Editorial

ব্যর্থতা ঢাকার জন্য

সম্পাদকীয় বিভাগ

মোদী সরকারের ১১ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে সাফল্যের জয়ঢাক বাজাতে হই-হই করে বাজারে নেমে পড়েছেন অন্ধ ভক্তরা। মূল ধারার সংবাদমাধ্যম এক দিকে আর অন্যদি‍‌কে সমাজ মাধ্যম রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে কারা কত বড় ভক্ত। ‍‌পিছিয়ে নেই সরকারও।  সরকারি তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে দেশের প্রায় সব সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে ঢালাও বিজ্ঞাপন দিয়ে মোদীকে মহান বানানোর বেপরোয়া প্রয়াসও  শুরু হয়ে গেছে। মোদীর কল্যাণে দেশ নাকি উদ্ভাবনী শক্তির নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।  লক্ষ লক্ষ যুবক অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণে অতি দক্ষ হয়ে উঠেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে  নাকি খুলে গেছে নতুন  দিগন্ত। দেশের সকল নাগরিককে নিশ্চিন্তে ভরা পেটে ঘুমোতে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। সকলের জন্য সম্মানজনক জীবন উপহার  দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা,  নিশ্চয়তা, আত্মসম্মান ইত্যাদি কোনও কিছুই অধরা রাখা হয়নি। অর্থাৎ মোদী জমানায়  দেশের মানুষ মোদীর কাছ থেকে সবকিছুই  পেয়ে গেছে এমন দাবি করে ভক্তবাহিনী শোরগোল তুলে দিয়েছে। কিন্তু  দেশের যুবকদের জন্য কাজের বন্দোবস্ত  বা সম্মানজনক মজুরি প্রাপ্তির বন্দোবস্ত করেছেন বলে কোনও দাবি করা হয়নি। মানুষের আয় বে‍‌ড়েছে, তারা বেশি করে বাজার থেকে জিনিস কিনছেন, বাজারে পণ্য-পরিষেবার চাহিদা বাড়ছে। বাড়ছে  মানুষের পারিবারিক সঞ্চয়। এমন কথা প্রচারের কোথাও উচ্চারিত হচ্ছে না।  ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিমরা উদ্বেগহীন শান্ত জীবন কাটাচ্ছেন এমন দাবিও কেউ করছে না। দলিতরা, বিশেষ করে দলিত কন্যারা প্রতিদিনই অত্যাচারিত হচ্ছেন, যৌন হামলার শিকার হচ্ছেন, ধর্ষিতাও খুন হচ্ছেন— এসব অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে। ধর্মীয় হিংসা, সাম্প্রদায়িক ঘৃণা প্রতিনিয়ত উৎসাহিত হচ্ছে সরকার ও শাসকদলের মদতে সেটা ঢেকে যাচ্ছে প্রচারের আড়ালে।
দেশের অর্থনীতি নাকি বাড়ছে  বিশ্বের সর্বোচ্চ হারে। মোদীর নেতৃত্বে  ভারতের অর্থনীতি নাকি অত্যন্ত শক্তিশালী। শেয়ার বাজারে ফাটকা লগ্নিই নাকি তার প্রমাণ। কিন্তু বাস্তবের অর্থনীতিতে নতুন লগ্নি  হচ্ছে না। নতুন কলকারখানা নেই। আসছে না কোনও বিদেশি বিনিয়োগ। রপ্তানি বাড়ছে না  তবে আমদানি বাড়ছে।  ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। সরকারি ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ পদ খালি, নিয়োগ বন্ধ। ঠিকা কর্মী বা আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করানো হচ্ছে সামান্য মজুরিতে।  জনকল্যাণ  প্রকল্পে  বরাদ্দ ক্রমাগত কমছে। রেগায় বরাদ্দ কমছে।  খাদ্যে ভরতুকি কমছে। সারে ভরতুকি কমছে। কৃষকের সঙ্কট বাড়ছে। কিন্তু বিপরীতে বিত্তবান ও কর্পোরেট মালিকদের আয় ও সম্পদ বাড়ছে হু হু করে। দেশে এক  শতাংশ মানুষের হাতে দেশের ৫০ শতাংশ সম্পদ। জনকল্যাণ ভাবনাকে বিসর্জন দিয়ে, শ্রম আইন শিথিল করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের উপর শোষণ ও যন্ত্রণার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। বিনিময়ে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে সম্পদ বাড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বড়লোকদের। তাই আজ বিশ্বের সর্বাধিক আয় সম্পদ বৈষম্যের  দেশ ভারত। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার হরণে সবচেয়ে নিকৃষ্ট দেশ ভারত। সেই ভারতেই উপরই জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে জনবিরোধী, ফ্যাসিস্তসুলভ স্বৈরাচারী সরকার।

Comments :0

Login to leave a comment