Dhupguri Co Operative Scam

‘ভূতুড়ে ঋণ’, ধূপগুড়ি সমবায় ব্যাঙ্কে দুর্নীতি, ঘেরাও কৃষকদের

জেলা

কৃষকের ঘাম ঝরানো শ্রমে ভাগ বসাচ্ছে ‘ভূতুড়ে ঋণ’। গরিব কৃষকের অজান্তে তাঁদেরই নাম ও সই জাল করে কোটি কোটি টাকার ঋণ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল বারোঘরিয়া সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে। এই নজিরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে সোমবার জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ধূপগুড়ি শাখা ঘেরাও করে তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন প্রতারিত কৃষকরা। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে এদিন এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়, পরিস্থিতি সামাল দিতে নামাতে হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী।
ঘটনার সূত্রপাত বারোঘরিয়া সমবায় সমিতিকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, ২০২৩ সালে আমন ধান ও পাট চাষের মরসুমে এলাকার কয়েকশো কৃষকের নাম ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ হিসেবে তোলা হয়েছে। অথচ সেই ঋণের ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গ জানতেন না কৃষকরা। সম্প্রতি ব্যাঙ্ক থেকে বকেয়া ঋণের নোটিশ বা খবর আসতেই চক্ষু চড়কগাছ হয় তাঁদের। দেখা গেছে, কারও নামে ৩৬ হাজার, কারও নামে ৮০ হাজার, এমনকি কারও কারও নামে এক লক্ষ টাকারও বেশি ঋণ বকেয়া দেখানো হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, তাঁরা কোনোদিন ব্যাঙ্কে গিয়ে ঋণের আবেদন করেননি, সইও করেননি। তাঁদের দাবি, সই জাল করে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
বিক্ষোভরত কৃষকদের প্রশ্ন গ্রাহকের উপস্থিতি এবং যাচাইকরণ ছাড়াই কীভাবে জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ধূপগুড়ি শাখা এই বিপুল পরিমাণ ঋণ মঞ্জুর করল? কৃষকদের দাবি, সমবায় সমিতি এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের একাংশের যোগসাজশ ছাড়া এই মাপের জালিয়াতি অসম্ভব। এদিন ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতারিত কৃষকেরা স্লোগান তোলেন, ‘‘কৃষকের টাকা লুট করা চলবে না’’, ‘‘জালিয়াতি কারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করো’’।
বিক্ষোভ দীর্ঘক্ষণ চলায় এবং উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ধূপগুড়ি থানার পুলিশ। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কৃষকদের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে এই ‘ভূতুড়ে ঋণ’ বাতিল করতে হবে এবং এই দুর্নীতির সাথে যুক্ত প্রত্যেককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দাবি না মানলে আগামীতে মহকুমা শাসক এবং জেলা শাসকের দপ্তর ঘেরাও করে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রতারিত কৃষকরা।
চাপের মুখে পড়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছে যে, প্রাথমিক তদন্তে নথিপত্রে একাধিক অসংগতি ধরা পড়েছে। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট নথিপত্র এবং খাতাপত্র সিল করা হয়েছে। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের দাবি, আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং বিভাগীয় তদন্ত চলছে। তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, দুর্নীতির শিকড় কতদূর? গরিব কৃষকের নামে কোটি কোটি টাকা লুটের এই খেলায় পর্দার আড়ালে বড় কোনো ‘মাথা’ রয়েছে কি না, এখন সেটাই দেখার।

Comments :0

Login to leave a comment