ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি ঠেকানোর লক্ষ্যে ভারতে পরিকল্পনা ধাক্কা খেতে চলেছে মালদ্বীপের পদক্ষেপে। রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেবার পরদিনই নতুন রাষ্ট্রপতি মোহমেদ মুইজ্জু সরকারিভাবে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছেন তারা যেন মালদ্বীপে থেকে সমস্ত ভারতীয় সেনা এবং ভারতের দেওয়া দুটি সামরিক হেলিকপ্টার এবং একটি ডরনিয়া বিমান ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আগেই তিনি একাধিকবার স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তাঁদের দেশের মাটিতে কোনও বিদেশি সেনা থাকবে না। চীনের সমর্থক হিসাবে পরিচিত মুইজ্জু বিরাট জনসমর্থন নিয়ে ভোটে জিতে রাষ্ট্রপতি হয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তৎপর হতেই সিদুঁরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে মোদী সরকার। ভারতের প্রতিবেশী এই দেশটি ভারত মহাসাগরে এমন এক জায়গায় অবস্থান করে যা ভারতে সামরিক ও স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন গুরুত্বপূর্ণ শ্রীলঙ্কাও। মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে ভারত মহাসাগরে ভারতের প্রভাব কতটা শক্তিশালী হবে। তেমনি ভারত অপেক্ষা মালদ্বীপের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক গভীর হয় তাহলে ভারতের উদ্বেগ অনেকটাই বেড়ে যাবে।
এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মুইজ্জুর অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল ভারতীয় সেনা অপসারণ। বস্তুত মালদ্বীপের সার্বোভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে ভারতীয় সেনা অপসারণই হয়ে উঠেছিল নির্বাচনে প্রধান ইস্যু। মানুষ এই প্রশ্নে মুইজ্জুকে বিরাটভাবে সমর্থন করেছেন। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেবার পর তাঁর প্রথম কাজ হবে ভারতের সেনা অপসারণ। তিনি সেটাই করেছেন।
ভারতের প্রতিবেশী এই দেশটির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে বরাবরই অত্যন্ত ভালো ছিল। নানাভাবে ভারত মালদ্বীপকে সাহায্য করত। অন্য কোনও দেশের সঙ্গে তাদের তেমন কোনও সম্পর্ক ছিল না। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর উগ্র জাতীয়তাবাদী আবহে চীনের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটতে শুরু করে। মোদী সরকারের অতি মার্কিন অনুরাগ এই সম্পর্কে আরও তিক্ততা আনে। তাছাড়া এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনের প্রভাবের মোকাবিলায় মার্কিন পরিকল্পনায় ও নেতৃত্বে গঠিত চতুর্দেশীয় জোটে ভারত প্রধান সদস্য হয়ে ওঠায় চীন-ভারত সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছে যায়। এই অবস্থায় চীন মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে উদ্যোগ নেয়। আবদুল্লা ইয়াসিন (২০১৩-১৮) সরকারের আমলে চীন মালদ্বীপের উন্নয়নে বিরাটাকারে বিনিয়োগ করতে থাকে। তারপরই সরকারে আসে ভারতপন্থী ইব্রাহিম সোলিহ। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খানিকটা শিথিল করে তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার চেষ্টা করেন।
২০১৩ সালে মনমোহন সিং সরকার ভারতের সাহায্য হিসাবে মালদ্বীপকে দুটি হেলিকপ্টার উপহার দিয়েছিলেন। সঙ্গে সেগুলি চালানোর জন্য কয়েকজন সেনাও পাঠান। মোদী ক্ষমতায় এসে আরও একটি বিমান পাঠিয়ে ভারতীয় সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে দেন। চুক্তি হয় একটি সামরিক বন্দর ও ডক নির্মাণের এবং ভারতের সেনার সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনায়। শর্ত ছিল এই বন্দরে ভারতের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনও দেশের জাহাজ ভিড়তে পারবে না। এই ঘটনা মালদ্বীপের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়। গত নির্বাচনে তাঁরই প্রতিফলন। জনগণের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে ভারতবিরোধী মনোভাব।
Comments :0