Editorial

স্বস্তি‍‌তে নেই দুই শাসক

সম্পাদকীয় বিভাগ

আগামী বছর রাজ্য বিধানসভার ভোট। দুর্নীতি-চুরি-লুটতরাজ থেকে হেন দুষ্কর্ম নেই যা মমতা ব্যানার্জির সরকারের আয়ত্বের বাইরে। চুরি-দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে থাকা এই সরকারের নতুন পরিচিতি হয়ে উঠেছে চোরেদের সরকার। আর শাসক দলও হয়ে উঠেছে পুরোপুরি একটা ক্রিমিনালদের দল। তৃণমূলে এমন কোনও নেতা বা কর্মী খুঁজে পাওয়া যাবে না চুরি-দুর্নীতি-অপরাধের সঙ্গে যার সম্পর্ক নেই। এহেন একটা দলকে ভোটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনা যে সহজ কাজ নয় সেটা মমতা ব্যানার্জির থেকে ভাল আর কেউ জানে না। তাই চতুর্থবারের জন্য ক্ষমতায় ফিরতে ক্রিমিনালদের দলটি যে কোনও ধরণের ভয়ঙ্কর অপরাধ করতে দ্বিধা করবে না। এটা এখন নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া যায় রাজ্যবাসীর মতামত যদি সত্যি সত্যি প্রতিফলিত হয় তাহলে কোনও অবস্থাতেই মমতা ব্যানার্জির ক্ষমতায় ফেরা সম্ভব নয়। আবার বিজেপি-র পক্ষেও বাংলায় ক্ষমতা দখল এখনও সুদূর পরাহত। এরাজ্যে মমতা ব্যানার্জির সৌজন্যে আরএসএস-র প্রভাব অনেকটা বাড়লেও সামগ্রিকভাবে বিজেপি-র আদর্শগত প্রভাব ও ভিত্তি সেই জায়গায় পৌঁছায়নি যে ক্ষমতা দখল করে ফেলবে। এরাজ্যে আজও যে খুঁটি বা ভিতের উপর বিজে‍‌পি দাঁ‍‌ড়িয়ে আছে সেটা আদতে তৃণমূলের কারখানাতেই তৈরি। তৃণমূলে পুষ্ট হয়ে তারা ডেপুটেশনে কাজ করছে বিজেপি-তে। কয়েক বছর বিজেপি-তে কাজ করার পর তাদের অনেকে তৃণমূলে ফিরে এসেছে। দু’দলের মধ্যে যাতায়াত এখন নিত্যদিনের ব্যাপার। এত দ্রুত এবং বেশি সংখ্যায় এই দলবদল চলছে যে, কে কখন কোন দল আলো করে আছেন মনে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মূলত ভোট এলেই দলবদলের হিড়িক ওঠে। ক্ষমতাকে পাখির চোখ করে ধান্দাবাজ নেতারা দল বদলে ফেলেন। হিসাব কষেণ কোন দলে থাকলে আখেরে সুবিধা অর্থাৎ কামানোর সুবিধা বেশি হবে। যদি দেখা যায় তৃণমূলের জেতার সম্ভাবনা বেশি তাহলে মৃণমূল ছাড়ার প্রবণতা কমবে। এমনকি বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসার লাইন পড়ে যাবে। তেমনি যদি মনে হয় বিজেপি-র সম্ভাবনা আছে তাহলে পড়ি কি মরি করে সব বিজেপি-তে ঢুকবে। আর ভোটের পর যদি দেখা যায় দু’দলের কেউই সরকার গড়ার জায়গায় নেই তখন যার দিকে পাল্লা ভারী সেদিকে ভিড়ে যাবে অন্য দল ছেড়ে। যদি তেমন কিছু না হয় তাহলে দেখা যাবে হয় বিজেপি-র সমর্থনে তৃণমূল অথবা তৃণমূলের সমর্থনে বিজেপি সরকার গড়ার চেষ্টা করবে। আসলে বিজেপি এবং তৃণমূল নিজেদের মধ্যে লোক দেখানো যত ঝগড়াই করুক দু’দলেরই অভিন্ন লক্ষ্য বামফ্রন্ট তথা বাম-কংগ্রেসকে যে কোনোভাবেই হোক ক্ষমতার অলিন্দ থেকে দূরে রাখা। সেই জন্যই গত এক দশক ধরে ধর্মীয় বিভাজনের আধারে বাইনারি রাজনীতিকে সামনে আনা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের সহায়তায়। সব রকমভাবেই চেষ্টা চলছে তৃতীয় বিকল্পের সম্ভাবনাকে আড়াল করা। বঙ্গ রাজনীতিতে এই ধারণাকে বদ্ধমূল করার চেষ্টা চলছে যে তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি আর বিজেপি-র বিকল্প তৃণমূল। তার জন্যই ধর্মীয় বিভাজনকে এবার সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ধর্মের ভিত্তিতে রাজ্যবাসীকে তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে ভাগাভাগি করার চেষ্টা চলছে। মিশ্র এলাকায় বা মুসলিম এলাকায় পরিকল্পনা করে ষড়যন্ত্র চলছে দাঙ্গার পরিবেশ তৈরির। মুর্শিদাবাদের ঘটনা থেকে শুরু করে মহেশতলা পর্যন্ত তারই নমুনা। অবশ্য তৃণমূল-বিজেপি-র এই সেটিং এখন রাজ্যবাসীর কাছে জলের মতো পরিষ্কার। ফলে বাইনারি রাজনীতি এবার ধোপে টিকবে না। তৃতীয় বিকল্প হিসেবে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঠেকানো অতটা সহজ হবে না।

Comments :0

Login to leave a comment