। আজকে যদি এমন পরিস্থিতি হয় তাহলে বাংলার মানুষ কোনো কাজই করতে পারবে না। বাইরে গেলে কি করে নিরাপদে থাকবে। সব ডকুমেন্টস আছে তারপরও কি করে এমন ঘটনা ঘটায় প্রশাসন। এটা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। আজকে আমার ছেলের সঙ্গে হয়েছে কাল অন্যদের সঙ্গেও হবে। এভাবে চলতে পারেনা। তিনি দাবি করে বলেন, আমাদের রাজ্যে তো এমন হচ্ছে না। এরকম সমস্যা করলে মানুষ কি করে খাবে?’’
বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে কোন কাজ না পেয়ে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছেন। বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলিতে বিশেষ করে বাংলাভাষী সংখ্যালঘু পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বাংলাদেশী তকমা লাগিয়ে জুলুম চালাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশী সন্দেহে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক পরিযায়ী শ্রমিককে। যা ‘পুশব্যাক’ নামে পরিচিত। এদিক থেকে পুশব্যাক হলেও ওদিকে বাংলাদেশ গ্রহণ করছে না। ফলে মহিলা-শিশু-বৃদ্ধরা খোলা আকাশের নিচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ভাষাগত কারণে কোনও ভারতীয় নাগরিক যাতে এইভাবে হেনস্থার শিকার না হন, তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষায় প্রশাসনের সংবেদনশীল ভূমিকা থাকা অত্যন্ত জরুরি এই দাবি তুলছে পরিযায়ী শ্রমিকরা।
Comments :0