ভ্রমণ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
পিণ্ডারির পথে...
অভীক চ্যাটার্জী
দুই
পরদিন সকালে প্রাতরাশ সেরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম খারকিয়ার উদ্দেশ্যে। বাগেশ্বর থেকে খারকিয়া প্রায় ১০০ কিমি দূরে। সময় লেগে যায় প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। আমরা শেয়ার গাড়িতে এসে যখন পৌঁছলাম তখন বেলা তিনটে।এবার সভ্য জগতের যানবাহনের পথ শেষ। আমরা পায়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম আদিম প্রকৃতির নির্জন অন্তরালে। আজকের গন্তব্য ঢাকুরি। আজকাল পিণ্ডারি ট্রেকে ধাকুরি রাখাও যায়, বাদও দেওয়া যায়। কিন্তু আমাদের ইচ্ছে ছিল ঢাকুড়ি টপ থেকে হিমালয়কে চাক্ষুষ করা। তাই আমরা ধাকুড়ি দিয়ে শুরু করলাম আমাদের যাত্রা। সাড়ে তিনটে নাগাত যাত্রা শুরু হলো আমাদের। মোটামুটি পাঁচ কিমি রাস্তা। পাইন আর দেওদারের গহীন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে পায়ে হাঁটা পথ। সামনে নন্দন সিং তার পেছনে প্রতীক আর সব শেষে আমি। রোদ পড়ে এসেছে। পাহাড় জঙ্গলে ঝপ করে সন্ধে নামে। আমরা চলতে চলতেই সন্ধ্যে হয়ে এলো। পাখির কলতান, ঝিঝির ডাক আর নন্দনের ছোট্ট ফোনে কোনো এক পাহাড়ি গান ধীরে ধীরে চারিদিককে কেমন মোহময় মোহগ্রস্ত করে তুলল। আমরা হেঁটে চলেছি ঢাকুরী টপের দিকে। প্রায় সাড়ে ছয়টা নাগাত আমরা পাহাড়ের মাথায় ঢাকুড়ী PWD ট্রেকার্স হাট দেখতে পেলাম। আজকের রাত্রিবাস সেখানেই। রাত হয়ে এলো। আমরা রুটি আর সবজি খেয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। ঝিঁঝিঁর ডাকে সারাদিনের কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুম এসে গেলো জানি না।
সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো, বাইরে এসে দেখলাম অতি ধীর গুরুগম্ভীর হিমালয় তার উদার হৃদয় খুলে আমাদের অভ্যর্থনা করছে। চোখের সামনে গর্বিত বীরের মতো মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে নন্দাখোট। নন্দদেবীর একটি সম্প্রসারণ।
চলবে
Comments :0