২০১৬ তে বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন পেপ গুয়ার্দিওলা। তার আগে অবশ্য ২০১২তেই প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা ঘরে তুলে নিয়েছিল সিটি। তখন কোচ ছিলেন রবার্তো ম্যানচিনি। তবে এই ক্লাবের গৌরবময় ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল ২০০৮সালে। ক্লাবের আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে ' আবু ধাবি ইউনাইটেড গ্ৰুপ ' কিনে নেয় ক্লাবের একাংশ। তারপর তারা বেশ কিছু ফুটবলারদের নেয় তাদের দলে। প্রথমেই তারা রিয়াল মাদ্রিদ থেকে নিয়ে আসে রোবিনহোকে রেকর্ড অর্থ প্রায় ৩২.৫মিলিয়ন ইউরো দিয়ে। তারপর একে একে এডিন জেকো , সান্তা ত্রুজ , তেভেজদের সই করায় ক্লাব। সেবছর তারা প্রিমিয়ার লিগে পঞ্চম স্থানে শেষ করে যোগ্যতাঅর্জন করেছিল উয়েফা ইউরোপা লিগে। ২০১৬তে পেপ আসার পর একেবারে খোলনলচে বদলে যায় ক্লাবের। প্রথম মরশুমে কোনো ট্রফি না জিততে পারলেও ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত মোট ৭টি মরশুমে ৬টি লিগ খেতাব জিতেছিল ম্যান সিটি। গার্দিওলার অধীনে তর তর করেই এগিয়ে চলছিল ' দ্যা স্কাই ব্লুজ '( ক্লাবকে ভালোবেসে সমর্থকরা এই নামেই ডাকেন ) দের জাহাজ। ২০২২-২৩ মরশুমে তারা প্রিমিয়ার লিগ , এফএ কাপ এবং বহু প্রতীক্ষিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে সম্পূর্ণ করেছিল নিজেদের ' ট্রেবেল ' ( ত্রিমুকুট )। ম্যান সিটির সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ক্লাবগুলিকে নিয়ে ' আবু ধাবি ইউনাইটেড গ্ৰুপ ' এর প্রতিষ্ঠাতা মনসুর বিন জায়েদ গঠন করেছিলেন ' সিটি ফুটবল গ্ৰুপ '। যে গ্ৰুপের অন্যতম প্রধান সদস্য ভারতের আইএসএলের দল মুম্বই সিটি এফসি । ফুটবলের উন্নতির স্বার্থেই অর্থ ঢালছে দুবাইয়ের এই গ্ৰুপ। তবে এই মরশুমে হঠাৎই ছন্দপতন ঘটেছে বিশ্ব ফুটবলকে নাড়িয়ে দেওয়া ম্যানচেস্টার সিটি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই মরশুমে ২৩ম্যাচে ৪৪টি গোল হজম করেছে তারা। রক্ষণভাগের তথৈবচ অবস্থা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হাইভোল্টেজ ম্যাচে দুই পর্ব মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৬গোল হজম করেছে পেপের দল। এম্ব্যাপে হ্যাটট্রিক করেন। রুবেন আমোরিমের দল ( বর্তমানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ ) স্পোটিং সিপির কাছে ৪গোল হজম করেছিল সিটি। ৫বছরে সিটিকে ১৯টি ট্রফি দেওয়া গার্দিওলাকে নিয়ে তাই ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ময়নাতদন্ত। ময়নাতদন্তে উঠে আসছে যে বিষয়গুলি - হাল্যান্ডের খেলা ধরে ফেলেছেন বিপক্ষ দলের কোচেরা। নিজের বড় চেহারাকে কাজে লাগিয়ে গত মরশুমে যে পারফরম্যান্স করেছিলেন হাল্যান্ড। তা আর এই মরশুমে করতে পারছেননা তিনি। বড় চেহারার যে কোনো ডিফেন্ডরারের কাছেই আটকে যাচ্ছেন তিনি। তার খেলায় রয়েছে যথেষ্টই সীমাবদ্ধতা। এছাড়াও মাঝমাঠে তাদের ভুগিয়েছে রড্রির অভাব। সেপ্টেম্বর ২০২৪এ চোটের পর থেকেই গোটা মরশুম ছিটকে গেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে সঙ্গে এডারসন , জন স্টোনস , ম্যানুয়েল একান্জি । চোটের তালিকা আরো দীর্ঘায়িত হয়েছে ম্যান সিটির। কয়েক বছর ধরে পেপ গার্দিওলার খেলার ধরন ধরে ফেলেছেন বিপক্ষ দলগুলি। মাত্রারিক্ত পাসে তার খেলা দেখতে ভালো লাগলেও কার্যকরী হচ্ছেনা বর্তমানে। আসন্ন মরশুমে তাদের মাঝমাঠের প্রাণশক্তি কেভিন ডি ব্রুইন ক্লাব ছাড়তে চলেছেন। ফলে সেই জায়গায় একজন সৃজনশীল মিডফল্ডারকে দলে নিতে চাইছে দল। এছাড়াও ডোকু , গ্রেলিশ , ফিল ফোডেনরা মূলত একই পজিশনের প্লেয়ার। ফলে দলের স্কোয়াডে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে দল। তবে আগামী মরশুমে ম্যান সিটির প্রত্যাবর্তনটা সত্যিই খুব দরকার ফুটবলের স্বার্থে।
Pep Guardiola's Downfall
গার্দিওলার সিটি যেন অতীতের ছায়া

×
Comments :0