sandeshkhali

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষোভ সন্দেশখালিতে

রাজ্য

 সরবেড়িয়ার মল্লিকপুরে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ আবু তালেব মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাতে ক্ষুব্ধ সন্দেশখালির বাসিন্দারা। খোদ সরবেড়িয়ার একাধিক বাসিন্দারা এদিন পালটা অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী জেলে থাকা শাহজাহানের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে এমন সব বলছেন তাতে এলাকার তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই আরও শক্তি পাবে। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হুমকি শুরু করে দিয়েছে।
মিডিয়ার সামনে, গ্রামবাসীদের সামনেই সিআরপিএফ, এনএসজিকে সঙ্গে নিয়েই সিবিআই দ্বিতীয় দফার ভোটের দিনই ওই তৃণমূল কর্মী আবু তালেব মোল্লার পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে রীতিমত অস্ত্রভাণ্ডার উদ্ধার করে। মোট ২২৮টি কার্তুজ, ১২০টি বুলেট এবং দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে ৭টি পিস্তল ও রিভলবার। মিলেছে মার্কিন মুকুলের অত্যাধুনিক রিভলভারও। বিদেশ থেকে নিলামে এই অস্ত্র আমদানি করার চক্রও সামনে এসেছে। এছাড়াও বিপুল পরিমানে দেশি বোমা ও বোমা তৈরির মশলা উদ্ধরা হয়েছে। যদিও সেই ঘটনার পরেও খোদ মুখ্যমন্ত্রী শনিবার আসানসোলের সভা থেকে অভিযোগ করেন, ‘‘তুমি (সিবিআই) এটা নিজে নিয়ে এসেছ কিনা, কী করে জানবে? তুমি নিজে পাঁচটা বন্দুক নিয়ে এসে কারোর বাড়িতে ঢুকিয়ে দিলে। প্রমাণ তো নেই। এলাকার পুলিশও জানে না।’’ 
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যেই এদিন ক্ষোভ উগরে দেন সন্দেশখালির বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, এখনও বাইরে থাকা শাহজাহানের বাহিনীকে ভোটের আগে আরও তাণ্ডব চালানোর প্ররোচনাই দেওয়া হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য। গোটা সন্দেশখালির দু’টি ব্লকজুড়েই এরকম একাধিক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে। সিপিআই(এম)’র তরফে বারেবারে দাবি করা হয়েছিল বেআইনি অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করতে। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট প্রার্থী নিরাপদ সর্দার পালটা অভিযোগ করেন, ‘‘গোটা সন্দেশখালি জুড়ে রয়েছে দুষ্কৃতীরা। কোটি কোটি টাকা তোলা আদায় হয় এখান থেকে। ভাগ যায় কলকাতায়। ভেড়ি দখল, আদিবাসীদের জমি দখলেই শুধু এই অস্ত্র ব্যবহার হয় না, ভোট লুটের কাজেও লাগানো হয় এই দুষ্কৃতীদের। মুখ্যমন্ত্রীর এমন উদ্ভট দাবিতে শুধু দুষ্কৃতীরাই অক্সিজেন পাবে’’। সিবিআই, এনএসজি নিজেরাই অস্ত্র রেখে এসেছিল ওই বাড়িতে, মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পরে রবিবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে দিল্লিতে সদর দপ্তরে একটি রিপোর্টও পাঠানো হয়। 
সোমবার বসিরহাট আদালতে তোলার কথা শাহজাহানকে। শাহজাহান ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে এই বিপুল অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের পাশাপাশি তার একাধিক ছবি সহ আইকার্ড ও নথিও মিলেছে। জানা গেছে, সিবিআই-র তরফে সোমবার আদালতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইন যুক্ত করার আবেদন করা হতে পারে। গত ৫ জানুয়ারি ইডি’র উপর হামলার ঘটনার মামলাতেই এবার শাহজাহানের বিরুদ্ধে এই নতুন ধারা যুক্ত হতে চলেছে।
এদিকে সন্দেশখালিতে শেখ শাহাজাহানের সাম্রাজ্য রক্ষায় ভোট পর্ব চলাকালীনই বিপুল টাকা খরচ করে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে গেছ রাজ্য সরকার। যার বিরুদ্ধে আদিবাসীদের জমি লুট থেকে মহিলারে ওপর নির্যাতনের একের পর এক ভয়াবহ, গুরুতর অভিযোগ তার হয়েই রাজ্য সরকারের এমন তৎপরতা বাস্তবিকই বেনজির। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের এজলাসে এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। 
গত ১০ এপ্রিল হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। সন্দেশখালির মানুষের ন্যয় বিচারের স্বার্থে তদন্তের প্রয়োজন আছে বলে আদালত মন্তব্য করে। সন্দেশখালির সমস্ত ঘটনাই আদালতের নজরদারিতে তদন্ত করবে সিবিআই। নির্দেশে বলা হয়েছিল সন্দেশখালিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার অভিযোগ জানতে সিবিআই একটি ই-মেল আইডি দেবে। সেখানেই সমস্ত অভিযোগ জমা পড়বে। মূলত মহিলাদের ওপর অত্যাচার ও জমি দখল সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে হবে। সিবিআই-কে আগামী ১৫দিনের মধ্যেই তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম রায় দিতে গিয়ে বলেছিলেন ‘সন্দেশখালিতে সন্ত্রাসের ঘটনার যে সমস্ত অভিযোগ জমা পড়েছে তার মধ্যে যদি এক শতাংশ সত্য হয় তাহলে সেটি লজ্জার ব্যাপার।’ মমতা ব্যানার্জির সরকার বিপুল টাকা খরচ করে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই সিবিআই তদন্তের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দরজায়। 
১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে সন্দেশখালির দু’টি ব্লক। তার মধ্যে শুধু ২ নম্বর ব্লকেই ৩৫৬বিঘা জমি লুট করেছে শাহজাহান-শিবু বাহিনী। ভেড়ির জমির লিজের টাকা লুট করার পরিমাণ তো কোটি কোটি। রায়তি জমিতেও লোনা জল ঢুকিয়ে ভেড়ি করে দেওয়া হচ্ছে। তবে সন্দেশখালির ঘটনার সবথেকে ভয়াবহ অভিযোগ সামনে এনেছিলেন মহিলারা। রাতে বিরেতে তুলে নিয়ে যাওয়া হত সন্দেশখালি থানার সামনের ধৃত তৃণমূলী নেতা শাহজাহানের অনুগামী শিবু হাজরার অফিসে। সারা রাত অত্যাচার চলত। না বললে তাঁদের স্বামীদের তৃণমূল অফিসে তুলে নিয়ে চলতো মারধোর। মহিলাদের ওপর এমন অত্যাচারে ঘটনায় গোটা দেশ জুড়েই প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছি।
 

Comments :0

Login to leave a comment