General Strike

ধর্মঘটকে ঐতিহাসিক করে তুলতে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক প্রচার

রাজ্য জেলা

আগামী ৯ জুলাই ধর্মঘটের সমর্থনে ছাত্র, যুব, মহিলা, শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী সহ সমাজের সব অংশ শামিল হয়েছে দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাকে। গোটা দেশজুড়ে চলছে প্রচার। শনিবার ধর্মঘটের সমর্থনে রাজ্যজুড়ে হয়েছে মিছিল, পথসভা, লিফলেট বিলি, দেওয়াল লিখন, পোষ্টার, গ্রামসভা। ধর্মঘটের সমর্থনে এদিন মিছিল পথসভা হল ধূপগুড়িতে। এদিন সাপ্তাহিক বড় হাট বসে ধূপগুড়িতে। সকাল সাতটায় পার্টি অফিসের সামনে থেকে  মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন পথ ঘুরে কৃষি নিয়ন্ত্রিত বাজারে প্রবেশ করে। সভা করে ধর্মঘটের দাবি ব্যাখ্যা করে  বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ। 
ধর্মঘটের সমর্থনে এদিন শনিবার শিলিগুড়ির জলপাইমোড়ে প্রচার সভা করে সিআইটিইউ দার্জিলিং জেলা কমিটি। জলপাইমোড়ের সমস্ত দোকান-বাজার ও পথচলতি মানুষের কাছে ধর্মঘটের সমর্থনে তৈরি লিফলেট বিলি করা হয়। পরে ওই এলাকায় ধর্মঘটের সমর্থনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মঘটের সমর্থনে নক্সালবাড়ি পানিঘাটা মোড়ে ১২ জুলাই কমিটির ডাকে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। 
দক্ষিণ দিনাজপুর জুড়ে চলছে দেওয়াল লিখন, পোষ্টার, গ্রামসভা, মিছিল, পথসভা ইত্যাদি। এদিন বালুরঘাট তহবাজার, সাহেব কাছাড়ি মার্কেট সহ বালুরঘাট শহরের বিভিন্ন বাজারগুলিতে সিআইটিইউ, ইউটিইউসি, ১২ই জুলাই কমিটি সহ অন্যান্য সংগঠনের কর্মীরা দোকানদার, বাজারে আসা নাগরিকদের মধ্যে লিফলেট বিলি করেন। ধর্মঘটকে সাফল্য মন্ডিত করতে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে পথসভার মধ্যদিয়ে  আবেদন রাখেন। 
ধর্মঘট করেই অর্জিত অধিকার রক্ষার লড়াইকে শান দিতে চাইছে চা বাগানের শ্রমিকেরা। শনিবার চোপড়ার চা বাগানের গেটের সামনে ৯ জুলাই ধর্ঘটের সমর্থনে চা বাগিচা শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক কার্তিক শীল বলেন, ঢেড় হয়ে আর নয় দাদাগিরি, ছোট চা বাগান বেদখল করে টুকরো টুকরো করে বিক্রি রুখবেন শ্রমিকেরাই। 
রুটি রুজির দাবিতে বুধবার সারা ভারত সাধারণ ধর্মঘটের সামিল হতে চলেছেন ইট ভাটা, টালি ভাটা, পরিবহন শ্রমিক এমনকি টোটো চালকরাও। শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী শ্রম কোড বাতিল, নিত্য প্রয়োজনীয়  জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি, তীব্র বেকারত্বের বিরুদ্ধে এবং ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল হলো কালিয়াগঞ্জ শহরে। সুকান্ত মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। বিবেকানন্দ মোড় কালিবাড়ি থানা রোড হয়ে ফের সুকান্ত মোড়ে এসে মিছিল শেষ হয়। 
নিজেদের রুটি রুজির রোজগার বন্ধ করেই রাস্তায় সামিল হবেন করণদিঘী এলাকার বিড়ি শ্রমিকেরা। আগাম জানান দিলেন বিকৌর হাটের সভায়। শনিবার ধর্মঘটের সমর্থনে বিকৌর হাটের সভায় বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কৃষক সভার জেলা সম্পাদক সুরজিত কর্মকার, বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা সুজিত দে সরকার।
ধর্মঘটের সমর্থনে শনিবার সকালে উত্তরপাড়া - কোতরঙ পৌরসভার সাফাই বিভাগের শ্রমিকদের সভা হয়। সভায় শ্রম কোড বাতিল ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি, ৮ ঘন্টা কাজের সময়, বাসস্থান, স্বাস্থ্যের সুরক্ষার বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়নের সভাপতি শঙ্কর মুখার্জি ও সম্পাদক দিলীপ ধর। তাঁরা  ওই দিন ধর্মঘটে সক্রিয়ভাবে যোগদান ও ধর্মঘট সফল করার আহবান জানান। সভায় শ্রমিক কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। 
ধর্মঘটের সমর্থনে ১২ ই জুলাই কমিটি পুরুলিয়া জেলা শাখার আহ্বানে শনিবার সন্ধ্যায় এমএসএ ময়দানের কাছে, ভাটবাঁধ এর সামনে পথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তাগণ কেন্দ্রীয় সরকারের জন বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এবং এই রাজ্যের রাজ্য সরকারের দুর্নীতি ও থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে আসন্ন ধর্মঘটকে সাফল্য মন্ডিত করার আহ্বান জানান।
৯ জুলাই সাধারণ ধর্মঘটের প্রাচার গ্রামগঞ্জেও সাড়া ফেলছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শনিবার ৯টি গঞ্জে  প্রচার মিছিল সহ প্রচার সভা হয়। ১৮টি গ্রামীণ হাটে হয় প্রচার সভা সহ প্রচার পত্র বিলি। জবকার্ড রক্ষা ও কাজের অধিকার ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ের বার্তায় গ্রামগঞ্জের মানুষ প্রতিবাদ জানাতে এই ধর্মঘটকে সর্বাত্মক করার হাতিয়ার হিসাবে প্রচারে সামিল হয়েছেন। প্রতিটি কর্মসূচিতে মহিলাদের অংশ গ্রহণও নজর কাড়ছে। ধর্মঘটের  প্রচার মিছিলে মিছিলে শ্রমজীবী মানুষের সাথে মহিলা সহ ক্ষেতমজুর, প্রান্তিক কৃষকদের নজর কাড়া অংশগ্রহন দেখা যায়।

ধর্মঘটের সমর্থনে শনিবার উওরপাড়া কোতরঙ পুরসভার সাফাইকর্মীদের সভা। 
প্রচারে উঠে আসে অভয়া - তামান্না - কসবা সহ রাজ্য জুড়ে নারী নির্যাতন , দলবদ্ধ ধর্ষণ সহ খুনের ঘটনায় জড়িত দের শাস্তির দাবি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের আষাঢ়ীতে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দীপ্ত শ্লোগানে প্রচার মিছিল সহ পথ সভা হয়। প্রচার মিছিল হয় দাঁতন শহর, ডেবরা বাজার, বালিচক,  গোপালী, মোহনপুর, ধনেশ্বরপুর, গোলগ্রাম, লোয়াদা গঞ্জ গুলিতে। জেলার ব্লক গুলির বিভিন্ন স্থানের ১৮ টি হাটে সকাল থেকেই চলে ধর্মঘটের দাবি তুলে ধরে প্রচার ও লিফলেট বিলি।
শ্রমিক বিরোধী,কৃষক বিরোধী ও জনবিরোধী কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমজীবি মানুষের ঐক্য গড়ে তুলে ৯জুলাই দেশব্যাপী সাধারন ধর্মঘটকে সফল করতে বুথে বুথে প্রচার আন্দোলন করতে হবে। শনিবার মল্লারপুরে শ্রমজীবিদের একটি গন-কনভেনশনে এই আহ্বান জানান, বীরভূম জেলার সিআইটিইউ নেতা বলরাম চ্যাটার্জি।
সিআইটিইউ, সারা ভারত কৃষকসভা ও খেতমজুর ইউনিয়ন ময়ূরেশ্বর-১ ব্লক কমিটির উদ্যোগে এদিন মল্লারপুরে একটি গন-কনভেনশন হয়। সেখানে দাবি প্রস্তাব উত্থাপন করেন, তমালচন্দ্র দে। দাবিগুলি হলো শ্রমিক বিরোধী শ্রমকোড বাতিল করা, বেসরকারিকরণ বন্ধ করা, একশোদিনের কাজ চালু করা, রেগাপ্রকল্প এর কাজ দুশোদিন করা, ৬০০ টাকা মজুরি, স্মার্ট মিটার বন্ধ করা প্রভৃতি দাবি সহ  আরএসএস ও বিজেপি ও তৃণমূলের ধর্ম নিয়ে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে জনগনের ঐক্য গড়ে তোলা।   
শ্রমকোড চালু করে শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে মোদী সরকার। শ্রমিক স্বার্থবিরোধী এই কালা আইন চালু করার বিরুদ্ধে আগামী ৯ জুলাই দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই ধর্মঘটকে সফল সর্বাত্মক করার মধ্য দিয়ে দানবীয় কালা আইন রুখতে হবে। একথা বলেন সি আই টি ইউ রাজ্য কমিটির সভাপতি অনাদি সাহু। আগামী ৯ জুলাই দেশব্যাপী ধর্মঘটের সমর্থনে শ্যামনগর গৌরী শঙ্কর জুট মিলের গেটের সামনে চটকল শ্রমিকদের এক সভায় তিনি বলেন, চটকলগুলোতে ভয়াবহ সঙ্কট চলছে। ত্রিপাক্ষিক চুক্তি এখনও অনেক মিলে মালিক কার্যকর করছে না। মিলগুলোতে ঠিকা শ্রমিক বাড়ছে। স্থায়ী শ্রমিক কমছে। কেন্দ্রের মোদী সরকার কালা আইন চালু করে শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। শ্রমকোড চালু হলে দীর্ঘদিনের লড়াই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত অধিকার সুরক্ষিত থাকবে না। এই সরকার শ্রমিক বিরোধী নীতি নিয়ে চলছে। দেশের সমস্ত অংশের শ্রমজীবী মানুষ এই সরকারের আমলে আক্রান্ত। এই রাজ্যে তৃণমূলের সরকার একই পথে শ্রমিক বিরোধী নীতি নিয়ে চলছে। এই দুই সরকারের মধ্যে নীতিগত কোনো পার্থক্য নেই। শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ভাঙতে চাইছে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার। এই ধর্মঘটকে ঐতিহাসিক ধর্মঘটে পরিণত করতে সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সিআইটিইউ উওর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক গার্গী চ্যাটার্জী বলেন, ধর্মঘট করেই ধর্মঘটের অধিকার রক্ষা করতে হবে। তৃণমূল ও বিজেপি দুই সরকার শ্রমিক স্বার্থবিরোধী নীতি নিয়ে চলছে। এরা মালিকের দালালী করছে। এর বিরুদ্ধে আগামী ৯ জুলাই ধর্মঘটকে সফল করতে প্রচার আন্দোলন তীব্রতর করতে হবে। দেশব্যাপী ধর্মঘটের সমর্থনে নৈহাটিতে পাওয়ার হাউস মোড় ও গরুর ফাড়ি মোড়ে দুটি পৃথক সভা শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। শ্যামনগর এক্সাইড ব্যাটারি গেটের সামনে, ওয়েভারলী জুট মিলের শ্রমিক মহল্লায়,আতপুর বাজার ও শ্যামনগর বাজারে ধর্মঘটের সমর্থনে ভ্রাম্যমাণ প্রচার সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দেশব্যাপি ৯ জুলাই ধর্মঘটের সমর্থনে লিফলেট নিয়ে আরও বেশি করে শ্রমজীবী মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্মঘটের বিষয়টা তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। শনিবার দত্তপুকুরের এক আলোচনা সভায় একথা বলেন, সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আরএসএস -বিজেপি ধর্মকে রাস্তায় নামিয়েছে। ধর্মকে সামনে রেখে মানুষের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি করছে। পাশাপাশি এই রাজ্যের শাসকদলও বিভাজনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে মানুষের ঐক্যকে ভাঙতে চাইছে। বিভাজনের বিরুদ্ধে সমস্ত গরিব খেটেখাওয়া শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এদিন আলোচনা সভায় বাংলার কৃষক সমাজের ইতিহাস তুলে ধরেন সিপিআই(এম) নেতা মানবেশ চৌধুরী। 

Comments :0

Login to leave a comment