Post Editorial

প্লাস্টিক বর্জ্যে জেরবার দুনিয়া

উত্তর সম্পাদকীয়​

বাসব বসাক

গত এক দশকের মধ্যে এই নিয়ে তৃতীয়বার রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিবেশ কর্মসূচি বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল ভাবনা বা থিম হিসাবে চিহ্নিত করেছে প্লাস্টিক দূষণকেই। ২০১৮ এবং ২০২৩ এর পর  ২০২৫-এ প্লাস্টিক দূষণ রোধে রাষ্ট্র সঙ্ঘের গভীর আর্তিই প্রমাণ করে প্লাস্টিক দূষণে আজ বিশ্ব ঠিক কতখানি জর্জরিত। কার্যত অভঙ্গুর, অক্ষয় এই সর্বব্যাপী প্লাস্টিক বর্জ্যে আজ পৃথিবীর নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের একটা বড় অংশ নানা নদী দ্বারা বাহিত হয়ে শেষ পর্যন্ত ঠাঁই নেয় সমুদ্রে। সমুদ্রে যত রকম বর্জ্য জমা হয় তার মধ্যে ৮৫ শতাংশই প্লাস্টিক। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন এখনই বছরে গড়ে ৭৫ থেকে ১৯৯ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে সমুদ্রে। এমন চলতে থাকলে, বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০৫০- এর মধ্যেই সমুদ্রে মাছের তুলনায় প্লাস্টিক বর্জ্যের সংখ্যাই হয়ে উঠবে  বেশি। ইদানীং সব থেকে বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা– মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিক। 

পাঁচ মিলিমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যের প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং আরও ঢের ছোট, ১ মিলিমিটারের ১০০০ ভাগের মাত্র ১ ভাগ আয়তনের অদৃশ্য ন্যানোপ্লাস্টিক কণায় কার্যত ছেয়ে গেছে পৃথিবীর জল, মাটি, গাছপালা এমনকি মানব শরীরও। রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিবেশ কর্মসূচি অতি সম্প্রতি জানিয়েছে এই মুহূর্তে সমুদ্র জুড়ে ভেসে বেড়ানো অমন মাইক্রোপ্লাস্টিকের টুকরোর আনুমানিক সংখ্যা ৩৫৮ ট্রিলিয়ন (১ ট্রিলিয়ন মানে ১ লক্ষ কোটি), যা কিনা মহাবিশ্বে যত তারা আছে তার ৩৫০০ গুণেরও বেশি। কলের জল থেকে বাজারের মাছ – সব কিছুই এই মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের কণায় ভরে আছে। গত ৯ এপ্রিল, ২০২৫ এ প্রখ্যাত নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে নানকাই ইউনিভার্সিটি কলেজ অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ অ্যা ন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাসাচুসেটস’ আমহার্স্ট কলেজ, চীনের অ্যা কাডেমি অব সায়েন্স রিসার্চ সেন্টার ফর ইকোএনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং বেজিঙের অ্যা কাডেমি অব এগ্রিকালচার ও ফরেস্ট সায়েন্সের গবেষকবৃন্দ দেখিয়েছেন কিভাবে গাছের পাতার পত্ররন্ধ্র দিয়ে গাছের শরীরে ঢুকে পড়ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা। বিশেষত যে সব সবজি খোলা আকাশের নিচে চাষ করা হয় তাদের দেহে টেট্রাথ্যালেট ও পলিস্টাইরিন জাতীয় মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিক কণার পরিমাণ গ্রিন হাউজে ফলানো সবজির তুলনায় ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি। চীনের তিয়ানজিনে গ্রিন হাউজের বাইরে চাষ করা লেটুসের প্রতি গ্রাম শুষ্ক ওজনে ৭ থেকে ১০ ন্যানোগ্রাম পলিস্টাইরিনের ন্যানোকণা পাওয়া গেছে। স্বভাবতই সবজি থেকে এই সব অবাঞ্ছিত কণা অবাধে ঢুকে পড়ছে আমাদের শরীরেও। ড ওয়াল্টার ওয়াইডার বছর কয়েক আগেই দেখিয়েছেন আমরা যে তথাকথিত কাগজের কাপে চা খেয়ে ভাবি যা হোক প্লাস্টিকের হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেলো ভেবে তৃপ্তি পাই, সেই কাপের ভেতরে থাকা প্লাস্টিকের পাতলা আবরণ থেকে কাপ পিছু গড়ে ১১.৬ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ৩.১ বিলিয়ন আরও খুদে অদৃশ্য ন্যানো প্লাস্টিকের কণা আমাদের শরীরে দিব্যি ঢুকে পড়ছে। আমেরিকার জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিবিষতত্ত্ব (টক্সিকোলোজি) বিভাগের অধ্যাপক ম্যাথু ক্যাম্পেন দেখিয়েছেন মৃত ২৪ জনের মস্তিষ্ক থেকে তিনি গড়ে মস্তিষ্কের ওজনের ০.৫ শতাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন। এদের মধ্যে আবার যে ১২ জনের আলঝাইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগ ছিল তাদের মস্তিষ্ক থেকে পাওয়া প্লাস্টিকের ওজন সামগ্রিক গড়ের অন্তত ১০ গুণ বেশি। আমাদের ফুসফুস, শিরা, এমনকি নারী দেহের অমরাতেও প্লাস্টিক কণার খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে প্লাস্টিক দূষণ আজ রীতিমতো চিন্তার কারণ বইকি!


২০২০-র হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি বছর ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণ কম বেশি ৫২.১ মিলিয়ন টন যার শতকরা ৬৯ ভাগই আসে মাত্র ২০ টি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে। তবে এ কথা মনে করার কোনও কারণ নেই যে ভোগ সংস্কৃতি লালিত উন্নত দেশগুলির প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ কম, বরং উল্টোটাই। তবু তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের নিরিখে বিশ্বের প্রথম ৯০ টি দেশের মধ্যে নেই তার আসল কারণ হলো ওই সব দেশ বর্জ্য সংগ্রহে ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক উন্নত। ভারতেই তো ফি বছর গড়ে ৫.৬ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য স্রেফ খুলে আম পোড়ানো হয়ে থাকে। এটা দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বর্তমানে ভারতই বিশ্বের সর্বোচ্চ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদক দেশ। গত ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে জোশুয়া কটম, এড কুক ও কোস্টাস ভেলিসের মতো গবেষকরা দেখিয়েছেন প্রতিদিন গড়ে ৯.৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করে তথাকথিত ‘বিকশিত’ ভারত কিভাবে চীনকেও পিছনে ফেলে বিশ্বের এক নম্বর প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশ হয়ে উঠেছে। বছর কয়েক আগেও প্লাস্টিক আবর্জনা উৎপাদনে শীর্ষে থাকা চীন কিন্তু বিস্ময়করভাবে নেমে এসেছে চতুর্থ স্থানে। প্রায় ভারতের মতো জনভার নিয়ে তৃতীয় বিশ্বের এই দেশ এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে গত ১৫ বছরে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ ও তার যথাযথ ব্যবস্থাপনায় প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ ঘটিয়ে। 


হাইনরিখ বয়েল ফাউন্ডেশন সঠিকভাবেই জানিয়েছে আজ পর্যন্ত বিশ্বে যে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি উৎপাদিত হয়েছে ২০০০ সালের পর। বছর তিনেক আগে রয়টারের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল বিশ্বে প্রতি মিনিটে কম করে ১০ লক্ষ প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হচ্ছে। এই সংখ্যাটা সন্দেহ নেই এখন আরও বেড়েছে। দিল্লি কেন্দ্রিক চিন্তন এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যা ন্ড অ্যা কশন গ্রুপ সমীক্ষা করে সম্প্রতি দেখেছে ভারতে প্রতিদিন ১২০ মিলিয়ন দুধের পাউচ, রয়েছে বিপুল পরিমাণে ইনস্টান্ট নুডলসের প্যাকেট, ডিটারজেন্টের প্যাকেট ভোজ্য তেলের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে পোটাটো চিপস থেকে সাবান, শ্যাম্পু, জর্দা, গুটখা সহ আরও কত যে পণ্যের কোটি কোটি প্লাস্টিকের মোড়ক প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে এবং অবধারিতভাবে পথে ঘাটে মাঠে প্রান্তরে পুকুরে নদীতে ভয়ঙ্কর দূষণ ছড়াচ্ছে তার মাপজোক করাই দুষ্কর। মাছের বাজারে ১২০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিক প্যাকেট ব্যবহার আটকাতে আমরা প্রাণপাত করছি বটে কিন্তু এই সব বহুজাতিক সংস্থা উৎপাদিত প্লাস্টিক প্যাকেটজাত পণ্যের দেদার বিক্রিতে আমাদের অন্ধ হয়ে থাকা ছাড়া আর উপায় কি! ভারতে প্লাস্টিক দূষণ রোধে ২০১৬ সালের আইনকে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার সংশোধন ক’রে সর্বশেষ যে সংশোধিত আইনটি আনা হয়েছে, সেটি আগামী ১ জুলাই, ২০২৫ থেকে লাগু হতে চলেছে। এই সংশোধিত আইনের মোদ্দা কথা হলো যে সব কোম্পানি প্লাস্টিক জাত পণ্য বা প্লাস্টিক মোড়া পণ্য আমদানি করবে তাদের একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করতে হবে এবং প্রতি টন প্লাস্টিক পণ্য পিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা খয়রাতি দিতে হবে, অন্যথায় জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়বে। বোঝাই যাচ্ছে রপ্তানি ক্ষেত্রকে দেওয়া হয়েছে যথেচ্ছ ছাড়। ফলে বড় বড় কোম্পানিগুলো পয়সা দিয়ে ছাড় পেয়ে যাবে, ছোট সংস্থাগুলো এত টাকা বিনিয়োগ করতে না পেরে ক্রমশ ধুঁকতে থাকবে আর প্রশাসনের যাবতীয় হম্বিতম্বি চলবে বাজার হাটের গরিব দোকানিদের ওপর। সেই সঙ্গে আম আদমিকে জ্ঞান বণ্টন করা হবে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে, যেন প্লাস্টিক দূষণের সব দায় জনগণেরই। 


লরা সুলিভান,  ২০২০ সালে ‍দেখিয়েছেন প্লাস্টিক দূষণের প্রশ্নে নিজেদের স্বার্থে বড় বড় কর্পোরেট তেল কোম্পানিগুলো কিভাবে নাগাড়ে আমাদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। আদতে কোনোকালেই মোট উৎপাদিত প্লাস্টিক আবর্জনার ১০ শতাংশের বেশি পুনর্নবীকৃত হয়নি। এক্সন,  শেভরন, ডুপন্ট, ডাওয়ের মতো তেল কোম্পানিগুলি প্লাস্টিকের পুনর্নবীকরণ নিয়ে বিজ্ঞাপনে যত টাকা ঢেলেছে কার্যক্ষেত্রে পুনর্নবীকরণে তার ছিঁটেফোটাও ব্যয় করেনি। বরং মাটির নিচে চাপা পড়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা সমুদ্রে গিয়ে জমা হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য। মাঝখান থেকে পণ্যের মোড়কে রিসাইকেলড তকমামাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সাইরাকিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত কিছু পুরানো নথি সম্প্রতি প্রকাশিত হলে দেখা যাচ্ছে সেই ১৯৭৩ সালেই এক শিল্প পরামর্শদাতা তাঁর রিপোর্টে বিজ্ঞানীদের মত উদ্ধৃত ক’রে প্লাস্টিক পুনর্নবীকরণ প্রসঙ্গে লিখেছেন বাতিল জিনিস থেকে নতুন ক’রে কিছু পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয় এবং এই কাজ অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য আর বাছাই করাও কঠিন। সোসাইটি অব দ্য প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের পূর্বতন সভাপতি অধুনা ফ্লোরিডানিবাসী ল্যারিথমাস, যিনি কিনা বেশ কয়েকটি তেল কোম্পানির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, সম্প্রতি প্লাস্টিক পুনর্নবীকরণ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে তাঁর মত ভিন্ন হলেও তিনি তেল কোম্পানিগুলি যেমনটা চেয়েছে সেইরকম মতামতই দিয়ে এসেছেন তার কর্মজীবনে। গত শতকের আটের দশকে যখন প্রথমবার প্লাস্টিক বর্জ্য আম জনতার বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে তখন ৫০মিলিয়ন ডলার খরচ ক’রে প্লাস্টিক মাহাত্ম প্রচারে বিজ্ঞাপন শুরু করে তেল কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি ঘটা ক’রে শুরু হয় তথাকথিত রিসাইক্লিং প্রকল্পও। এসবের আসল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মধ্যে এই তো বেশ ব্যবস্থা নেওয়া হলো ধরনের সুখানুভূতির সঞ্চার করা। এই কারণে এই জাতীয় লোক ঠকানো প্রকল্পকে তেল লবি নিজেরাই তাদের গোপন দলিলে ফিল গুড প্রকল্প হিসাবে চিহ্নিত করেছে। সেই সময় ঢাকঢোল পিটিয়ে তেল কোম্পানিগুলো যেসব পুনর্নবীকরণ প্রকল্প চালু করেছিল সেগুলির সব কটিই গত শতকের ন’য়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। ম্যাসাচুসেটসে মোবিল কোম্পানির রিসাইক্লিং প্রকল্প চলেছিল মাত্র ৩বছর, নিউইয়র্কে অ্যা মকোর প্রকল্পটির স্থায়িত্ব ছিল মাত্র দু’বছর। এই মুহূর্তে কোকাকোলা কোম্পানি বছরে ১০০ বিলিয়ন অর্থাৎ ১০০০০ কোটি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল উৎপাদন ক’রে চলেছে যা কিনা ইউনিলিভার,  প্রোক্টর অ্যা ন্ড গ্যাম্বেল, বানেসলের মতো নরম পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির সম্মিলিত উৎপাদনের (৪৭০বিলিয়ন) এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। কোকাকোলা যদিও ২০২০-র মধ্যে বোতল তৈরিতে অন্তত ৫০% পুনর্নবীকৃত প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তবু ২০২৪-এর শেষেও তারা তাদের ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি। রিসাইক্লিং-এর পরিবর্তে বরং বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক-বর্জ্য গরিব দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়াতেই তাদের আগ্রহ থাকে বেশি। এই প্রসঙ্গে খাদ্য অপচয়রোধী প্রচার সংস্থা ফিডব্যাকের অধিকর্তা শ্রীমতী ক্যারিনা মিলস্টোন ২০২২ সালে যথার্থই বলেছেন, কোকাকোলার মতো সম্পদ শোষণকারী ভোগনির্ভর বহুজাতিক ব্যবসার মডেল মূলগতভাবেই এই গ্রহের প্রয়োজনের সঙ্গে খাপ খেতে পারে না। তথাকথিত গ্রিন মার্কেটিং টুল নামক কৌশলকে হাতিয়ার করে রিসাইক্লিংয়ের সবুজ চুনকামের আড়ালে অপ্রতিরোধ্য গতিতে প্লাস্টিক উৎপাদন চলছেই। কেননা খনিজ তেলের উপজাত হিসাবে প্লাস্টিক উৎপাদনে খরচ অত্যন্ত কম। আর লাভজনক বলেই তেল কোম্পানিগুলো দিব্যি বছরে ৪০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্লাস্টিক উৎপাদন করে চলেছে। বিশ্বের তাবড় ব্যাঙ্কগুলিও তাই দেদার টাকা ঢেলে চলেছে প্লাস্টিক উৎপাদক শিল্পের পিছনে। 

প্লাস্টিক বর্জ্যে দমবন্ধ হয়ে আসছে পৃথিবীর। এই ভয়ঙ্কর প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। গত ২০২২-এর মর্চে  রাষ্ট্রসঙ্ঘের  পরিবেশ সংসদের অধিবেশনে সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষা এবং প্লাস্টিক দূষণ রোধে একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যতামূলক আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। তারপর বিশ্বের একাধিক শহরে এ নিয়ে এখনো পর্যন্ত পাঁচটি সভা হয়ে গেলেও মূলত উন্নত দেশগুলির জন্যেই এখনো পর্যন্ত মতৈক্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আগামি ৫ থেকে ১৪ আগস্ট পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জেনিভাতে। বলার সময় এসেছে আর টালবাহানা নয়; দ্রুত বাধ্যতামূলক আইন প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে ব্যক্তির ওপর প্লাস্টিক দূষণের দায় চাপিয়ে রাষ্ট্র হাত গুটিয়ে নিলে চলবে না। প্লাস্টিক দূষণের দায় নিতে হবে রাষ্ট্রকেই। আর সত্যিই যদি প্লাস্টিক দূষণ থেকে নিস্তার পেতে হয় তাহলে কর্পোরেট লালিত অতি ভোগের দর্শন এবং বৃহৎ তেল কোম্পানিগুলির বেলাগাম মুনাফা লিপ্সা ও প্রাকৃতিক সম্পদের দেদার লুটের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হতে হবে আমাদের।

Comments :0

Login to leave a comment