Editorial Modi

কার টাকায় দল চলে জানাবে না মোদীরা

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ


বিজেপি নেতাদের দাবি অনুযায়ী তাদের দল বিশ্বের বৃহত্তমই শুধু নয়, একই সঙ্গে ধনী দলও। বিশ্বের আর কোনও দেশের কোনও দলের এমন সদর দপ্তর নেই যা দিল্লিতে অবস্থিত বিজেপি’র সদর দপ্তরের তুলনা চলে। এই নিয়ে শাসক দলের গর্বের অন্ত নেই। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। কীভাবে তারা ধনী দল, কোথা থেকে আসে দলের তহবিলে অর্থের অনর্গল স্রোত, কে জোগায় এত বিপুল টাকা সেসব নিয়ে কোনও প্রশ্ন-আলোচনায় তারা রাজি নয়। টাকা যেখান থেকেই তারা জোগাড় করুক না কেন সেটা তারা গোপন রাখতে চায়। কোনও অবস্থাতেই আয়ের উৎস প্রকাশ করতে রাজি নয়। বস্তুত দলের তহবিলের জন্য সংগৃহীত টাকার উৎস যাতে কোনোভাবেই প্রকাশ না পায় তার জন্যই অনেক মাথা খাটিয়ে চালু করা হয়েছে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা। এর জন্য যে আইন তৈরি হয়েছে সেটাও অ‍‌নৈতিকভাবে। এমন একটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিলকে ফিনান্স বিল হিসাবে পাশ করিয়ে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। ফিনান্স বিল সংসদের উভয় কক্ষে পাস করানোর দরকার হয় না, লোকসভায় পাস করালেই চলে। তেমনি ফিনান্স বিল নিয়ে আলোচনার অবকাশও কার্যত থাকে না। আচমকাই কোনও আলোচনা ছাড়া লোকসভায় পাস করানো হয়েছিল। ফিনান্স বিল রূপে পাস করানো হয় রাজ্যসভায় পাস করানো যাবে না এই আশঙ্কায়।
এই নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়েই এমন মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে। আপত্তি বা বিরোধিতার দুটি প্রধান দিক হলো এর আদৌ কোনও সাংবিধানিক বৈধতা আছে কিনা এবং কোনও রাজনৈতিক দলের টাকার উৎস জানার অধিকার নাগরিকদের আছে কি না। মোদী সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে আদালতকে জানানো হয়েছে সংবিধান মেনেই আইন হয়েছে। এবং সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে জনগণের অধিকার। অর্থাৎ মোদী সরকার মনে করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে ভোট দেবার অধিকার নাগরিকদের আছে। কিন্তু রাজনৈতিক দল বিশেষ করে শাসক দল কোথা থেকে কি ধরনের টাকা এনে প্রচারের ঝড় তুলছে বা পরোক্ষে টাকার বিনিময়ে ভোট কিনতে সেটা জানার অধিকার নাগরিকদের নেই। অর্থাৎ ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা দেদার দলের তহবিলে ঢুকছে কিনা প্রশ্ন করা যাবে না। মোদীর সরকার মনে করে তথ্য জানার অধিকারের আওতা থেকে নির্বাচনী বন্ডকে বাইরে থাকবে। এমনটাও মনে করে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু বিষয় যেমন তথ্য জানার অধিকার আইনের বাইরে থাকে তেমনি বিজেপি’র টাকার উৎসও বাইরে রাখতে হবে।
দে‍‌শের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অঙ্গ রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব নাগরিকদের সমর্থনের উপর নির্ভরশীল। তাই রাজনৈতিক দলের এমন কিছু থাকা বাঞ্ছিত তো নয়ই। অর্থকে যা নাগরিকদের কাছে গোপন করতে হয়। বিশেষ টাকা পয়সার ক্ষেত্রে তো নয়ই। অর্থকে ঘিরেই যাববতীয় দুর্নীতির সূচনা। তাই আয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা জরুরি। দেশের প্রতিটি নাগরিককে তাঁর আয়-ব্যয় ও অর্থ-সম্পদের হিসাব দাখিল/প্রকাশ করতে হয়। তাহলে রাজনৈতিক দল অর্থাৎ বিজেপি কোন অধিকারে তথ্য গোপন করার অধিকার দাবি করে? ন্যায় পথে যদি অর্থ সংগ্রহ হয় তা প্রকাশে এত ভয় কিসের। কারা টাকা দিয়েছে, কোথা থেকে দিয়েছে তা মানুষ জেনে গেলে বিপদের আশঙ্কা করছে মোদীর দল। আসলে ঘনিষ্ঠ কর্পোরেটের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হয় তা বাইরে জানাতে চায় না। তাছাড়া সেই টাকা কালো হলে বিপদ আরও বাড়ে। কালো টাকা নেবার জন্যও এমন গোপনীয়তা দরকার হয়। মোদী সরকারকে মানতে বাধ্য করতে হবে স্বচ্ছতা গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান ‍‌ভিত্তি। নির্বাচনে যদি স্বচ্ছতাই না থাকে, রাজনৈতিক দলগুলি কার টাকায় নির্বাচনী প্রচারে ফোয়ারা ছোটায় সেটা যদি নির্বাচকমণ্ডলীর জানার অধিকারই না থাকে তাহলে গণতন্ত্রের আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না।

Comments :0

Login to leave a comment