Brinda Karat

সাম্রাজ্যবাদের অনুগত মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের আহ্বান বৃন্দা কারাতের

রাজ্য কলকাতা

আদানি-আম্বানির মতো পুঁজিপতিদের স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে চলছে মোদী সরকার। তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম তীব্র করা জরুরি। দেশের পক্ষে বিপজ্জনক, শ্রমজীবীর পক্ষে বিপজ্জনক সাম্রাজ্যবাদের হাত শক্ত করছে এই সরকার। তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলা আজকের দায়িত্ব। 
শুক্রবার কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে নভেম্বর বিপ্লব সংক্রান্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র প্রবীণ নেত্রী বৃন্দা কারাত। এদিন মঞ্চে ছিলেন সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কনীনিকা বোস ঘোষ, প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা রঘুনাথ কুশারী,  নিরঞ্জন চ্যাটার্জি, রেখা গোস্বামী সহ নেতৃবৃন্দ।
কারাত বলেন, সাম্রাজ্যবাদকে নিজের প্রয়োজনেই আজকে নয়া উদারবাদী বিশ্বায়ন থেকে সরে নিজের নিজের অর্থনীতি বাঁচাতে সংরক্ষণবাদ চালু করতে হচ্ছে। শুল্ককে অন্য দেশকে শাসনোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ ওরা চীনকে ভয় পাচ্ছে। দেখিয়ে দিচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ অজেয় নয়।  
কারাত বলেন, মনে রাখা জরুরি চীনের কারণে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। শ্রমের সঙ্গে পুঁজির দ্বন্দ্ব এবং সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলির দ্বন্দ্ব আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
কারাত বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতি, রোবটিকস, আরটিফিশিয়াল ইনটিলিজেন্সের মতো প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু কারা নিয়ন্ত্রণ করছে। ৭টি সবচেয়ে বড় সংস্থা তাদের হাতে তথ্য বা ‘ডেটা’। পুঁজিবাদের নতুন প্রকরণ হচ্ছে ‘ডেটা ক্যাপিটালিজম’।
তাঁর ব্যাখ্যা, নতুন প্রযুক্তির দুনিয়ায় আমেরিকা একতরফা নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন। সমাজতান্ত্রিক চীনের সমানে এগিয়ে চলছে। সাংহাই কোঅপারেশন, ব্রিকস-র মতো বহুদেশীয় গোষ্ঠী ডলারের বিকল্প মুদ্রার কথা বলছে।


কারাত বলেন, ভারত সরকার ট্রাম্প শুল্ক চাপাতেই মাথা নুইয়ে দিচ্ছে। রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিচ্ছে। আর চীনের ওপর শুল্ক বাড়াতেই চীন পালটা শুল্ক চাপিয়েছে। 
কারাত বলেন, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী চেহারা কমেনি। গত দু’দশকে আমরা বারবার দেখেছি। উন্নয়নশীলের শ্রমিক, কৃষক, মহিলাদের ওপর কী প্রভাব পড়েছে? ব্যাপক বেড়েছে অসমতা। কোভিডের সময় পুঁজিবাদের অমানবিক চেহারা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কোভিডের সময় দেখা গিয়েছে অল্প কয়েকজন পুঁজিবাদীর বিপুল মুনাফা হয়েছে। আর বিশ্বের বিপুল অংশের মানুষ চরম সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। 
কারাত বলেছেন, সবচেয়ে অনিশ্চিত, সঙ্কটজনক অবস্থায় নিযুক্ত রয়েছে শ্রমজীবীর বিপুল অংশ, এখন তাকে বলা হচ্ছে ‘প্রিক্যারিয়্যাট’। নিযুক্তির চুক্তি একেবারেই অস্থিতিশীল। সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে মেরুকরণের দুনিয়ায় সবচেয়ে অনিশ্চিত হয়েছে শ্রমজীবী। তবু পুঁজিবাদের সঙ্কট চলে গেল না। কেনার ক্ষমতা মানুষের না থাকলে চাহিদা থাকবে কিভাবে? বিশ্বায়ন এই সঙ্কটকে কাটাতে পারল না। বরং দীর্ঘসময় ধরে মন্দার প্রবণতার মধ্যে যাচ্ছে। 
তিনি বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি নিজেদের বিরোধকে স্তিমিত রেখেছে উন্নয়নশীল দেশগুলির বাজার দখলের উদ্দেশ্যে। 
কারাত বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সাম্রাজ্যবাদ একমেরু বিশ্বের জন্য চেষ্টা করে গিয়েছে। বেড়েছে আগ্রাসন। আমরা আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া থেকে সুদান- সর্বত্র আমেরিকা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। বারবার সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে। 
কারাত বলেন, সাম্রাজ্যবাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব স্তিমিত হয়ে যায় মুনাফার জন্যই। আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির কথা লেনিন বলেছিলেন সাম্রাজ্যবাদকে ব্যাখ্যা করার জন্য।  আজকের পুঁজিবাদের চরিত্র আমাদের বুঝতে হবে। আজকের সাম্রাজ্যবাদের কী চায়, বুঝতে হবে। গত সিকি শতাব্দীতে বারবার দেখা গিয়েছে আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজি ফাটকাবাজি তৈরি করেছে নিজের সঙ্কট কাটানোর জন্য। সমানে পুঁজির কেন্দ্রীকরণ হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment