গল্প / মুক্তধারা , বর্ষ ৩
আগুন
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
পরম সবজি নিয়ে বসে স্টেশন বাজারে। সেই বারো বছর বয়েসে বাবার হাত ধরে ট্রেনে চেপে সবজি আনতো শিয়ালদা থেকে। তারপর দোকানে বসা। বিক্রি। তারপর দোকানে বসা।
এখন তো অনেয়কখানি বয়েস হয়েছে। প্রায় দু কুড়ি সাত বছর। বিয়ে করে নি পরম। মাকে নিয়েই তার সংসার। স্টেশনের ধার ধরে বেশ কিছুটা গিয়ে ওদের বস্তি। অনেক গুলোর। অনেক মানুষ থাকে। পরপর ঘরে। একটা পাড়া বললেই হয়। তার মধ্যেই বেড়ে ওঠা পরমের । অনেক কাল হয়ে গেল। মা, খুড়ি, জ্যাঠা, জ্যেটি নিয়ে পরমের ছোটবেলা থেকে বড়ো হওয়া। সবজি বেচে ক' টাকাই বা আয় হয়! তবু সুখের সংসার। ছোট ছেঁচা বেড়ারর ঘরেও বেঁচে থাকার সুখ পেত ওরা।
সে বুধবার পরম কলমী শাক, কুলপো শাক আর বেগুন কটা বিক্রি করে টাকা গুনছিল। তার মধ্যেই বাদল চিৎকার করতে করতে ছুটে এসে খবর দেয় তাদের বস্তিতে আগুন লেগেছে। সব ফেলে দৌড় লাগায় পরম। হাঁপাতে হাঁপাতে এসে দাঁড়ায় ঘরের সামনে। মা, খুড়িদের সামনেই জ্বলে যাচ্ছে ঘর, জিনিসপত্র, আগুন উঠেছে আকাশ ছাপিয়ে! পরম দৌড়ে যেতে চায় আগুন নেভাতে। হাত টেনে ধরে পাঁচু। কান্নায় ভেঙে পড়ে পরম মা কে জড়িয়ে।
আগুনের শিখা লক লক করে ছড়িয়ে পড়ে সারাটা বস্তি অঞ্চল। একের পর এক পুড়ে চলে পরমের মতো আরো অনেকের মন। কোথায় যাবে তারা, কি করবে ভাবতে ভাবতে সবাই জটলা করতে থাকে।
তার মধ্যেই পরম কান্না থামিয়ে উঠে দাঁড়ায়, মায়ের হাত খানা উঁচুতে তুলে চিৎকার করে ওঠে-' চলো সবাই, কান্না থামাও, চলো থানায় যাব, আরও অনেক দূর যাব, সবাই চলো, আমাদের বাড়ি চাই,আমরা বাঁচতে চাই'।
Comments :0