মুষলধারে বৃষ্টির জেরে বিভিন্ন জায়গায় নেমেছে ধস। বড় আকারের ধস নামার কারণে বিপর্যস্ত উত্তর সিকিমে। ধসে তিন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। আরও ছয় জওয়ান নিখোঁজ। জানা গেছে, উত্তর সিকিমের ছাতেন এলাকায় রবিবার রাতে বড় আকারের ধস নামার ঘটনা ঘটে। ধসে একটি সেনাক্যাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধসে চাপা পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত তিনজনই জওয়ান। মৃতরা হলেন লানসনায়েক মুনীষ ঠাকুর, হাবিলদার লাখবিন্দর সিং, পোর্টার অভিষেক লাখাডা। এছাড়াও ধস নামার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রীতপাল সান্ধু, স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়ার্ডন লিডার আরতী সান্ধু, মেয়ে আমাইরা সান্ধু, সুবেদার ধর্মবীর, সেপাই সাইনুধীন পিকে, সেপাই সুনীলালসেপাহরি। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। ধসে চাপা পড়ার সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই সেনা আধিকারিক ও প্রশাসনের আশঙ্কা।
এদিকে বৃষ্টি বিরতি ঘটায় বিপর্যয়ের মুখে আটকে থাকা পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে ফিরিয়ে আনতে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই আবহাওয়া কিছুটা অনুকূল হতেই লাচেন ও লাচুংয়ে আটকে থাকা পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সিকিম সরকার। জানা গেছে, গত দুইদিন আটকে থাকার পরে এদিন সকাল থেকেই নিরাপদে পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যটন সংস্থা, গাড়ি চালক সংস্থা, পর্যটন দপ্তর, ইন্দো টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশ ফোর্স, বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন, ভারতীয় সেনা ও বনদপ্তরের যৌথ প্রচেষ্টায় ১৭০০ পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথম দফায় পর্যটকদের চুংথাং-ফিডাং রোড ধরে ডিজঙ্গু এলাকায় ১৮টি গাড়িতে করে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২৮৪টি গাড়ি, ১৬টি বাইকে চাপিয়ে মোট ১৬৭৮জন পর্যটককে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৭৩৭জন পুরুষ ও ৫৬১জন মহিলা পর্যটক রয়েছেন। ৩৮০জন শিশুকেও উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা পর্যটকদের ফিডাং‘র রাস্তা দিয়ে গ্যাঙটকের দিকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের স্বাগত জানিয়েছেন সিকিম পুলিশের ডিজিপি অক্ষয় সচদেবা, মঙ্গন জেলার জেলা শাসক অনন্ত জৈন, আইজি (আইনশৃঙ্খলা) তাসি ওয়াঙ্ঘ্যায়াল, ডিআইজি (গ্যাঙটক) প্রতাপ প্রধান, মঙ্গনের পুলিশ সুপার সোনম ডেটচু ভুটিয়া।
গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিতে উত্তর সিকিম জুড়ে একাধিক জায়গায় পাহাড়ের গা বেয়ে ভয়াবহ ধস নামে। এক নাগাড়ে বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উত্তর সিকিম। উত্তর সিকিমের বেশ কিছু এলাকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পানীয় জল সঙ্কট দেখা দেয়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় লাচেন ও লাচুং। এই বিপর্যয়ের মুখে আটকে পড়েন প্রায় দেড় সহস্রাধিক পর্যটক। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারনে উদ্ধার কার্য ব্যাহত হয়ে পড়ে। লাচেন ও লাচুং পর্যটনস্থলেই গত দুইদিন ধরে আটকে থাকার পরে সোমবার সকালে আবহাওয়া কিছুটা অনুকূল হতেই উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়। এদিকে অবিরাম বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর জলস্ফীতি ঘটেছে। আরো খরস্রোতা হয়ে উঠেছে তিস্তা।
মঙ্গনের জেলা শাসক অনন্ত জৈন জানান, ধস বিধ্বস্ত লাচেন লাচুং-এ আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারের পর গ্যাঙটকে ফেরানো কাজ শুরু হয়েছে। ধসে মৃত জওয়ানদের মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে।
Landslide North Sikkim
সিকিমে ধস, নিহত তিন সেনা, ১৭০০ পর্যটককে উদ্ধার

×
Comments :0