মুম্বাই, ২৯ মে— মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো এখন একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। এমনকি শিক্ষিত লোকেরাও এটা করছেন। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল সাধারণ মানুষের মগজে সুকৌশলে এটা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রের কথা বলি। তাহলে সব কিছুর মধ্যে ধর্মের পরিচয় দেওয়া হচ্ছে কেন? প্রধানমন্ত্রী নিজেও ধর্মের স্লোগান দিয়ে ভোট চাইছেন। মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন মূক-বধির হয়ে বসে রয়েছে। সোমবার এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছেন প্রখ্যাত অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ।
একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাসিরুদ্দিন শাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দিল্লিতে কুস্তিগিরদের সঙ্গে যে ঘটনা হয়েছে সেই নিয়ে কোনও সিনেমা হবে কি না? জবাবে অভিনেতা বলেন, হিন্দি সিনেমা শিল্প সব সময়ই মুখ বন্ধ করে রাখে। এখন ঘৃণার পরিবেশ সেই অবস্থাকে আরও শোচনীয় করেছে। যে মহিলা কুস্তিগিররা আমাদের জন্য মেডেল নিয়ে এলেন, কেউ কি তাঁদের জন্য ছবি বানাবেন, পালটা প্রশ্ন তোলেন প্রবীণ অভিনেতা। নিজেই জবাবে বলেন, কেউ বানাবেন না, কারণ তার যে প্রতিক্রিয়া হবে সেটা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন তাঁরা। চলচ্চিত্রকে মানুষের মধ্যে কোনও বার্তা পৌঁছানোর জন্য সবথেকে শক্তিশালী মাধ্যম বলা হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে নাসিরুদ্দিন বলেন, এখন সিনেমায় মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনটা অতি জনপ্রিয়। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি শঙ্কিত যে অর্থ তারা বিনিয়োগ করবেন, সেটার ক্ষতি হবে এবং তাঁরা ব্যক্তিগত হেনস্তার শিকার হবেন। এই প্রসঙ্গে তিনি শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ানের জেলে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, আমি মনে করি এটা অন্যদের জন্য একটা বার্তা দেওয়া হয়েছিল। যদি শাহরুখ খানের সঙ্গে আমরা এই জিনিস করতে পারি, তাহলে যে কারো সঙ্গে করতে পারি। এটাই ছিল বার্তা।
কেন্দ্রের মোদী সরকারের কড়া সমালোচক এবং স্পষ্ট বক্তা হিসাবে পরিচিত নাসিরুদ্দিন শাহ বারে বারে হিন্দুত্ববাদীদের কুৎসিত আক্রমণের মুখে পড়েছেন। তাঁর ধর্ম পরিচয় তুলেই আক্রমণ করা হয়েছে। অবাধ কথা বলতে তাঁর ভয় করে না, এমন প্রশ্নের জবাবে নাসিরুদ্দিন বলেছেন, নিজেকে নিয়ে তার কোনও চিন্তা নেই, কিন্তু দেশের জন্য খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। আমরা পিছনের দিকে চলেছি এবং সেটা খুবই ভয়ের কারণ। অভিনেতা মনে করিয়ে দিয়েছেন, কয়েক বছর আগে এমনই এক সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরে তাঁকে তীব্র ঘৃণার মুখে পড়তে হয়েছিল, অত্যন্ত আপত্তিকর কথা লেখা চিঠিপত্র পেয়েছিলাম এবং একজন আমাকে পাকিস্তান যাওয়ার টিকিট কেটেও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আশাকরি এবারও একইরকম ঘটনা ঘটবে।
নাসিরুদ্দিন শাহ বলেছেন, এটা খুবই দুশ্চিন্তার সময়। যে ধরনের কথাবার্তা চলছে, তা নির্ভেজাল প্রোপাগ্যান্ডা। তা নিয়ে খুব আনন্দ উপভোগ করা হচ্ছে। যে প্রমাণ করছে কেমন সময়ে আমরা চলছি। এখন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজে যা দেখানো হচ্ছে, তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বাস্তবে। সেটা আসলে ইসলামফোবিয়া। নানা কায়দায় মুসলিম বিরোধী চিন্তা আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক জীবনেও তার প্রতিফলন পড়ছে প্রতিনিয়ত। মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো এখন একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। এমনকি শিক্ষিত লোকেরাও এটা করছেন।
ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো, তাকে ভোটে ব্যবহার করা এবং নির্বাচন কমিশন তা নিয়ে পদক্ষেপ না করায় কঠোর মন্তব্য করেছেন নাসিরুদ্দিন শাহ। সম্প্রতি কর্নাটকের ভোটের প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বজরংবলীর জয় বলে ইভিএমের বোতাম টিপতে বলেছিলেন। সেদিকেই ইঙ্গিত করে নাসিরুদ্দিন প্রশ্ন তুলেছেন, আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলি, গণতন্ত্রের কথা বলি, তারপরে সব কিছুর মধ্যে ধর্মের পরিচয় দেওয়া হচ্ছে কেন? যাঁরা ধর্মের দোহাই দিয়ে ভোট পাচ্ছেন, তাঁদের সামনে নির্বাচন কমিশন তো শুধুমাত্র নীরব দর্শক। নাসিরুদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন কতটা মেরুদণ্ডহীন হলে দিনের পর দিন এভাবে চলতে পারে। নির্বাচন কমিশনের তো কোনও কথা বলার সাহসও নেই।
নাসিরুদ্দিন প্রশ্ন তুলেছেন, যদি কোনও মুসলিম নেতা ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইতেন, তা হলে তো দুনিয়া উথাল পাতাল হয়ে যেত। কোনও রাখঢাক না রেখেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নাসিরুদ্দিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই ধর্মের নামে ভোট চান, যদিও এরপরেও তিনি সাম্প্রতিক নির্বাচনে হেরে গেছেন। এত কিছু খারাপের মধ্যে শেষ পর্যন্ত আশাবাদী প্রবীণ অভিনেতা। বলেছেন, একদিন নিশ্চয়ই এই ঘৃণার পরিবেশ শেষ হবে। তাঁর কথায় দেখা যাক এই সব কত দীর্ঘস্থায়ী হয়।
Nasiruddin Shah
ঘৃণা ছড়ানো এখন ফ্যাশন হয়ে গেছে ,সাক্ষাৎকারে কড়া মন্তব্য নাসিরুদ্দিন শাহের
.jpeg)
×
Comments :0