BLO

৮ বিএলও’কে শো-কজ কমিশনের, অভিযোগ জানাতে টোল-ফ্রি নম্বর

রাজ্য

শাসকদলের অফিস থেকে পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির ড্রয়িং রুম, সরকারি অনুদান পাওয়া ক্লাব থেকে এনুমারেশন ফরম বিলি করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ নির্বাচন কমিশন শেষমেশ কঠোর পদক্ষেপের রাস্তায় এগলো। 
গত চারদিন রাজ্যের একাধিক প্রান্তে মালদহ, মুর্শিদাবাদ থেকে দক্ষিণ ২৪পরগণার ডায়মন্ডহারবার, সর্বত্র সামনে এসেছে এনুমারেশন ফরম বিলিতে এমন ভূরি ভূরি অনিয়মের ছবি। এমনকি একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে বিএলও’কে নিষ্ক্রিয় রেখে, শাসকদলের বাহিনীই ফরম বিলি করছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই এবার ‘কঠোর’ অবস্থান নিল কমিশন। চায়ের দোকান এবং ক্লাব থেকে ফরম বিতরণের অভিযোগ উঠতেই বিএলও’দের কার্যকলাপের উপর কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিল কমিশন। অভিযোগ উঠেছে, বিএলও এবং বিএলএ’দের বাদ দিয়ে এনুমারেশন ফরম বিলি করছে শাসকদলের লোকজনই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই অভিযোগ দায়ের করেছে কমিশনে। এদিকে এদিনই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি টোল-ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এদিন থেকে ০৩৩-২২৩১০৮৫০ নম্বরে বিএলও সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থাকলে জানানো যাবে।
যে সমস্ত বিএলও’রা বাড়িতে বাড়িতে না গিয়ে যেখান-সেখান থেকে ফরম দিচ্ছেন, তাঁদের শো-কজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিএলও’দের শো-কজ করার জন্য ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও)’দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন বিকেলেই কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ফরম বিলির কাজে অনিয়মের জন্য এখনও পর্যন্ত ৮ জন বিএলও’কে শো-কজ করা হয়েছে । 
নির্বাচন কমিশন বিএলও’দের সতর্ক করে জানিয়েছে, সরকারি কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও কমিশনের নির্দেশ উপেক্ষা করে ফরম বিতরণ করা নিয়ম লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর, জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিকদের আগাম সতর্কতা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণের সময় বিএলও’দের দায়িত্ব এবং নিয়মকানুন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্পষ্ট বলা হয়েছিল, বুথ পর্যায়ের আধিকারিকদের কেবল ভোটারদের বাড়িতে গিয়েই ফরম বিতরণ করতে হবে। এই কাজ অন্য কোথাও করা যাবে না। এই ব্যাপারে জেলাশাসকদের আরও সতর্ক থাকার কথাও বলা হয়েছে। এর জন্য জেলা পর্যায়ে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে বিএলও’দের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রতি দশটি বুথের জন্য একজন বিএলও সুপারভাইজার থাকবেন।
এদিনও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক জায়গায় অনিয়মের নানান দৃশ্য দেখা গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ব্লকের ৩ নম্বর সত্যপুর অঞ্চলের হরিদ্রাপাঠ এলাকায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি শেখ লুৎফর আলমের বাড়িতে বসেই বিএলও’কে দেখা যায় এনুমারেশন ফরম বিলি করতে। আবার দাসপুরে বিএলও’র স্বামীকেই দেখা যায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে  ফরম বিলি করতে। তিনি আবার তৃণমূলের নেতাও বটে। দাসপুর ২ নম্বর ব্লকের ১৬৯ নম্বর কেলেগোদা গ্রামের পূর্ব বুথের বিএলও ঋতুপর্ণা মানিক হাজরা। তাঁর স্বামী তৃণমূল নেতা অসীম হাজরা তাঁর হয়ে এনুমারেশন ফরম বিলি করছেন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে  তৃণমূল নেতার এমন ফরম বিলির ভিডিও সমেত লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন গ্রামের মানুষ। 
বিজেপি নেতারা মিডিয়ায় সাবলীল থাকলেও বুথে উধাও। আর বিএলও’কে নজরবন্দি করে রেখে শাসক তৃণমূল রাজ্যের একাধিক জায়গায় নিজেরাই দলীয় অফিস বা সরকারি অনুদান পাওয়া ক্লাব থেকে ফরম বিলি করছে। সব মিলিয়ে শেষপর্যন্ত ভোটার তালিকা কতটা ত্রুটিমুক্ত হবে, তা নিয়েই বাড়ছে শঙ্কা। 
মালদহের চাঁচোলে যেমন পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে বসে এনুমারেশন ফরম বিলি করতে দেখা গেছে বিএলও’কে; তেমনি আবার মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো-সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ফলতায় বিএলও’র কাছ থেকে ফরম কেড়ে নিয়ে থানার সামনেই তৃণমূলী বাহিনীকে টেবিল-চেয়ার পেতে ফরম বিলি করতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএলও’কে নজরবন্দি রেখে মৃত ভোটারের নামেও ফরম দিতে বাধ্য করছে শাসকদল। মৃত ভোটারের নাম ২০২৫ তালিকায় থাকায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখেও পড়তে হচ্ছে বিএলও’কেও। পরিবারের মৃত সদস্যদের তথ্য চেপে রেখে ফিলআপ করা ফরম বেমালুম জমা দিয়ে দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় সেই মৃত ভোটারের নাম থেকে যাবে। সেক্ষেত্রে ‘সাত মন তেল পুড়িয়েও’ ভোটার তালিকা আদৌ নির্ভুল হবে না। 
এদিকে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেল চারটে পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ৪ কোটির বেশি এনুমারেশন ফরম বিলি হয়েছে। রাজ্যে মোট ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯ জন ভোটারকে ফরম দেওয়া হবে। ফলে আগামী সপ্তাহেই বণ্টনের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি ভোটারদের কাছ থেকে ফরম সংগ্রহের কাজও শুরু হয়ে যাবে বলে জানা যাচ্ছে কমিশন সূত্রে। 

Comments :0

Login to leave a comment