BOOK REVIEW — SOURAV DUTTA | BANOFUL — MUKTADHARA | FRIDAY 19 JULY 2024

বই — সৌরভ দত্ত | বনফুলের শ্রেষ্ঠ গল্প : নবনির্মাণের শৈল্পিক প্রতিমা | মুক্তধারা — শুক্রবার ১৯ জুলাই ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

BOOK REVIEW   SOURAV DUTTA  BANOFUL   MUKTADHARA  FRIDAY 19 JULY 2024

বই  

বনফুলের শ্রেষ্ঠ গল্প : নবনির্মাণের শৈল্পিক প্রতিমা

সৌরভ দত্ত

মুক্তধারা 

 

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওরফে বনফুল বাংলা অণুগল্পের পথিকৃৎ। জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৯শে জুলাই বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মনিহারি গ্রামে। আজ লেখকের জন্মের ১২৫ বছরে পূর্তিতে ও তাঁর গল্পগুলি নতুনভাবে পাঠক সমাজে চর্চিত হওয়া উচিত।পেশায় চিকিৎসক এই কথাসাহিত্যিক আলোকিত করছেন বাংলা কথাসাহিত্যের ভুবনায়ন ।বাংলা সাহিত্যে ‘প্রবাসী’ পত্রিকার পাতায় “চোখ গেল” গল্প দিয়ে তাঁর অনুপ্রবেশ ঘটে।প্রথম মহাসমর প্রেক্ষিতে চরম আর্থিক মন্দা, প্রেমে-অপ্রেমে বিনষ্ট গ্রাম্য জীবনের সরলতা,নাগরিক জীবনের দ্বন্দ্ব এবং আঙ্গিক গত অভিনবত্ব গল্পগুলির প্রাণ।বিশেষত অণুগুলোর ক্ষেত্রে প্রকরণগত অনন্যাতা লক্ষণীয়।“গল্প লেখার গল্পে” তিনি বলেছেন–“গল্প কি কৌশলে লিখি তা আমি নিজেই জানি‌ না”।বেঙ্গল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত‌  “বনফুলের শ্রেষ্ঠ গল্প” বইটি পাঠে অভিনিবেশ করলে লেখকের চারিত্রিক দৃঢ়তা, সংলাপের অভিনবত্ব ও অনাবিল হাস্যোজ্জ্বল লেখাগুলি এককথায় অন্যন্য।বইটির দীর্ঘ ভূমিকা লিখেছেন সমালোচক জগদীশ ভট্টাচার্য।বইয়ে মোট ৭৬টি গল্প রয়েছে।তাঁর প্রথম গল্প ‘আজান্তে’ যেখানে অফিস ফেরতা লেখক মাইনে পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভাবেন স্ত্রীর জন্য একটা বডিস কিনে নিয়ে যাবেন।এরপর ভাবনায় ছেদ টানে বৃষ্টির অনুষঙ্গ।সে মুহূর্তে গলিতে ঢুকে তাঁর মনে হয়–“অনেকদিন পরে আজ নতুন জামা পেয়ে তার মনে কি আনন্দই‌ না হবে”। গল্পের শেষটি চমৎকার যেখানে গলিতে একটি ভিখারি নিগ্রহের ঘটনা সামনে আসে। পরবর্তী ‘সামাধান’ গল্পে নীহাররঞ্জন ও পাকড়া গ্রামের বাসিনী ক্ষান্তমণির সাথে বিবাহ ও পরবর্তীতে কন্যা সন্তান বুঁচির কথা। একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে সন্তান মৃত্যুর ট্র্যাজেডির মধ্যে দিয়ে শেষ হয় গল্প–“আমি চিঠিটা পড়া শেষ করিয়া বলিলাম,বউ লিখেছে–বুঁচি কাল মারা গেছে।”‘তর্ক ও স্বপ্ন’ গল্পটি বেশ ভিন্নধর্মী যেখানে তর্কের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম তার্কিক বলেন–“মাংস আগে‌ ভাজলে সিদ্ধ করে নিলে সুস্বাদু হয়”।এরপর দ্বিতীয় তার্কিক প্রতিবাদসহ যুক্তি দেন–“মাংস আগে ভাজলে সিদ্ধ হওয়া শক্ত।”সমগ্র গল্পটি একটি হ্যালুসিনেশন বা স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে আবর্তিত। শেষাংশে যখন লেখকের ঘুম ভাঙে ,সাথে স্বপ্নটাও। বিস্মিত লেখক দেখেন ট্রেন থেমে গেছে।‘সুলেখার ক্রন্দন’ গল্পের সূচনাটি এরকম–“সুলেখা কাঁদিয়েছে । গভীর রাত্রি–বাহিরে জ্যোৎস্নার ফিনিক ফুটিতেছে।”সুলেখার এই কান্নার কারণ কি প্রেম?এই কৌতূহল পাঠককে টেনে রাখে।‘ভিতর ও বাহির’ রচনায় ফ্রয়েডীয় চেতনার আলোকে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ছাপ স্পষ্ট।গল্পে লেখক মানব মনের সুনিপুণ ছবি এঁকেছেন–“আমাদের মন সাধারণত!দুই ভাগে বিভক্ত।এক ভাগ বাহিরের–অন্য ভাগ ভিতরের। মনের যে দিকটা বাহিরের তাহা ভদ্র ;তাহা সামাজিক এবং সভ্য।”বনফুলের ‘অমলা’ গল্পে কমলাকে দেখতে আসা পাত্রদের সম্পর্কে অমলার অভিব্যক্তি–“অমলার অভিব্যক্তি এই নবীন আগুন্তকের দিকে এগিয়ে গেল।”‘বিদ্যাসাগর’ নামাঙ্কিত গল্পে চমকিত লেখক বলেন–“একি ,এ যে বিদ্যাসাগর! প্রাতঃস্মরণীয় বিদ্যাসাগর স্বয়ং উপক্রমণিকার জন্মান্তর–রহস্যের ফেরে পড়িয়া ‘নর’ শব্দের রূপ বলিতে পারিতেছেন না! আশ্চর্য ব্যাপার!”’ক্যানভাসার’ গল্পে কাত্যায়নী, ভৈরব ও ক্যানভাসার হীরালালের গল্প। বনফুলের এক অসামান্য গল্প ‘শ্রীপতি সামন্ত’ ।শ্রীমতি সামন্তের ট্রেন যাত্রার বর্ণনা দিয়ে গল্প শুরু হয়। লেখকের অসামান্য উক্তি–“সকলে নেপোলিয়ন নহেন।সামন্ত মহাশয় তো নহেনই।”যে শ্রীমতি সামন্তকে লেখকের মনে হয়েছিল আদ্যোপান্ত সংসারী ও স্বার্থবুদ্ধি সম্পন্ন।সেই শ্রীপতিবাবুই গল্পের শেষে আবির্ভূত হলেন একজন নি:স্বার্থ , পরোপকারী রূপে। বনফুলের ছোটগল্পগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য–মানুষকে সাধারণভাবে যেরকম চরিত্রের মনে হচ্ছে; গল্পের শেষে দেখা যায় জাগলারির খোলশ ছিন্ন করে ভিন্ন স্বভাবের এক মানুষকে বের করে আনেন লেখক। ছেলেবেলার জীবজন্তু পোষার শখ বড়ো বয়স অবধি রক্ষা করতে না পারার হতাশা ধরা পড়েছে–‘কাকের কান্ড’,‘খেলা’,‘গণেশ জননী’ গল্পে। কিছুকাল কবিতা লেখার পরই বনফুল বুঝেছিলেন গল্প রচনার অপরিসীম গুরুত্ব।‘অর্জুন মণ্ডল’ গল্পে রয়েছে মানুষের জীবনের অন্তহীন ট্র্যাজেডির আখ্যান।

গ্রন্থনাম–বনফুলের শ্রেষ্ঠ গল্প
প্রকাশক–বেঙ্গল পাবলিশার্স 
১৪, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট

Comments :0

Login to leave a comment