Editorial

কলেজেও শাসক ধর্ষকের ঠেক

সম্পাদকীয় বিভাগ

বাংলা আর সভ্য মানুষের বসবাসের জন্য নয়, অসভ্য বর্বরদের জন্য জঙ্গলের রাজত্বে পরিণত হ‍‌য়েছে। শাসক কুলাঙ্গারদের জান্তব লালসা এতটাই পাশবিকতায় নিমজ্জিত যে নারীদের ভোগ্যপণ্য ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না। আর সেই ভোগের লালসা পূরণের জন্য স্থান-কাল-পাত্রের ধারধারে না। রাস্তা-ঘাট, ট্রেন-বাস-ট্যাক্সি-অটো, পার্ক-মাঠ ইত্যাদি যেখানেই হোক কোনও নারীকে কবজায় পেলে হামলে পড়ে এই রাজনৈতিক পিশাচরা। ইদানীং এই ধর্ষক পিশাচরা সরকারি হাসপাতাল, কলেজ, বিশ্ববিদালয়গুলিকেও ধর্ষণ-যৌন নির্যাতনের নিরাপদ আস্তানা বানিয়ে ফেলেছে। এরপর সরকারি দপ্তর এমনকি নবান্নেও এরকম ঘটনা ঘটে গেলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। গত দেড় দশকে বাংলার সমাজে এমন পরিবর্তনই আজকের নির্মম বাস্তবতা। এটা সম্ভব হয়েছে রাজ্যে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর থাকার সুবাদে।

বাংলার মানুষ কখনো কোনোদিন কল্পনা করতে পেরেছিলেন তাদের কন্যা কলেজে পড়তে গিয়ে কলেজের মধ্যেই শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের অনুগামীদের দ্বারা ধর্ষিতা হবেন, কেউ কি ভাবতে পেরেছিলেন সরকারি মেডিক্যা ল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে কর্মরত অবস্থায় ধর্ষণ করে খুন করা যায়। মমতা ব্যানার্জির অনুপ্রেরণায় রাজ্যে ধর্ষক, গুন্ডা, দুষ্কৃতীদের যে ইকোসিস্টেম তৈরি হয়েছে সেখানে এখন আর কোনও কিছুই অস্বাভাবিক নয়। এটাই স্বাভাবিক। কোনও ক্রিমিনাল শাসক নেতা ইচ্ছে যে কোনও নারীকে ধর্ষণ করতেই পারেন। তা সে নারী ডাক্তার হোন বা ছাত্রী, নেতার লালসাটাই শেষ কথা। তারা জানেন মাথার উপর অনুপ্রেরণা সত্য, তার উপরে কেউ নেই। পুলিশ, প্রশাসন নারীদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত নয়, ধর্ষক-দুষ্কৃতীদের সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত। অতএব বুক ফুলিয়ে ধর্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়তে তাদের বাধা নেই।

দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজ। কলেজের কার্যকাল শেষ হবার পরও এক ছাত্রীকে নানা অছিলায় আটকে রাখা হয় ইউনিয়ন রুমে। দুই ছাত্র সহযোগীর সহায়তায় প্রাক্তন পড়ুয়া তৃণমূল নেতা মনোজ মিশ্র ছাত্রীর উপর যৌন নির্যাতন চালাতে চালাতে রাতের দিকে নিরাপত্তারক্ষীর ঘরে ধর্ষণ করে। ভাবা যায় একটা সরকারি কলেজের ছাত্রী তার নিজের কলেজেই ধর্ষিতা হলেন। কে ধর্ষণ করল? একজন তৃণমূল নেতা। ঐ কলেজেরই কার্যত দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত নেতা মন্ত্রীদের সঙ্গে যার ওঠা বসা। এরা জানে নেতাদের হাত যখন মাথায় তখন ধর্ষণ সহ যে কোনও অপরাধ করার লাইসেন্স আছে। এটাও তারা জানে যত নৃশংস, যত ভয়ঙ্কর অপরাধই তারা করুক নেতাদের প্রসাদগুণে পুলিশ তাদের আড়াল করার, বাঁচিয়ে দেবার ঠিক ব্যবস্থা করে দেবে।

রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ সেই ২০১৭ সাল থেকে। নির্বাচিত সংসদ নেই। বদলে তৃণমূলী ছাত্ররা কলেজের ঠিকাদারি নিয়েছে। কলেজে অন্য কোনও ছাত্র সংগঠনের প্রবেশাধিকার নেই। তাদের মরজিতেই চলে কলেজ। অসহায় অধ্যক্ষ, উপাচার্য, শিক্ষকরা। বহিরাগত গুন্ডারা কলেজে কলেজে তাদের ঠেক বানিয়েছে। রাত পর্যন্ত সেখানে চলে অবৈধ সব কাজ। মদ-জুয়ার কিছুই বাদ যায় না। ভর্তি থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা এদের অন্যতম কাজ। কথা না শুনলেই ভয়ঙ্কর বিপদ। দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজের ছাত্রীটি যেমন দাপুটে নেতা মনোজ মিশ্রকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি বলে তাকে ধর্ষণ করে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা কত দূর যেতে পারে।

Comments :0

Login to leave a comment