উৎসবে অনুভবে
গল্প
দোস্ত রহিয়া যা
ময়ূরী মিত্র
নতুনপাতা
গ্রীষ্মের বৈকাল নামিয়াছে ৷ গৃহের দ্বিতল বারন্দায় বসিয়া একাকী বালিকা তাহার পোষা পক্ষীর সহিত গল্প করিতেছিল ৷ তাহার কুঞ্চিত কেশে বাঁধা দুটি বেণী রুটির লেচির মতো লাগিতেছিল ৷ বালিকা কথার ফাঁকে ফাঁকে বিদ্যালয়ে শেখা গীত গাহিতেছিল ৷ গীতের সুমধুর ছন্দে লেচি দুটি দদুম
দুদুম দুলিতেছিল ৷ তাহার অপূর্ব কণ্ঠে পক্ষী ভরা ছোলার বাটি হইতে মুখ তুলিয়া বালিকার দিকে চাহিয়া রহিল ৷ পক্ষীর সংশয় --বালিকা বাস্তবিক সুন্দর নাকি গীতের সুষমা তাহার মুখে ক্রীড়া করিতেছে ! সে বুঝিয়া পাইল না এত মনোহর কন্যা কী করিয়া এক পক্ষীকে খাঁচায় আবদ্ধ রাখিতে পারে ! মিনমিন করিয়া পক্ষী কহিল --আমাকে please ছাড়িয়া দিবে ? দাও না ভগিনী ৷ গগন ডাকিতেছে মোরে --উড়িব ৷
বালিকার মাতা নাই ৷ পিতা রাত্রিদিবা ধাতুব্যবসা লইয়া ব্যস্ত ৷ কন্যার মন বুঝিতে তাহার ভারি দায় পড়িয়াছে ৷ কেবল পল্লীবাসীর ক্রমাগত তাড়নায় কন্যার জন্য দ্বিগুণ মূল্যে পক্ষী ক্রয় করিয়া অনিয়াছে এবং আনিয়াই পক্ষীকে বদ্ধ করিয়াছে ৷ ক্ষুদ্র কন্যা বদ্ধতাকেই স্থায়ী ভালোবাসা মনে করিয়া তৃপ্ত হইয়াছে ৷ পক্ষীর সহিত কথা বলিবার -গান শুনাইবার তৃপ্তি এ জীবনে যেন শেষ হইবে না তাহার ৷ পক্ষীকে মুক্ত করিবার কথা সে চিন্তায় আনিতে পারে না ৷ এমতাবস্থায় পক্ষীর আবেদন শুনিয়া সে মস্তক নাড়াইতে লাগিতে লাগিল ৷ সেই নাড়াইবার ভিতর Yes and No দুটিই ছিল এবং দুটিই পূর্ণমাত্রায় ৷
এদিকে গ্রীষ্মে টবের গুল্মলতা কাতরাইতেছিল ৷ তাহারা শুষ্ক হইয়াছে -জল চায় ৷ জলসিঞ্চন করিতে করিতে বালিকা হতবাক ---গুল্মলতার সর্বাঙ্গে অস্তমিত রবির আলো পড়িয়াছে ৷ জলসিঞ্চনে তাহারা যেন ঝলকাইতেছে ৷ বালিকার বোধ হইল --প্রতি পত্রে যেন রক্তিমবাতি জ্বলিতেছে ৷ বালিকা হতবাক --এত আলোয় পক্ষীর মুখ আঁধারে ৷ টানা দুই চক্ষুতে জল পড়িব পড়িব করিতেছে ৷ বালিকা ভাবিল -- এই বৈকালে বাকহীন সবুজ জীবগুলি এত আলোময় অথচ তাহার বাকপটু পক্ষীটি --যে সমস্তদিন ডাকিয়া -মনুষ্যের ন্যায় কথন করিয়া তাহাকে আনন্দে রাখে সে কেন ক্রন্দন করিতেছে ৷ কাদিতেছ কেন ---এ প্রশ্ন অত্যন্ত অনাবশ্যক মনে হইল মাতৃহারা কন্যার ৷ সে কেবল পক্ষীর দ্বার টান দিয়া খুলিয়া দিল ৷ দৃঢ় কণ্ঠে বলিল ---ভগিনী u must go ---যাও গো ৷ কেবল আমার ক্ষুদ্র দুটি হস্তে তোমার চক্ষের জল মাখাইয়া দিয়া যাও ৷
যাওয়ার কালে পক্ষী ও তাহার বন্ধুর খুব দুঃখ হইতেছিল ৷ তবু বালিকা একমতি --পক্ষীকে আর বান্ধিয়া রাখিবে না ৷ পক্ষী চুমু টুমু ইত্যাদি খাইয়া উড়িল ৷ বলিয়া গেল --মাঝে মাঝে আসিয়া তোমার হস্তে ভরপেট ছোলা খাইয়া যাইব ৷
রাত্রি নামিয়াছে ৷ বালিকা গবাক্ষ দিয়া দেখিতে লাগিল --চন্দ্রের মধ্য দিয়া মেঘের টুকরা এলোমেলো নাচিতেছে ৷ মনে হইতেছে চন্দ্র দুই টুকরা হইয়া যাইতেছে ৷ চন্দ্র Confident ৷ মধ্যযামে দুই টুকরা মিলিয়া গেল ৷
এক্ষণে পূর্ণ চন্দ্র ৷
স্থানে স্থানে সমান জোছনা
ঝরাইতেছে ৷
ভগিনীদ্বয় চিরতরে একে অপরের
হইয়াছে ৷
এক পক্ষীর দুইটি ডানা ৷
পৃথিবীর প্রিয় উপগ্রহ তাহাদের সুখী করিয়াছে ৷
Comments :0