ঠিকঠাক কাজ করে না সরকারি অ্যাপ। তার ওপর দেশের বহু জায়গায় ইন্টারনেট চলে ঢিমেতালে। অঙ্গনওয়াড়িতে আসেন এমন মহিলা বা কর্মীদের ৩৩ শতাংশের স্মার্টফোনই নেই। তবু প্রযুক্তিনির্ভর ‘ই-কেওয়াইসি’ এবং মুখাবয়ব চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থা এফআরসি বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারও নিশ্চুপ।
নতুন এই ব্যবস্থা চাপিয়ে অঙ্গনওয়াড়িতে আসেন এমন মহিলা-শিশু এবং কর্মীদের ওপর বোঝা চাপানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামলেন রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকারা। সারা দেশেই চলছে প্রতিবাদ।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতি সংগঠনের পক্ষ থেকে বুধবার করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিশাল জমায়েত হয়ে মিছিল করে। বিক্ষোভ সভা করে ডিরেক্টরেট এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে ডেপুটেশন দেয় সংগঠন। হয়েছে বিক্ষোভ সভাও। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজ্য সম্পাদিকা শিলা মন্ডল, কার্যকরী সভানেত্রী ইন্দ্রানী মুখার্জি ও মনীষা চক্রবর্তী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বিক্ষোভ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী রত্না দত্ত। ডেপুটেশন দেওয়া হয় নারী ,শিশু ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রীকেও।
১ জুলাই থেকে কেন্দ্রের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক চালু করেছে বাধ্যতামূলক কেওয়াইসি এবং এফআরএস। ‘পোষণ ট্র্যাকার’ অ্যাপে মুখাবয়ব চিহ্নিত করণ এবং উপভোক্তার বিশদ তথ্য প্রতিদিন কেন্দ্রকে পাঠানোর দায় চাপানো হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের ওপর। অথচ, তাঁদের নামমাত্র ভাতায় এই কাজ করতে হচ্ছে। মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ডেটার খরচ দিতে হচ্ছে নিজেদের সামান্য ভাতার টাকা থেকে।
রত্লা দত্ত এবং শিলা মণ্ডল বলেছেন, ‘‘ছবি দেওয়ার আগে আধার কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নম্বর লিঙ্ক করার কথা বলা আছে। কিন্তু নাম রেজিস্ট্রেশন করার সময় যে মোবাইল নিয়ে নম্বর দিয়ে আমরা নাম রেজিস্ট্রেশন করেছি, সেই নম্বর এখন অনেকেরই নেই। অনেকের সেই মোবাইলই নেই। কারণ অধিকাংশ মানুষ এখন আর মোবাইলে সিম রাখতে পারেননি রিচার্জের খরচ লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ায়। ফলে সংশ্লিষ্ট নম্বরে ওটিপি যাচ্ছে না। তাহলে উপভোক্তার বিশদ বা কেওয়াইসি করা কিভাবে সম্ভব?’’
বাস্তব সমস্যা জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, ‘‘শিশুদের আধার কার্ড হয়নি। আগের সরকারি নির্দেশ মতো মায়ের ছবি দিয়ে নাম তোলা আছে। মায়ের আধার কার্ড এখনো আপডেট হয়নি। সেই ক্ষেত্রে এফআরএস বা মুখাবয়ব চিহ্নিতকরণ করতে গেলে ছবি মিলছে না।’’
তাঁরা বলেছেন, ‘‘অনেকেই বাবার মোবাইলে নাম রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন, কিন্তু দেখা যাচ্ছে বাবা পরিযায়ী শ্রমিক। অন্য রাজ্যে কর্মসূত্রে থাকেন। সেক্ষেত্রেও ওটিপি পাওয়ার অসুবিধা আছে।’’
সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন
সারা দেশ জুড়ে এটি একটা কঠিন সমস্যা। প্রত্যেক রাজ্য আন্দোলন শুরু করেছে। রাজ্যের মন্ত্রীর কাছে সংগঠনের দাবি, যোগ্য উপভোক্তা যাতে খাদ্য থেকে বঞ্চিত না হয় সেই দিকে দৃষ্টি রেখে এই পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।
সেই সঙ্গে শ্রম কোড বাতিল, এরাজ্যেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহায়িকা দের সরকারি কর্মচারীর স্বীকৃতি, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী গ্রাচুইটি ও পেনশনের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
অবিলম্বে, ফোন বাবদ ১৫ হাজার টাকা, কর্মী ও সহায়িকা শূন্য পদে পূরণের দাবিও তোলা হয়েছে।
দেশের প্রান্তিকতম অংশের মা ও শিশুদের পুষ্টির ভরসা অঙ্গনওয়াড়ি ব্যবস্থা বা আইসিডিএস। উপভোক্তাদের পুষ্টি সম্পর্কিত একাধিক বিষয়ে দাবি তুলেছে সংগঠন।
POSHAN TRACKER ICDS
কেন্দ্রের অ্যাপ-এ বিপন্ন মা-শিশুদের পুষ্টি, বিক্ষোভ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের

×
Comments :0