Inflated Claims

আত্মনির্ভরতার ফানুস

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ


পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুরকে ঘিরে নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তথা দেশে তৈরি অস্ত্রশস্ত্রের সাফল্যের ঢাক যে চড়া সুরে বাজিয়ে যাচ্ছেন তাতে কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন বায়ু সেনা প্রধান এপি সিং। বণিকসভার এক অনুষ্ঠানে খোদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর উপস্থিতিতে দেশীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিরক্ষা প্রকল্প নিয়ে যে নির্মম সত্য প্রকাশ্যে এনেছেন তারপর প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরতা নিয়ে বড়াই করার সুযোগ থাকে না। ভোটের কথা ভেবে নেতা-মন্ত্রীরা যথেচ্ছ মিথ্যে কথা, সাফল্য নিয়ে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করে থাকেন। তবে প্রতিরক্ষাকে সাধারণভাবে সেই অতিরঞ্জন  থেকে রেহাই দেওয়া হয়। কারণ দেশরক্ষার গুরুতর বিষয় নিয়ে আর যা-ই  হোক এমন বালখিল্য চলে না।  কিন্তু অন্ধ ক্ষমতা বিলাসী মোদীদের সেই মাত্রাজ্ঞানও নেই। তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুর আচমকা বন্ধ করে দেবার পর থেকে  যেখানেই ভাষণ দিতে যাচ্ছেন সেখানেই আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষার ঢাক পিটিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলছেন যেসব অস্ত্র এবং সমর ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানকে পর্যুদস্তু করা হয়েছে তার সবটাই ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে ভারতের তৈরি। ঘুরিয়ে  এটাও বলে দিয়েছেন এর সবটাই  তাঁর আমলের, অর্থাৎ সব কৃতিত্ব তাঁরই। জনসভায়  দাঁড়িয়ে ‍তিনি নিজের ঢাক নির্লজ্জভাবে পিটিয়ে চলেছেন। তারপর সেসব ভাষা যে ভঙ্গিমায় উচ্চারণ করছেন তা মোটেই রাষ্ট্রনায়ক সুলভ নয়। এমন নিম্নমানের ভাষ্য প্রয়োগ শুধু দৃষ্টিকটূ নয় দেশের সম্মানের পক্ষেও অহিতকর।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের  মতে ভারতের সমর সজ্জার ৮০ শতাংশ উপকরণই বিদেশ থেকে আমদানি করা। একসময় রাশিয়াই ছিল ভারতের প্রধান অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহকারী। মোদী জমানায় এই ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে  আমেরিকা ও ইজরায়েল থেকে অস্ত্র আমদানি দ্রুত বেড়েছে। রাশিয়ার  বদলে যুদ্ধ বিমান কেনা হয়েছে ফ্রান্স থেকে। রাশিয়াকে সরিয়ে ইজরায়েল ও আমেরিকা হয়ে উঠছে ভারতে সমর সরঞ্জামের প্রধান উৎস। মোদী প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ অতীতের তুলনায়  অনেক বাড়িয়েছেন।  ভারতকে সমরশক্তিতে বলীয়ান  করে তুলতে বিপুল ব্যয়ের পথে হাঁটছে।  এরজন্য দেশের শীর্ষ কর্পোরেট সংস্থা এবং ‍‌বিদেশি সংস্থাকে অবাধ ছাড়পত্র দিয়েছেন অস্ত্র উৎপাদনে। এতকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যবস্থায় ভারতে অস্ত্র উৎপাদন  ও প্রতিরক্ষা গবেষণা সীমাবদ্ধ ছিল। মোদী সেটা তুলে দিয়েছেন দেশি-বিদেশি কর্পোরেটের হাতে। তেমনি অসামরিক পণ্য উৎপাদনে এবং রপ্তানিতে কার্যত ব্যর্থ হয়ে মোদীর  জোর দিয়েছেন  প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও রপ্তানিতে। তারজন্য নানাভাবে বিপুল ছাড় ও সুবিধাদানের ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থাৎ যুদ্ধাস্ত্রকে ভিত্তি করেই ‍‌মোদীরা ম্যানুফ্যাকচা‍‌রিং অর্থনীতিকে সচল রাখতে চান। বাস্তবে সেটাও পড়ে বহুযোজন পেছনে। বায়ু সেনা প্রধান বলেছেন কোনও প্রকল্পই সময় মতো শেষ হয় না। কোনও অস্ত্র মেরামত বা আরও উন্নত করার জরুরি হলেও এক দশকেও সেকাজ শেষ হয় না। একটা আধুনিক যুদ্ধ বিমানে নকশা করতেই দশক কেটে যায়। আসলে গবেষণার জন্য বরাদ্দ কম। তাই অগ্রগতি  মন্থর। চীন, রাশিয়া সহ অন্যান্য দেশ যখন পঞ্চম প্রজন্মের পর ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান বা‍‌নিয়ে ফেলেছে তখন ভারত পড়ে আছে চতুর্থ প্রজন্মে। যে গতিতে কাজ এগচ্ছে তাতে ভারতে পঞ্চম   প্রজন্মের বিমান তৈরি হতে ২০৩৫ সাল পেরিয়ে যাবে। ততোদিনে অন্য দেশ অষ্টম-নবম প্রজন্মের বিমান বানিয়ে ফেলবে।  মোদীর আত্মনির্ভরতার বক্তৃতা দিয়ে ভোটে  জেতার চেষ্টা করবেন। আড়ালে পুরানো প্রযুক্তির অস্ত্র আমদানি করে অর্থের অপচয় করবেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment