অন্যকথা — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
গোলাপের সুবাসে বন্দুকের ধোঁয়া ঢেকে যাক
অরিজিৎ মিত্র
শান্তি—এ শব্দটি যেন মানবজাতির ইতিহাসের অন্তঃস্থলে লেখা এক অনন্ত আকাঙ্ক্ষা। যুদ্ধের রক্তরঞ্জিত প্রান্তরে যখন মানুষ নিজেরই হাতে গড়া সভ্যতাকে ভস্মে পরিণত করেছে, তখনও অদৃশ্য এক বীজ জন্ম নিয়েছে, যার নাম শান্তি। আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস সেই বীজকে জলসিঞ্চন করে; আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানুষ মানুষের শত্রু নয়, বরং সহযাত্রী।
বন্দুকের মুখ থেকে যে ধোঁয়া উড়ে যায়, তা কেবল প্রাণ কেড়ে নেয় না; তা ছিঁড়ে ফেলে মায়ের আঁচল, শিশুর হাসি, প্রেমিকের স্বপ্ন। অথচ, একটি গোলাপের সুবাসও পারে মানুষকে থামাতে, মুছে দিতে বিদ্বেষের কালো আঁধার। গোলাপ কোনো অস্ত্র নয়, তবুও তার পাপড়ির নরম ছোঁয়ায় মন ঝরে যায়, হৃদয় পবিত্র হয়। আজকের দিনে সেই প্রতীকী গোলাপই মানবজাতির হাতে তুলে ধরা হোক—অস্ত্রের পরিবর্তে প্রেমের দূত হয়ে।
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস আমাদের শেখায়—শান্তি কেবল রাষ্ট্রনায়কদের ঘোষণা নয়; এটি প্রতিটি মানুষের অন্তরের সাধনা। শান্তি শুরু হয় পরিবারে, শান্তি শুরু হয় স্কুলে, শান্তি শুরু হয় প্রতিবেশীর সঙ্গে সৌজন্যে। প্রতিটি ছোট্ট হাসি, প্রতিটি ক্ষমাশীল হৃদয়ই শান্তির পথ নির্মাণ করে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—যেখানে যুদ্ধ মানুষের অহংকারকে চূর্ণ করেছে, সেখানেই শান্তি মানুষের মহিমাকে শাশ্বত করেছে। গান্ধীর অহিংসার পথ, নেলসনের ক্ষমার পথ, রবীন্দ্রনাথের মানবধর্মের গান—এসবই শান্তির জ্যোতিষ্ক, যা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে। আজ, আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসে, আমাদের প্রত্যেকের কণ্ঠে উচ্চারিত হোক সেই আহ্বান: “গোলাপের সুবাসে বন্দুকের ধোঁয়া ঢেকে যাক।”
শান্তি দিবসের বার্তা এক দিনের নয়—এ যেন চিরন্তন মন্ত্র। যুদ্ধের উত্তাপে পুড়ে যাওয়া পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে আমাদের প্রয়োজন ভালোবাসার ছায়া। তাই আসুন, আমরা প্রত্যেকে এক একটি গোলাপ হয়ে উঠি—যার সুবাস ঘৃণার ধোঁয়া সরিয়ে দিয়ে, এই পৃথিবীকে করে তুলবে বসবাসযোগ্য, সুন্দর ও শাশ্বত।
নতুন বন্ধু, নবম শ্রেণী, কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ, উত্তর চব্বিশ পরগনা, কল্যাণ নগর, খড়দহ।
Comments :0