বই — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
জালিয়াঁওয়ালাবাগের জার্নাল’: ইতিহাস রচনার এক নতুন দিগন্ত
প্রদোষকুমার বাগচী
শ্রীমতী শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত সম্প্রতি একটি গ্রন্থ নির্মাণ করেছেন। নাম ‘জালিয়াঁওয়ালাবাগের জার্নাল’। অভিনব উপস্থাপনা। শুধু সাদা কাগজে কালো কালি দিয়ে লেখা নয়, অনেকে মিলে হাতে কলমে এর মূর্ত রূপ প্রথমে সাধারণের দৃষ্টিপটে আনা হয়েছে, তারপর বইটির বিষয়বস্তুতে প্রাণ দেওয়া হয়েছে। লেখক শৈশবের নস্টালজিয়াতে অমৃতসরে গিয়ে ১৯১৯ সালের সেই ভয়ানক এপ্রিলে ঘটা জালিয়াঁওয়ালাবাগের গণহত্যার স্মৃতি ও শিকড় খুঁজতে শুরু করেন এক প্রখ্যাত ঐতিহাসিকের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। তখন এটা তাঁর মস্তিস্কে ইতিহাস ও বর্তমানের একটা সেতুবন্ধন গড়ে তুলে আলোড়ন তুলেছে এবং তিনি পেশাগতভাবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে তা ইনস্টলেশন করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মর্মর প্রাসাদে এই জাতীয় সাম্রাজ্যবাদী-নির্যাতনের প্রদর্শনী খুবই অভাবনীয় কিন্তু অভিনব।আর তারপরেই এই মূল্যবান গ্রন্থের পরিকল্পনা। বইটিতে নানা স্তর-বিন্যাস। পরতে পরতে ১৯১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশের রাজনীতিতে কিভাবে জালিয়াঁওয়ালাবাগ (পাঞ্জাবে এই উচ্চারণই চলে বলে জানিয়েছেন লেখক স্বয়ং) ফিরে ফিরে এসেছে স্বাধীনতা সংগ্রামে, বিপ্লববাদী আন্দোলনে, শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনে, রাষ্ট্রযন্ত্রের স্বৈরাচারী দমননীতির প্রতিবাদে, তা দেখানো হয়েছে। এ যেন একটি নয়, অনেক জালিয়াঁওয়ালা বাগ। সেখানে অবশ্যই অনেক ঐতিহাসিক চরিত্র। রবীন্দ্রনাথ, দীনবন্ধু এন্ডরুজ থেকে নরেন্দ্রদাস মোদী পর্যন্ত যিনি সবশেষে একটি ‘ম্যাসাকার মেমোরিয়াল’কে বিনোদনের প্রমোদকাননে রূপান্তরিত করেছেন ভোটের ময়দানে, পদ্মফুলের চাষ করে। এই না হলে শহীদ ভগৎ সিং, উধম সিংদের ভুলিয়ে দেওয়া যাবে কী প্রকারে। শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্তের বইটি হাতে নিয়ে বসে একবার দু’চোখ বন্ধ করুন, সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। বইটির সৌষ্ঠব প্রস্তুতি ও বিন্যাসে সুকন্যা ঘোষ ও সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
জালিয়াঁওয়ালবাগের জার্নাল
শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত। দে’জ পাবলিশিং। কলকাতা— ৭০০ ০৭৩। ৩৯৯ টাকা।
Comments :0