পরপর ধর্ষণ কাণ্ডে ক্ষোভ পশ্চিম মেদিনীপুরে। এবার নাবালক স্কুল ছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ। ১৩ বছরের ওই নাবালিকাকে ধর্ষণে অভিযুক্তের নাম মুজিবর মণ্ডল (৪৫)।
গড়বেতার এই ধর্ষণের ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবারের। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে অভিযুক্ত স্থানীয় প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। গড়বেতা ব্লকের আগরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আজিম চৌধুরীর সর্বক্ষণের সঙ্গী। একাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।
অভিযোগ, ধর্ষণের ঘটনা আড়াল করতে গ্রামে সালিশি সভা চলে। সেখানে গন্ডগোল সৃষ্টি হয়। চলে মারপিটও। ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ করায় মামলা করার হুমকি দেয় তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। হুমকি দিয়ে প্রতিবাদী ও নির্যাতিতা স্কুল ছাত্রীর পরিবারকে দমিয়ে রাখা হয়। চালানো হয় নজরদারিও। ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে নীরব গড়বেতা থানার পুলিশও। এমনই অভিযোগ করেছে নির্যাতিতার গ্রাম। নির্যাতিতাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে ধর্ষণের ঘটনার কোনো লিখিত অভিযোগ হয়েছে কিনা বলতে নারাজ পুলিশ।
গড়বেতা থানা এলাকায় এর আগে খড়কুশমা, উত্তরবিল এলাকায় আরও তিনটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তবে শাসকদলের হুমকির জেরে সব ধামাচাপা পড়ে গেছে। গত ৫ দিনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই নিয়ে তিনটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২ জুন সবংয়ে বিশেষভাবে সক্ষম ১৭ বছরের এক কিশোরীকে পাটখেতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী শংকর পট্টনায়ক। ৬ জুন ঘাটাল শহরে এক মহিলাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করার অভিযোগ জমা পড়েছে। ফের গড়বেতায় ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ পশ্চিম মেদিনীপুরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিতা ওই স্কুল ছাত্রী ভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। বাবা- মা দুজনই দিনমজুর। চাষের কাজে গ্রামের পাশেই জমিতে গিয়েছিলেন তাঁরা। মেয়ে সকাল নয়টার দিকে বাবা মা-কে খাবার পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। অভিযোগ সেই সময় রাস্তা থেকে ওই স্কুল ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে পাশের জঙ্গলে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত। নির্যাতনের কারণে নাবালিকা জ্ঞান হারায়। তাকে জঙ্গলে ফেলে পালায় অভিযুক্ত।
নির্যাতিতার বাবা-মা বাড়ি ফিরে দেখেন মেয়ের স্কুল ব্যাগ, পোশাক ঘরে রয়েছে, কিন্তু মেয়ে নেই। মেয়েকে খুঁজতে বেড়িয়ে পড়েন তাঁরা। সেই সময় তাঁর দেখেন তাদের মেয়ে বিধস্ত অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে ফিরছে। পোশাকে রক্তের দাগ। কান্নায় ভেঙে পড়ে সমস্ত ঘটনা জানায় বাবা ও মা-কে। নির্যাতিতা তার পরিবারকে বলে যে ‘প্রধান জ্যেঠুর’ বাইক চালক রাস্তা থেকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে।
খবর ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। শোরগোল পড়ে যায়। প্রথমে পরিবার মেয়েকে গড়বেতা হাসপাতালে নিয়ে যায়। গড়বেতা হাসপাতাল থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয় গভীর রাতে।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই নির্যাতিতার গ্রামে এক গোপন ডেরায় তৃণমূলীদের সালিশি সভা বসে। সেখানেই প্রতিবাদী গ্রামবাসীদের সঙ্গে হাতাহাতি ও মারামারি হয় তৃণমূলের মাতব্বরদের। প্রতিরোধের জেরে বাইরে থেকে আসা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মাঠ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। খবর গড়বেতা থানায় যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযুক্তকে নিরাপদে লুকিয়ে রাখে তৃণমূলের অঞ্চল ও ব্লক নেতারা। শুক্রবার পুলিশ দাবি করে বাঁকুড়া জেলার শিমলাপাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্তকে। জানা গেছে, অভিযুক্তকে গড়বেতা থানায় আটক করে রাখা হয়েছে। তবে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
পুলিশের একাংশের বক্তব্য, পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি বলে আইনি পদক্ষেপ আটকে রয়েছে। গ্রামবাসীদের পালটা বক্তব্য, শাসকদলের চাপে নীরব পুলিশ। নাবালিকার গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, শনিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে নির্যাতিতা। তবে তৃণমূলের হুমকির জেরে আতঙ্কিত নির্যাতিতার পরিবার।
Garhbeta Rape
গড়বেতায় ফের ধর্ষণ, অভিযুক্ত ‘প্রধান জ্যেঠুর’ বাইকচালক তৃণমূল নেতা

×
Comments :0