JD Hospital CoochBehar

বেহাল জেডি হাসপাতাল, ধুঁকছে রোগী পরিষেবা, বাড়ছে ক্ষোভ

জেলা

কোচবিহার জেডি হাসপাতাল। ছবি-অমিত কুমার দেব।

কোচবিহারের মহারাজা জগদ্বীপেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুরের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক জে.ডি হাসপাতালকে পুনরুজ্জীবিত করে হেরিটেজ ঘোষণার পাশাপাশি কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে সংরক্ষিত করে এই হাসপাতালকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি উঠলেও এব্যাপারে কোনরকম উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। বাড়ছে ক্ষোভ। 
 কোচবিহারের মহারাজা জগদ্বীপেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুরের প্রচেষ্টায় ১৯৪৭সালে স্থাপিত হয়েছিল এই জে.ডি হাসপাতাল। বর্তমান রাজ্য সরকারের সীমাহীন অবহেলায় আজ তা ধ্বংসের মুখে। কোচবিহার রাজ্য ভারত ভুক্তির কয়েক বছর আগেই প্রজাদের সুচিকিৎসার কথা চিন্তা করে এই হাসপাতাল স্থাপন করেন মহারাজা। ভৌগোলিক দিক থেকে এই হাসপাতাল কোচবিহার ২নং ব্লকের খাগড়াবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিষবাথান গ্রামের ৩১নং জাতীয় সড়কের ধারে প্রায় ৭৮বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। ১২০টি শয্যা বিশিষ্ট ছিলো এই হাসপাতাল। একসময়  আলিপুরদুয়ার, ফালাকাটা, সোনাপুর, জয়গাঁ এবং সমগ্র কোচবিহার সহ নিম্ন আসামের বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ চিকিৎসা করাতে আসতেন এখানে। প্রতিদিন এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রায় ১৫০০রোগী চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসেন। সিপিআই(এম)র দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কোচবিহার মহারাজার স্মৃতিবিজরিত এই ঐতিহাসিক স্থানে মহারাজার নামে মেডিকেল কলেজ নির্মাণ হোক। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে এটি প্রস্তাবিত মেডিকেল কলেজের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই বিষয়ে আগ্রহী হন। কিন্তু ২০১১সালে রাজ্যে পালাবদলের পর তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
বর্তমান রাজ্যের সরকারের সীমাহীন অবহেলায় এবং পরিকল্পিত অবহেলার কারণে বর্তমানে হাসপাতালে খুব বেশি হলে দিনে ১৫জন রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী। হাতে গোনা কয়েকজন রয়েছেন এখানে। নতুন নিয়োগ হচ্ছে না হাসপাতালে। বেশিরভাগ ওয়ার্ডগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝোপঝাড় জঙ্গলে ভরে গেছে হাসপাতালে চারিদিক। হাসপাতালের বন্ধ কোয়ার্টারগুলির ভেতর জঙ্গল আগাছা ভরে গেছে। ভেঙে পড়ছে ছাদের চাঙড়। গোটা হাসপাতাল টাও আজ মৃতপ্রায় ভুতুরে বাড়ির রূপ নিয়েছে। এক সময় এখানে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা ছিল, আজ আর এই পরিষেবা পাওয়া যায় না। এই মুহূর্তে সবটাই ইতিহাস। আর প্রতিনিয়ত চলছে এই ইতিহাস মুছে ফেলার নতুন নতুন প্রয়াস।
  বর্তমান সময়ে এই হাসপাতালের ৭৮বিঘে জমির একাংশ বেআইনি ভাবে জবর দখল করা হচ্ছে, অন্যদিকে, সরকার নিজেই এই হাসপাতালের জমি দখল করে নির্মাণ করেছে জেলা পরিবহণ দপ্তর, আরেকটি অংশ দখল করে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার সরকারি ভাবে মাপ জোপ চলছে এই হাসপাতালের জমির। অর্থাৎ কোচবিহার মহারাজার শেষ স্মৃতিটুকু মুছে ফেলার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে রাজ্যের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী।
 বর্তমানে কোচবিহার শহরে মেডিকেল কলেজ হলেও পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে কারণে চিকিৎসক পড়ুয়াদের থিওরি ক্লাস হচ্ছে এক জায়গায়, আর প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস হচ্ছে প্রায় ৩কিলোমিটার দূরে। এক ছাতার তলায় সব নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে। এই জেডি হাসপাতাল ছিল মেডিকেল কলেজ করবার উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু এখানে আশ্চর্যজনক ভাবে মেডিকেল কলেজ করেনি সরকার।
 তাই এই জে.ডি হাসপাতালকে হেরিটেজ ঘোষণা করা, তাকে কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা, কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পুরুষ বিভাগ ও সার্জিক্যাল বিভাগ এই জেডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা, জেডি হাসপাতালের জমিতে তৈরি হওয়া পরিবহণ ভবন অন্যত্র স্থানান্তরিত করে এখানে হেরিটেজ মিউজিয়াম গড়ে তোলার পাশাপাশি এর পাশে বিশ্বমানের শিশু উদ্যান গড়ে তোলা, এই হাসপাতালের জমি জবর দখল উচ্ছেদ করা, এই জে.ডি হাসপাতালে মহারাজা জগদ্বীপেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুর ও কোচবিহারের রাজকন্যা গায়ত্রী দেবীর মূর্তি স্থাপন সহ একাধিক দাবি দাবিতে ইতিমধ্যে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু করেছে সিপিআই(এম)।

Comments :0

Login to leave a comment