Bangladesh Mob Lynching

বাংলাদেশে উন্মত্ত ভিড় ১০ মাসে হত্যা করেছে ১৭২ জনকে

আন্তর্জাতিক

মীর  আফরোজ জামান, ঢাকা

বাংলাদেশে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে ১০ মাসে  ১৭২ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) নামক একটি এনজিও। উন্মত্ত ভিড় জায়গায় জায়গায় এমন হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলে জানিয়েছে এই সমীক্ষা প্রতিবেদন।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, কোথাও চোর-ছিনতাইকারী-চাঁদাবাজ অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কোথাও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামি লিগের সহযোগী ও দোসর বলে ঘিরে ধরে চলেছে মারধর। কোথাও ভারতের দালাল  অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। 
এই প্রতিবেদন বলেছে, নিহতদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে কোনো মামলাই ছিল না। হত্যার পাশাপাশি উন্মত্ত ভিড়ের তাণ্ডবে অনেকে জীবিকা হারিয়েছেন। ব্যবসা ধ্বংস হওয়ায় পথে বসে গেছে হাজার হাজার পরিবার। 
আইন সালিশ কেন্দ্র জানাচ্ছে, ভারতের দালাল আখ্যায়িত করে উত্তরায় অবস্থিত এক সাংবাদিকের দপ্তরে ভাঙচুরসহ পুলিশের সহযোগিতায় সমন্বয়ক নামধারীরা উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে উচ্ছেদ করেছে। এখানেও ভিড়তন্ত্র সক্রিয়। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি ওই সাংবাদিকের পরিবার। শুধুই ওই পরিবারই নয়, হাজার হাজার পরিবার ধ্বংসের সম্মুখীন।     
প্রতিবেদনে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)  জানিয়েছে, গত আগস্ট থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১৭২ জনকে প্রশাসনিক আট বিভাগে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার মধ্যে ঢাকায় ৮০ জন, চট্টগ্রামে ২৮ জন, বরিশাল ও রাজশাহীতে ১৬ জন, খুলনায় ১৪ জন, রংপুরে ৭ জন, ময়মনসিংহে ৬ জন এবং সিলেটে ৫ জনকে হত্যা করা হয়। 
ভিড় তৈরি করে হত্যা সবচেয়ে বেশি গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ওই মাসে ২৮ জনকে হত্যা করা হয়।
উনম্ত্ত ভিড় পাঠিয়ে হত্যা পরিকল্পিত এবং গুরুতর অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, এটি পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড। আর যারা এতে অংশ নেয়, তারা সবাই সমানভাবে দায়ী থাকে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দল বেঁধে মারধর বা হত্যা প্রতিরোধ করতে পারছে না। তবে এবার কঠোর হওয়ার ঘোষণা করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনী। সম্প্রতি কিছু ঘটনা প্রতিহত করেছে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী। 
গত ১৬ মে ধানমন্ডিতে একজন প্রকাশককে দল বেঁধে ঘিরে ধরা হয়। তবে ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমার দৃঢ়তায় সেই অপরাধীদের আটকানো গিয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ঢাকা, রংপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামেও কিছু দলবদ্ধ হামলার ঘটনা ঠেকিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। 
রণদা প্রসাদ সাহা (আর পি সাহা) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী লতিফুর রেজা বলেন,  'কোনো সভ্য সমাজে বিচারব্যবস্থার বাইরে গিয়ে কাউকে হত্যা করা ন্যায়সংগত হতে পারে না। এটা আমাদের মানবিক মূল্যবোধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে'।
তিনি বলেছেন যে জন সচেতনতা বৃদ্ধি, গুজব রোধে দ্রুত তথ্য যাচাই ও ছড়িয়ে দেওয়া, কড়া আইন প্রয়োগ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment