MUKTADHARA : PROBANDHAYA : BAGAJATINER MAA : TAPAN KUMAR BIRAGHYA : 21 AUGHST 2024, WEDNESDAY

মুক্তধারা : প্রবন্ধ : বাঘাযতীনের মা : তপন কুমার বৈরাগ্য : ২১ আগস্ট ২০২৪, বুধবার

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  PROBANDHAYA  BAGAJATINER MAA  TAPAN KUMAR BIRAGHYA  21 AUGHST 2024 WEDNESDAY

মুক্তধারা : প্রবন্ধ

বাঘাযতীনের মা
তপন কুমার বৈরাগ্য

আমরা বিপ্লবীদের কথা জানি।কিন্তু ক'জন জানি
বিপ্লবীদের মায়ের কথা।মায়ের জন্যই আদর্শ ছেলেমেয়ে
তৈরি হয়। আজ বাঘাযতীনকে আমরা পেয়েছি তাঁর
মায়ের জন্য।বাঘাযতীনের আসল নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।
মা আদর করে ডাকতেন যতীন বলে।১৮৭৯খ্রিস্টাব্দের ৭ই
ডিসেম্বর বাংলাদেশের কুষ্টিয়াজেলার কুমারখালি থানার অন্তর্গত মামার বাড়ি কয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
যুগান্তর দলের প্রধান নেতা হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে উড়িষ্যার
বালেশ্বরে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ই সেপ্টেম্বর মারা যান। 
হাতে কেবল একটা ছোরা নিয়ে বাঘ মেরেছিলেন বলে
তাঁর নাম হয় বাঘাযতীন।
ছোটবেলা থেকে তাঁর দুর্দান্ত অভিযানে তাঁর মা কোনোদিন
বাধা দেয় নি।পাঁচ বছর বয়েসে পিতা উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের
মৃত্যু হলে মা শরৎশশী খুব বিপদে পড়েন। বাঘাযতীনরা
দুই ভাইবোন। বাঘাযতীনের চেয়ে দিদি বিনোদবালা দুই
বছরের বড়। পাঁচবছরের যতীন এবং মেয়ে বিনোদবালাকে
নিয়ে চলে এলেন বাপেরবাড়ি কয়া গ্রামে।এতোদিন শরৎশশী
স্বামীর ঘর ঝিনাইদহে ছিলেন। এখন স্বামীর কোনো
নিকট আত্মীয় না থাকার জন্য তিনি চলে আসতে বাধ্য
হন। মামা ছিলেন বসন্ত কুমার চট্টোপাধ্যায় ।খুব ভালো
লোক ছিলেন।বোনের অসহায় অবস্থা দেখে তিনি সকলের
অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান ব্যবস্থা করেন।সাথে সাথে ভাগ্নের শিক্ষারও
ব্যবস্থা করেন।
মা ছেলেকে শিখিয়েছিলেন দেশের নির্ভীক চিন্তা,দেশের মঙ্গলের
জন্য দেশের কাজে ঝাঁপ দেওয়া।মানুষের সেবা।দেশ ও দশের সেবা।
রাজা হরিশচন্দ্রের ত্যাগ,প্রহ্লাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস,রামচন্দ্রের
পিতৃভক্তি,অর্জুনের বীরত্ব,তিনি ছেলেকে প্রতিদিন
এদের কাহিনি শুনাতেন।তাইতো বাঘাযতীনের মধ্যে দেশপ্রীতি
সত্যিকারের জাগ্রত হয়েছিল। মা ছিলেন একজন স্বভাব
কবি।সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখতেন।ছেলেকে শুনাতেন।
ছেলে কবিতাগুলো শুনে মায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠতো।
মা গরিব দুখীর সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
তিনি যেন মাদার টেরিজা।কেউ অনাহারে আছেন ,তিনি
নিজের খাবার তাঁর মুখে তুলে দিতেন।তিনি শিক্ষিত ছিলেন
বলে গ্রামের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন।
বাঘাযতীন তখন চাকরীসূত্রে মুজাফফরপুরে। কয়াগ্রামে
দেখা দিয়েছে কলেরা। সালটা ১৮৯৯।
শরৎশশী দেবী নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন কলেরা
রোগীদের সেবায়।কতো অসুস্থ রোগী তাঁর সেবায় আরোগ্য
লাভ করেছে। শরৎশশীদেবীর মুখে হাসি ফুটেছে।
কিন্তু একদিন তার মধ্যেই দেখা দিল ভয়ংকররূপে কলেরা।
অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো গেল না। ছেলের কাছে
খবর গেল।ছেলে ছুটে এলেন। মায়ের জন্য তাঁর গর্বে বুক ফুলে
উঠলো।মায়ের সমাধির উপর টপ টপ করে তাঁরচোখের
জল ঝরে পড়তে লাগল। 


 

Comments :0

Login to leave a comment