গল্প / মুক্তধারা , বর্ষ ৩
জামাই ষষ্ঠী
মৃদুল পাল
নীলকমলের প্রথম জামাই ষষ্ঠী।শ্বশুরবাড়ি থেকে দুই জামাই,নীলকমল এবং বড় জামাই সুপাত্র দুজনকেই নেমতন্ন করা হয়েছে।সুপাত্র সরকারী চাকুরীজীবী। নেমতন্ন রক্ষা করতে তার বিশেষ কষ্ট হয়নি।সে অনায়াসে ছুটি পেয়ে গেছে।সমস্যা বেধেঁছে নীলকমলের ক্ষেত্রে।সে উড়িষ্যায় একটি ব্যক্তিগত খন্ডের ম্যানেজার পদে কর্মরত।মার্কেটিং ম্যানেজার।এই কোম্পানী বাঁশ-বেতের সামগ্রী তৈরী করে।সে জামাই ষষ্ঠীর জন্য ছুটির আবেদন করেছে সপ্তাহ দশেক আগে।কিন্ত টপ ম্যানেজমেন্ট ছুটি মঞ্জুর করতে অপারগ।বিয়ের সময় ছুটি দেওয়া হয়েছে,মধুচন্দ্রিমার জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে।এখন আবার এইসব বাংগালী রিচুয়েলের জন্য অবাংগালী কোম্পানির মালিক কেন ছুটি দেবে?
নবারুণ প্রফুল্ল প্রাতঃকালে ভক্তিরসে গদগদ হয়ে নীলকমলের শাশুড়ি মা জামাই-ষষ্ঠীর মাংগলিক পর্বের জন্য বাঁশ গাছের করুল তুলতে বাঁশ বাগানে যান।ঘাস পরিবারের বৃহত্তম সদস্য বাঁশগাছ বিনীতভাবে মাটির দিকে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে।নীলকমলের শাশুড়ি করুল তুলতে থাকে।ষাঠটি করুলের মুঠো ষষ্ঠীপূজোর শান্তির জলের ঘটে চুবিয়ে জামাইর মাথায় ঠেকিয়ে শাশুড়ি মা 'ষাঠ ষাঠ' বলবে- এটাই নিয়মাচার।থালাভর্তি খাদ্যসম্ভার,বড় বড় মাছের মাথা,পাঠার ব্যঞ্জন,ধপধপে সাদা পরমান্নর বাটি- এসব পেটপুজোর বাহানা মাত্র।করুল তুলতে তুলতে নীলকমলের শাশুড়ি মা বাগানে বাঁশফুল দেখতে পায়।একটা অজানা আতংকে উনার মন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল।তার ললাটে শংকার আলো ঝলসায়।
বাঁশফুলের কথা নীলকমলের কর্ণগোচর হবার মাত্রে সে কোম্পানির উচ্চপদস্থ বিষয়া আকাশ মহাপাত্রকে ফোন করেন।দূরভাষ মাধ্যমে সেই বাঁশফুলের চিত্র কোম্পানির মালিককে পাঠানো হয়।নীলকমলের কোম্পানি অনেক বছর ধরে এই ফুলের সন্ধানে ছিলো।লেটিন আমেরিকার মিগা সম্প্রদায়ের লোকেরা বাড়িতে গৃহসজ্জার জন্য এই বাঁশফুলকে শুভ মনে করেন।এমন একটা ফুলের জন্য মিগা সম্প্রদায়ের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা অনেক মূল্য চুকাতে প্রস্তুত।কোম্পানি নীলকমলকেই দায়িত্ব দিলো এই ফুল তুলে আনার জন্য।ফুলের অজুহাতে নীলকমলের প্রথম জামাই-ষষ্ঠী গুলজার হয়ে গেল।
Comments :0