মুক্তধারা : বই
শ্রমজীবী মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের আলোকলিপি
পার্থ প্রতিম নাগ
যেমন চলে আাসছে তেমনভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।শোষণ অবিচার আর সহ্য করার নয়।সারা দুনিয়া জুড়েই
উৎপাদন ও পরিষেবা ক্ষেত্রে যুক্ত শ্রমজীবী মানুষ ও পরিষেবা দাতারা সোচ্চারে এই বক্তব্য তুলে ধরছেন নিজের অবস্থানে
দাঁড়িয়ে এবং রাজ্য-দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও।এর কারণ,বিশ্বায়ন পরবর্তী পর্বে দেখা যাচ্ছে অন্যান্য
দেশের মতো ভারতবর্ষেও শ্রমজীবী বিরাট সংখ্যক মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন ক্রমেই। শ্রমিক আন্দোলন এবং তার সঙ্গে
যুক্ত নানাবিধ সমস্যা এখন বহুমাত্রিক।এই পরিস্থিতি নিয়ে এখনই জরুরী দরকার হয়ে পড়েছে আর কালক্ষেপ না করেই
বিস্তৃত আলোচনা ও বিশ্লেষণ করার। এটা দাবিও বটে। সেই যথার্থ দাবিকে সমীহ জানিয়ে বিগত চার দশক ধরে একজন
ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী তথা সংগঠক হিসাবে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে যা চলছে তা রুখতে বিকল্প ভাবনার দিক
থেকে কিছু অভিজ্ঞতালব্ধ সত্যচয়ন করতে চেয়ে অতি সম্প্রতি একটি মূল্যবান সঙ্কলন বইয়ের আকারে লিখে ফেলেছেন
সিআইটিইউ রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য দেবাঞ্জন চক্রবর্তী।বইটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বিকল্প পথের খোঁজে’।এখানে
সেই বইটিঁ গ্রাহ্যতা এবং এই সময়ে তার কার্যকারিতা এবং সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটা মূল্যায়নের চেষ্টা করা হলো।
এই বইটি শ্রমজীবী সর্বস্তরের মানুষ তা তিনি সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রের সংগঠিত আবার অসংগঠিত হোন অবসরপ্রাপ্ত
হলেও প্রত্যকের কড়াই আন্দোলনে সম্যক পরিস্থিতি বুঝতে সহায়িকার ভূমিকা অবশ্যই পালন করবে। বইটির মোট ১৯টি
অনুচ্ছেদের সবকয়টিই প্রাসঙ্গিক।এখানে কোনো বর্ণ, কোনো শব্দ, কোনও বাক্যই অতিরিক্ত নয়।বলা যায় পাঠক যখন
বইটি হাতে তুলে নেবেন পড়ার জন্য বা নিজেকে ও নিজের শ্রেণিমিত্রদের সমৃদ্ধ করতে তখন মনে হবে আলোচনা আরও
কিছু বিস্তৃত হলেও হতে পারতো। এই উপলব্ধি যে অমূলক নয় তা বুঝেই লেখক তাই নিজে থেকেই শুরুতে ভূমিকা প্রসঙ্গে
আমার কৈফিয়ৎ ঢংয়ে কিছু কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন,এই বইয়ে বাস্তবে যা তুলে ধরা হয়েছে তাহলো : বিগত চার
দশকের বেশি সময় ধরে ট্রেডইউনিয়ন ক্ষেত্রে কর্মী ও সংগঠক হিসাবে সঞ্চিত অভিজ্ঞতার ফলিত চর্চা। এর আগে বিভিন্ন
সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাংগঠনিক প্রকাশনায় প্রকাশিত লেখাগুলির একটা সুবিন্যস্ত আলেখ্য। যা তিনি উপস্থাপন
করেছেন ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী ও সংগঠকদের নিজেদের মধ্যে পরিস্থিতির বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বোঝাপড়া তৈরি করতে। এই
বোঝাপড়া হলো কি করতে হবে তারই নিরিখে।বইটিঁর মুখবন্ধ লিখেছেন সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সাধারণ সম্পাদক
অনাদি সাহু। সেখানে তিনি বলেছেন,যে ভয়াবহ সঙ্কট এখন বর্তমান তার মোকাবিলায় বিকল্প পথের সন্ধানে ব্রতী হতে
বইটি আলোচনার পরিসরকে মুক্ত করেছে।তাই বইটি গ্রহণ করতে হবে।মুখবন্ধেই সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির
সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছেন,এই বইটি ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন জ্ঞাতব্য বিষয় নিয়ে তথ্য বহুল লেখার
সম্ভার যা বহুদিন পর্যন্ত আগামীর পথে লড়াই সংগ্রাম পরিচালনায় সহায়িকা হিসাবেই সক্রিয় থাকবে।
বইটির প্রথম অনুচ্ছেদ শ্রম দাসত্বের শ্রম কোড,কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা,ব্যাঙ্ক-বীমা,শেয়ার বিক্রি কার স্বার্থে,ঠিকা প্রথা ও
ঠিকা শ্রমিক,অসংগঠির ক্ষেত্রের শ্রমজীবী ও শিশু শ্রমিক,তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবা, বামফ্রন্ট সরকারের শ্রমনীতি, পশ্চিমবঙ্গ
বঞ্চনার প্রতীক, সাধারণ ধর্মঘট, নির্মাণ শিল্প ও শ্রমিক, মূল্যবৃদ্ধি,বেকারী,পরিযায়ী শ্রমিক বিশ্বায়ন, সংবাদ মাধ্যম ও
কর্মীরা, সমবায়, মেধাজাত সম্পত্তির অধিকার, বিকল্প পথের খোঁজে ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে।
তার পরেও রয়েছে বিবিধ। এই বইটি আন্দোলনের কর্মী,সংগঠক সকলেরই উচিত নিজস্ব আয়ত্তে রাখার।এই বই-ই
আগামীর সংগ্রামে অন্যতম হাতিয়ার।
বইটি ছাপা হয়েছে সত্যযুগ প্রেস থেকে। প্রচ্ছদ অঙ্কনে নীলাঞ্জন নিয়োগী।
বিকল্প পথের খোঁজে
দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। প্রকাশক : লেখক। ৫৫ সূর্যসেন স্ট্রিটি। কলকাতা- ৭০০ ০০৯। ২০০ টাকা
Comments :0