Servitude

প্রভুর চরণে নিবেদন

সম্পাদকীয় বিভাগ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অম্ল মধুর সাঁড়াশি চাপের মুখে কিংকর্তব্যবিমূ‌জ্ঢ় অবস্থা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। যাকে প্রাণের বন্ধু ভেবে এত ভরসা করেছিলেন এবং তোঁয়াজ করেছিলেন সেই ট্রাম্পই কিনা তাঁকে এখন পদে পদে বিব্রত করে চলেছেন। পরিস্থিতি এমন যে মোদী না পারছেন গিলতে না পারছেন উগরাতে। বিশ্বগুরুর এখন রীতিমতো মৌনিবাবা হবার অবস্থা। দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকেই মোদীর পক্ষে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। বিশ্বের প্রায় সব দেশের বিরুদ্ধে তিনি যে শুল্ক যুদ্ধ শুরু করেছেন তার কেন্দ্রবিন্দুতে চীন থাকলেও রেয়াত করেননি ভারতকেও। ভারতকে শুল্ক সম্রাট বলে বিদ্রূপও করেছেন। সরাসরি অভিযোগ করেছেন উচ্চ আমদানি শুল্কের জেরে ভারতে মার্কিন পণ্য ঢুকতেই পারে না। হুমকি দিয়েছেন যদি ভারত মার্কিন পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক না কমায় তাহলে পালটা ভারতের পণ্যের উপর আমেরিকা সমহারে শুল্ক চাপাবে।
গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশ থেকে আমেরিকার বাজারে ঢোকা পণ্যের উপর উচ্চ হারে আমেরিকা যে শুল্ক ঘোষণা করেছিল তাতে ছিল ভারতও। ভারত থেকে আমেরিকায় রপ্তানি হওয়া যাবতীয় পণ্যের উপর গড়পড়তা ২৬ শতাংশ হারে শুল্ক চাপানো হয়। দু’দিন পর অবশ্য সেই বর্ধিত শুল্ক ৯০ দিন স্থগিত রেখে সব দেশকে আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করতে বলা হয়। বাকি সব দেশের পণ্যের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ থেকে ৬০-৭০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা হলেও চীনের পণ্যের ক্ষেত্রে সেটা ১৪৫ শতাংশ। ট্রাম্পের একতরফা শুল্ক হামলার বিরুদ্ধে প্রায় সব দেশ নীরব থেকে আলোচনার জন্য লাইন দিলেও একমাত্র চীন মার্কিন পণ্যের উপর পালটা ১২৫ শতাংশ শুল্ক চাপায়। এমন কি রেয়ার আর্থ মেটেরিয়াল রপ্তানিতে কড়া নিয়ন্ত্রণ চালু করে। আর ভারত পালটা পদক্ষেপ তো দূরের কথা ট্রাম্পের হুমকির ভয়ে বেশ কিছু মার্কিন পণ্য থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়। তারপর তৎপর হয়ে ওঠে ট্রাম্পের কথা মতো বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায়। ইতিমধ্যে দু’দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে দু’দফা আলোচনা হয়ে গেছে। তৃতীয় দফা আলোচনা হয়েছে মার্কিন মুলুকে। লক্ষ্য ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের মেয়াদ ৯ জুলাই শেষ হবার আগেই একটা চুক্তি করে ফেলা।
কিন্তু সমস্যা হলো আমেরিকার দাবি ও শর্ত মেনে চুক্তি করলে তা ভারতের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে আমেরিকা চায় মার্কিন  কৃষি পণ্যের জন্য ভারত বাজার খুলে দিক। মোদীরা সেটা মানলে ভারতের কৃষকের সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী। তেমনি মার্কিন গাড়ির শুল্ক কমালে ভারতে তৈরি গাড়ি বিক্রি মার খাবে। অর্থাৎ আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি যাই হোক লাভবান হবে আমেরিকা। ট্রাম্পের লক্ষ্যও সেটা। নানাভাবে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে দু’দেশের বাণিজ্যে মার্কিন ঘাটতি কমিয়ে ফেলা। এতদিন ভারত যে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ভোগ করত সেটা ছেঁটে ফেলা।
একাজ হাসিল করার জন্য পাক-ভারত যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প অতি সক্রিয় হয়ে দাবি করেন। দু’দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করার হুমকি দিয়ে তিনি ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধ বন্ধে রাজি করিয়েছেন। তেমনি চাপ বাড়ানো হয়েছে ভারত যাতে আমেরিকার থেকে বেশি বেশি অস্ত্র কেনে এবং অশোধিত তেল আমেরিকা থেকে বেশি আমদানি করে। মোদীরা মুখে কিছু না বললেও নতিস্বীকার শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে তেল আমদানি প্রায় দেড়গুণ বেড়ে গেছে। সন্দেহ নেই আমেরিকার সঙ্গী হতে গিয়ে ভারতের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েই আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হবে।

Comments :0

Login to leave a comment