গার্গী চ্যাটার্জি
বর্তমান যুগকে বলা যায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগ, যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ও রোবোটিক্স টেকনোলজি প্রতিনিয়ত রূপান্তর ঘটাচ্ছে উৎপাদন, পরিষেবা ও চিকিৎসা ক্ষেত্র সহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিকাঠামোর প্রতিটি স্তরে। এই প্রযুক্তি যেমন কর্মদক্ষতা বাড়াচ্ছে ও ব্যয় কমাচ্ছে, তেমনি আবার শ্রমনির্ভর ক্ষেত্রগুলিতে চাকরি হ্রাসের আশঙ্কাও সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষের মতো শ্রমনির্ভর, ঘনবসতিপূর্ণ ও বিকাশমান অর্থনীতির জন্য এটি একটি জটিল এবং দ্বিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
উন্নত দেশগুলিতে উৎপাদন ক্ষেত্রে রোবোটিক্স ও এআই এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। 'স্মার্ট ফ্যাক্টরি', 'ইন্ডাস্ট্রি ৪.০' ধারণা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট জটিল জিনিসপত্র যেমন গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ নির্মাণে নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে ২৪ ঘণ্টা। সেন্সর ও ডেটা অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে উৎপাদন পর্যায়ে ত্রুটি ধরা যাচ্ছে এবং আগাম সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে। একটি রোবট একাধিক শ্রমিকের কাজ একা করতে সক্ষম, ফলে কারখানাগুলিতে মানুষের পরিবর্তে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। এরফলে মানুষের শ্রমের চাহিদা কমছে।
এআই বর্তমানে ব্যাঙ্কিং, বিমা, কাস্টমার সার্ভিস এবং এমনকি আইন ও পরামর্শ সেবাতেও প্রভাব বিস্তার করছে। ব্যাঙ্ক বা ই-কমার্স কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার পরিষেবার বড় অংশ এখন এআই নির্ভর চ্যাটবট ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট দ্বারা চালিত। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতার অতীত লেনদেন বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঋণের যোগ্যতা নির্ধারণ করছে এবং জালিয়াতি শনাক্ত করছে। হাই ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং, স্টক বিশ্লেষণে রোবট ও এআই ব্যবহার প্রবলভাবে বাড়ছে, যা অনেক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞের কাজকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলছে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে এআই ও রোবোটিক্স সঠিক রোগ নির্ণয়, অপারেশন এবং রোগীর রেকর্ড সংরক্ষণে অভিনব পরিবর্তন এনেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ইমেজ রিকগনিশন মেশিন ক্যানসার, ফুসফুস রোগ প্রভৃতি দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে পারছে। রোবটিক সার্জারি দা ভিঞ্চি সার্জিক্যাল সিস্টেমের মতো উন্নত প্রযুক্তি কম ইনভেসিভ, কম রক্তপাত এবং দ্রুত পুনরুদ্ধারের সুবিধা দিচ্ছে। দূরবর্তী অঞ্চলে বসেও রোগী চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সহায়তাপ্রাপ্ত টুলের মাধ্যমে যাকে টেলিমেডিসিন বলা হচ্ছে।
এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে শ্রমিক শ্রেণির উপর। আধুনিক পরিকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে শ্রমিক-কর্মীদের উপর বহুমুখী প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে বহু শ্রমিকের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, বিশেষত যাঁরা প্রযুক্তি নির্ভরতা ও আধুনিক দক্ষতার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন। দক্ষতা-ভিত্তিক কর্মসংস্থানের দিকে জোর দেওয়া হলে অভিজ্ঞ অথচ স্বল্প শিক্ষিত বা প্রযুক্তিতে অদক্ষ শ্রমিকরা কার্যত বঞ্চিত হয়ে পড়বেন, যা একপ্রকার শ্রেণিভিত্তিক বৈষম্যকেই প্রতিষ্ঠা করবে। একই সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক, অস্থায়ী ও পরোক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরতা বেড়ে গেলে শ্রমজীবীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়বে। এই প্রক্রিয়ায় স্থায়িত্বহীন কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে, তেমনি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া নতুন বেকারত্বেরও সৃষ্টি হবে—যা সমাজে আর্থিক ও সামাজিক অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।
প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে একদিকে যেমন পুরানো অনেক ধরনের কাজ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে এক নতুন কর্মসংস্থানের দিগন্ত—যা নির্ভর করছে আধুনিক ও সুনির্দিষ্ট দক্ষতার উপর। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে ডেটা অ্যানালিস্ট, প্রোগ্রামার, রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ার, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট, ইথিক্যাল হ্যাকার এবং ক্লাউড ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞদের জন্য। পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে হেলথটেক, অর্থনৈতিক পরিষেবায় ফিনটেক, এবং শিক্ষা খাতে এডটেক—এই তিনটি সেক্টরেও প্রযুক্তিনির্ভর বহু নতুন উদ্যোগ ও স্টার্টআপ তৈরি হচ্ছে, যেখানে দক্ষ কর্মীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে। তবে এই সুযোগগুলি গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজন যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন, যা না থাকলে সাধারণ শ্রমজীবীদের পক্ষে এই নতুন কাজের জগতে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে, সমাজে কর্মসংস্থানের এক নতুন বিভাজন তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
গ্রামীণ ও কমশিক্ষিত যুবদের পক্ষে এই নতুন প্রযুক্তিনির্ভর কাজের জগতে প্রবেশ করা কঠিন, কারণ এই কাজগুলি করতে গেলে কম্পিউটার ব্যবহারের দক্ষতা, ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগের ক্ষমতা, এবং প্রযুক্তি ভিত্তিক বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে এখনো ভালো মানের স্কুল-কলেজ, ডিজিটাল পরিকাঠামো বা প্রশিক্ষণের সুযোগ সীমিত। ইন্টারনেট সংযোগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি বা প্রশিক্ষক—এই সবকিছুরই অভাব রয়েছে। তাছাড়া অর্থনৈতিক দিক থেকেও পিছিয়ে থাকার কারণে অনেকেই ব্যয়বহুল প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না। ফলে এই যুবক-যুবতীরা নতুন প্রযুক্তি নির্ভর চাকরির সুযোগ থেকে কার্যত বঞ্চিত হয়ে পড়ছেন এবং তাদের কর্মসংস্থানের পথ আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। ভারতের প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স প্রযুক্তির প্রসার একদিকে যেমন নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি করছে, তেমনি বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য তা বেকারত্বের কারণও হয়ে উঠতে পারে। প্রতি বছর এই দেশে লক্ষ লক্ষ যুবক চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন, কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের প্রতিফলন খুবই ধীরগতির। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং বা রোবোটিক্সের বাস্তবভিত্তিক ও ব্যবহারযোগ্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো প্রস্তুত নয়। এর ফলে চাকরির বাজারে প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক দক্ষতা না থাকায় বহু শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে শহর ও গ্রামের মধ্যে সুযোগের এক গভীর বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে, যেখানে শহরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবোটিক্স-ভিত্তিক নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে, সেখানে গ্রামের যুবকদের পক্ষে সেসব ক্ষেত্রে প্রবেশ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, দেশের অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME) এখনো প্রযুক্তি ও অটোমেশন ব্যবহারে পিছিয়ে আছে, কিন্তু, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে ভবিষ্যতে তারা যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত প্রযুক্তি গ্রহণ করে, তাহলে বিপুল সংখ্যক সাধারণ শ্রমজীবীর চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে। সব মিলিয়ে, শিক্ষা, দক্ষতা, প্রযুক্তি ও সামাজিক ভারসাম্যের অভাবে ভারত এই প্রযুক্তিগত রূপান্তরের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ধাক্কা সামাল দিতে হলে জাতীয় স্তরে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি, নইলে সমাজে চরম বৈষম্য, বেকারত্ব ও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। প্রথমত, দক্ষতা উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে— প্রত্যেক জেলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্সভিত্তিক স্কিল সেন্টার গড়ে তোলা এবং পলিটেকনিক ও আইটিআই স্তরের কোর্সগুলি বাস্তবমুখী ও চাহিদাভিত্তিকভাবে আপডেট করা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্বে বা পুনঃপ্রশিক্ষণের কর্মসূচি চালু করে প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যেমন, ডেটা লেবেলিং বা হিউম্যান-ইন-দ্য-লুপ-এর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সহায়ক কাজে শ্রমিকদের যুক্ত করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তৃতীয়ত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে প্রযুক্তিগত রূপান্তরে সহায়তা দিতে সহজ শর্তে ঋণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি লোকশিল্প, হস্তশিল্প এবং কৃষিভিত্তিক খাতগুলিতে এমনভাবে প্রযুক্তির সংযোজন করতে হবে যাতে তা উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি করে। এই সমস্ত পদক্ষেপ একত্রে ভারতকে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির পথে এগিয়ে নিতে পারে, আবার সামাজিক ভারসাম্যও রক্ষা করতে সহায়ক হবে।
প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের এই যুগে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাও একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে চুক্তিভিত্তিক ও গিগ শ্রমিকদের জন্য। এই বিপুল সংখ্যক অস্থায়ী কর্মীদের জন্য পেনশন, স্বাস্থ্যবিমা ও বেকারভাতা চালু করা জরুরি, যাতে তারা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার মুখে না পড়েন। একই সঙ্গে, রোবোটিক্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা যদি কোনও কর্মী চাকরি হারান, তাহলে তাদের জন্য পরিবর্তনকালীন ভাতা চালু করার বিষয়টি শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। অর্থাৎ, প্রযুক্তির এই পরিবর্তনের ফলে কাজ হারানো শ্রমিক-কর্মীদের জন্য নতুন কাজের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এই অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে হবে । এছাড়া প্রযুক্তির নৈতিক ও মানবিক ব্যবহারের বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে,কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে যেন ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও বৈষম্যহীনতা বজায় থাকে, তা আইন ও নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে সুনিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি, প্রযুক্তিকে মানুষের বিকল্প নয়, বরং সহায়ক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে এবং সেই মাপকাঠিতে সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলির কাজকর্ম মূল্যায়ন করতে হবে। এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে ভারসাম্য, ন্যায় ও অন্তর্ভুক্তির পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
একথা দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স প্রযুক্তি আধুনিক সভ্যতার এক অনিবার্য বাস্তবতা, যা ইতোমধ্যেই শিল্প, স্বাস্থ্য, আর্থিক পরিষেবা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের নানা পরিসরে গভীর প্রভাব ফেলছে। এই প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনার পাশাপাশি এর অন্তর্নিহিত ঝুঁকিগুলিও উপেক্ষণীয় নয়—বিশেষত ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ ও বিপুল জনসংখ্যার দেশে, যেখানে যথাযথ নীতিনির্ধারণ ও প্রস্তুতি ছাড়াই প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ অগণিত মানুষের জীবিকা ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। এই বাস্তবতায় নীতি-নির্ধারক, শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজ এবং সর্বোপরি শ্রমিক সংগঠনগুলির সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য।
আসুন, আমরা কার্ল মার্কসের সেই কথাগুলি স্মরণ করি, যিনি বলেছিলেন—“হাতচালিত চাকি আপনাকে দেয় সামন্ত প্রভুর সমাজ; আর বাষ্পচালিত মিল দেয় শিল্পপুঁজি-নির্ভর পুঁজিপতিমূলক সমাজ।” আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদেরকে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছে: একদিকে কর্পোরেট ডিজিটাল সামন্ততন্ত্রের সমাজ, আর অন্যদিকে গণতান্ত্রিক প্রযুক্তি-ক্ষমতায়নের সমাজ। কোন পথে আমরা এগবো, তা নির্ভর করছে আমাদের সংগ্রামের উপর।ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ দায় সেই সংগ্রামকে শ্রমিক স্বার্থে সঠিক পথে পরিচালনা করার ।
এই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে সিআইটিইউ’র ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির অন্ধ অনুসরণ নয়, বরং মানবিক ও সমঅধিকারভিত্তিক প্রযুক্তি রূপান্তরের জন্য সিআইটিইউ সর্বস্তরে সচেতনতা তৈরি করতে বদ্ধপরিকর, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও পুনঃদক্ষতা অর্জনের দাবিতে ইতিমধ্যে সোচ্চার হয়েছে, এবং নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে উদ্যোগী হয়েছে। প্রযুক্তির প্রভাবে যদি কর্মহীনতা বাড়ে, তাহলে সামাজিক সুরক্ষা, পুনর্বাসন ও ন্যায্য বণ্টনের দাবি তুলতে সিআইটিইউ সর্বস্তরে সংগঠিত উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তাই আজ আমাদের প্রয়াস হওয়া উচিত একটি এমন সেতুবন্ধ গড়ে তোলা, যেখানে 'চতুর্থ শিল্পবিপ্লব' শুধু প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ নয়, বরং এক মানবমুখী, শ্রমবান্ধব সমাজ নির্মাণের দিশারি হয়ে ওঠে—আর এই পথ রচনায় সিআইটিইউ’র ভূমিকা হবে নেতৃত্বদানকারী।
Comments :0