উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে যাওয়া ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়াকুঠী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হোগলাটারি এবং বেতগাড়া অঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রেল বাঁধ পুনর্নির্মাণের জন্য অবশেষে অর্থ বরাদ্দ করল রেল দপ্তর। জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এই দুটি বাঁধ মেরামতের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়ার দিনক্ষণও ঘোষণা করেছে। দীর্ঘ ৬০ দিন ধরে ঝড়, বৃষ্টি আর শীতের মধ্যে চরম দুর্দশার জীবন কাটানো দুর্গতদের লাগাতার আন্দোলন এবং সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে জোরালো দাবির পরেই এই গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বরাদ্দ এল।
গত ৫ অক্টোবর, উত্তরবঙ্গের বন্যায় ধূপগুড়ির গধেয়াকুঠী এলাকার এই দুটি রেল বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাঁধ ভেঙে হু হু করে জল ঢুকে পড়ায় একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে এবং শতাধিক বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যায়। এর ফলে প্রায় ১০০ টিরও বেশি পরিবার ভিটেছাড়া হয়ে খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল টাঙিয়ে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়।
ভয়ঙ্কর দুর্যোগের পর দীর্ঘ দু'মাস কেটে গেলেও রেল বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। ভিটেহারা মানুষজন দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবিতে ব্লক অফিসে অবস্থান বিক্ষোভও করেন। এই চরম পরিস্থিতিতে, সিপিআই(এম)’র জেলা নেতৃত্ব প্রথম থেকেই দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে। সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে রেলের কাছে দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানানো হয়। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়লে এবং হোগলাটারি এলাকার দুর্গতরা রেল অবরোধের হুমকি দিলে রেলের আধিকারিকরা নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হন।
সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক পীযূষ মিশ্র এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিপর্যয়ে গধেয়ারকুঠির হোগলাটারির মানুষজন ভিটেছাড়া হয়েছেন। গত ৫ অক্টোবর থেকে এই শতাধিক পরিবার ত্রিপলের নিচে জীবনযাপন করছে। দীর্ঘ ৬০ দিন ধরে ঝড়, বৃষ্টি এবং শীতের মধ্যে তাঁরা চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। খাবার নেই, পানীয় জল নেই।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‘দীর্ঘকাল ধরে কোনো রকম মেনটেনেন্স (নিয়ন্ত্রণহীনতা) না থাকার কারণেই রেলের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। এর ফলেই শতাধিক পরিবার ভিটেছাড়া হয়েছেন।’’
এই চরম পরিস্থিতির প্রতিবাদে দীর্ঘ লড়াই হয়েছে, রাস্তা অবরোধ হয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর 'আমাদের রান্নাঘর'-এ সিপিআই(এম)’র উদ্যোগে সাধারণ মানুষকে নিয়ে সভা করে ৪ ডিসেম্বর রেল অবরোধের ঘোষণা করা হয়। গণআন্দোলনের এই তীব্র চাপেই ৩ ডিসেম্বর রেলের অধিকারিকরা এসে দুর্গত মানুষগুলোর কাছে সাত দিনের সময় চান। এর পরপরই রেলের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দের এই ঘোষণা আসে।
অর্থ বরাদ্দকে দেরিতে হলেও স্বাগত জানিয়ে মিশ্র স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘‘এই উদ্যোগ দেরিতে হলেও ঠিক আছে, তবে ৬০টা দিন কম নয়, মানুষ ঝড়, বৃষ্টি, শীতে ত্রিপলের নিচে জীবনযাপন করছে, এটা চলতে পারে না। খুব দ্রুত রেলের বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। যাদের ভিটে মাটি নেই, ভিটে উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে, তাদের দ্রুত ভিটেতে মাটি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ দুর্গতরাও সংবাদ মাধ্যমের কাছে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরুর কথা জানতে পেরেছেন। বন্যা দুর্গত শম্ভু মন্ডল, বিমল নাগ, রূপচাঁদ মন্ডল, শ্যামল মন্ডলরা বলেন, ‘‘দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু করা হোক এবং বাঁধের নির্মাণ সঠিক মান বজায় রেখে দ্রুততার সঙ্গে করা হোক।
এখন এটাই দেখার বিষয়, রেল দপ্তর কতদিনে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে এবং ভিটেহারা মানুষগুলি কবে তাদের নিজের জায়গায় ফিরতে পারেন। সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যতক্ষণ না কাজ শুরু হচ্ছে এবং ভিটেহারাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নজরদারি ও লড়াই জারি থাকবে।
Comments :0