প্রবন্ধ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
লুই পাস্তুরের জীবনে যোসেফ
তপন কুমার বৈরাগ্য
লুই পাস্তুরের নাম সকলেই শুনেছো।যিনি জলাতঙ্ক রোগের
টিকা আবিষ্কার করেন।তিনি ফ্রান্সের দেল গ্রামে ১৭ই ডিসেম্বর
১৮২২খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।পিতার নাম জোসেফ এবং মায়ের নাম রকি।
বাবা মা আদর করে তার নাম রাখলেন লুই।১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে
তিনি জলাতঙ্ক রোগের টিকা আবিষ্কার করেন।পাগলা কুকুর,নেকড়ে এবং শেয়ালের লালায় জলাতঙ্ক রোগের
জীবাণু থাকে। লুই পাস্তুরের সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে
যার বেশি অবদান সে হলো দশ বছর বয়েসের একটা ছোট্ট
ছেলে।নাম তার যোসেফ। যোসেফ চঞ্চল প্রকৃতির বালক
ছিল।একদিন সে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিল।পথে একটা
পাগলা কুকুর দেখল।দেখামাত্রই সে তার দিকে একটা পাথর
ছুড়ল।কুকুরটা ক্ষিপ্ত হয়ে তার পায়ে এসে কামড় দিলো এবং
অনেকটা মাংস তুলে নিলো। দিনের পর দিন যোসেফের
অসুস্থতা বেড়ে গেল। মা বাবা কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
তবে কি তাদের ছেলে অকালে মারা যাবে!
তারা কি করবেন কিছুই ভেবে পেলেন না।একজন প্রতিবেশির
মুখ থেকে শুনলেন সবেমাত্র লুই পাস্তুর জলাতঙ্কের টিকা
আবিষ্কার করেছেন ;কিন্তু কারো উপর এখনো তিনি প্রয়োগ
করতে পারেন নি।তাই আবিষ্কারের এখনো সঠিক মূল্যায়ণ
হয়নি। মা বাবা যোসেফকে নিয়ে প্যারিসে এলেন।লুই পাস্তুরের
সাথে দেখা করলেন।ছেলে তখন নেতিয়ে পড়েছে।
মা বাবা কাকুতি মিনতি করে বললেন--যেভাবেই হোক
আমাদের ছেলেকে বাঁচান। পাস্তুর বললেন--ছেলে বাঁচবে
কি না জানিনা।তবে ওর একবার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বলে
মনে করি।পাস্তুরের কথা শুনে বাবা মা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়লেন।
পাস্তুর যোসেফকে বলল--এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে তোমার
বাবা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে,তুমি কি তাতে রাজি?
যোসেফ বলল--আমি মরতে ভীত নয় স্যার।আমার দৃঢ় বিশ্বাস
এই কাজে আপনি সাফল্য লাভ করবেনই। লুই পাস্তুর যোসেফের
উপর জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলেন এবং অধীর আগ্রহে
প্রতিক্ষা করে থাকলেন। কয়েকদিন পর যোসেফ আস্তে আস্তে
সুস্থ হয়ে উঠল।পাস্তুরের মন আনন্দে নেচে উঠল।আবিষ্কারের
বেশ কিছুদিন পর তার এই সাফল্য।তিনি বাবা মায়ের কোলে যোসেফকে ফিরিয়ে দিলেন।পৃথিবীর মানুষ জলাতঙ্কের হাত থেকে রক্ষা পেলেন।এই যুগান্তকারী আবিষ্কার লুই পাস্তুরকে চির অমর
করে রাখল।এই অবদানের পিছনে সবার আগে থাকল যোসেফের
নিঃস্বার্থ অবদান। লুই পাস্তুরের শেষ জীবন কেটেছিল বড় একাকীত্বের মধ্যে।১৮৯৫খ্রিস্টাব্দের ২৭শে সেপ্টেম্বর তিনি
পৃথিবীর মায়া ছেড়ে স্বর্গে যাত্রা করেন।
Comments :0