ANAYAKATHA — RAMKINKAR BAIJ | RAGIN AMI — MUKTADHARA — 26 MAY 2024

অন্যকথা — রামকিঙ্কর বেইজ | রঙীন আমি — মুক্তধারা | ২৬ মে ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

ANAYAKATHA  RAMKINKAR BAIJ  RAGIN AMI   MUKTADHARA  26 MAY 2024

অন্যকথা  

রঙীন আমি

রামকিঙ্কর বেইজ

মুক্তধারা

রঙের প্রয়োজনও ছিল। গাছের পাতার রস, বাটনা-বাটা শিলের হলুদ, মেয়েদের পায়ের আলতা, মুড়ি-ভাজা খোলার চাঁহা ভুষোকালি-এইগুলি রঙের প্রয়োজন মেটাত। পাড়ার প্রতিমাকারক মিস্ত্রিদের দেখে ছাগলের ঘাড়ের লোম কেটে নিয়ে বাঁশের কাঠির ডগায় বেঁধে নিয়ে তাতে তুলির কাজ হতো।

বাধার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় আমার অঙ্কন-গুণটির জন্য স্কুলে আমি অবৈতনিক ছাত্র হিসাবে পড়াশুনার সুযোগ পেয়ে এসেছি। স্কুলের দেওয়ালে আঁকা-ছবি ঝোলানো আর পত্রিকায় ছবি দেওয়া আমার

প্রতিমাসের কাজ ছিল। ছোটোবেলাতে পড়াশুনা ভালো লাগত না। বাবা লিখতে দিলে আঁকতে শুরু করতাম। বাঁকুডাতে ঠেলাঠেলি করে ম্যাট্রিক পর্যন্ত হয়েছিল। শান্তিনিকেতনে এসে পড়েছি। কিন্তু তা অ্যাকাডেমিক নয়। ইচ্ছে মতো পড়তাম।

এই-সবের মধ্যে কখন নন-কোঅপারেশন আন্দোলন এসে গেল। স্কুল-কলেজ বন্ধ। ন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হলাম আর কংগ্রেসের কাজে যোগ দিলাম। আমার উপর ভার ছিল মহাপুরুষদের বাণী থেকে উদ্ধৃতি লিখে ঝুলিয়ে দেওয়া আর প্রসেশনের সময় লিডারদের পোট্রেট এঁকে দেওয়া। সেগুলি অয়েলপেন্ট দিয়ে করতে হতো

এইসময় শ্রদ্ধেয় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় মহাশয় বাঁকুড়ায় আসেন এবং তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁরই কৃপায় ঘাটে। সেটা হচ্ছে ১৯২৫ সাল। আমার এত আনন্দ হলো যে ম্যাট্রিক না দিয়েই চলে এলাম। একমাত্র রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনই ব্রিটিশ কর্তৃত্বের বাইরে।

চলে এলাম। এটা শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়। তিনি (রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়) জেনারেল লাইব্রেরির উপরতলায় কলাভবনে নিয়ে গেলেন এবং আচার্য নন্দলালবাবুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তখন নন্দলালবাবুর শিল্প সম্বন্ধে আমার ধারণা বেশি কিছু ছিল না। যা কিছু প্রবাসী'র অ্যালবামে দেখেছি। তা-ও বেশি নয়। ভারতীয় শিল্প ভালো লাগত না তা নয়- কিছু বাস্তবতার ভিতর দিয়ে না-গেলে সেটা সার্থক হবে না- এটাই ছিল মূল ধারণা। যার ফলে পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনে প্রাকৃতিক বাস্তবতার সূচনা হয়েছে। এখনো চলছে। ছাত্রদের অ্যানাটমি ও মাসল সম্বন্ধেও শিক্ষা দেওয়া হয়।

আমরা কাজ করতাম নিজেদের ইচ্ছামতন। নন্দবাবু নিজের কাজ করতেন। একবার করে ঘুরে যেতেন। বিশেষ কিছু ইনস্ট্রাকশন দিতেন না। তবে হ্যাঁ, একটু আধটু যা না বললেই না, তা কি আর বলতেন না? কিন্তু নিজে ইমপোজ করতেন না। পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।

অয়েল পেন্টিং তখন শান্তিনিকেতনে কেউ করতেন না। আমিই প্রথম শুরু করি। দোকানে গিয়ে বললাম, "অয়েল-পেন্টিং করব, কী রং আছে? কীভাবে করতে হয়, দেখান?' তা দোকানদার দেখাল, 'এই তুলি, এই টিউবে বং আর এই পাত্রে তেল আছে, একবার ডুবিয়ে নিয়ে রং করুন।' ব্যস, অয়েল পেন্টিং শেখা হয়ে গেল। 'ভালো কাজ করেছিলাম অয়েলে, যতদুর মনে হচ্ছে- গার্ল অ্যান্ড দ্য ড্রগ। নন্দলালবাবু কিন্তু একটু অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন অয়েলে করেছিলাম বলে। তবে বাধাও দেননি। আমি শান্তিনিকেতনে আসার বছর-চারেক আগে নন্দলালমশাই কলাভবনের অধ্যক্ষ হয়ে আসেন। ছাত্রদের সঙ্গে ওঁর বাবহার খুব সুন্দর ছিল। সকলেই খুব সাহায্য করতেন। তবে তিনি তো ওরিয়েন্টাল আর্টের প্রবর্তক। ওয়েস্টার্ন আর্টের প্রচলন তখনো হয়নি। উনি পছন্দ করতেন না।

(রামকিঙ্কর বেইজের আত্মকথা থেকে নির্বাচিত)

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment