MUKTADHARA : PROBANDHAYA : TEACHERS DAY : PALLAV MUKHOPADHAYA : 4 SEPTEMBER 2024, WEDNESDAY

মুক্তধারা : প্রবন্ধ : ইতিহাসের আলোকে শিক্ষক দিবস : পল্লব মুখোপাধ্যায় : ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  PROBANDHAYA  TEACHERS DAY  PALLAV MUKHOPADHAYA  4 SEPTEMBER 2024 WEDNESDAY

মুক্তধারা : প্রবন্ধ

ইতিহাসের আলোকে শিক্ষক দিবস
পল্লব মুখোপাধ্যায়

৫ অক্টোবর তারিখটি বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। জার্মানি, ইংল্যান্ড,
রাশিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়ার মতো কয়েকটি দেশে ওই দিন শিক্ষক দিবস পালন করা হয়।
এছাড়া বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে আলাদা আলাদা তারিখে শিক্ষক দিবস পালিত হয়।
২৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক দিবস পালিত হয় লিবিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব
আমিরশাহির মতো দেশে। শিক্ষকদের অবদানকে সম্মান জানাতে ১৯৯৪ সাল থেকে ৫
অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন শুরু করে ইউনেস্কো। ১৯৪৪ সালে আমেরিকার
মৈটে ওয়ায়েটে উডব্রিজ সর্বপ্রথম শিক্ষক দিবসের পক্ষে সওয়াল করেন। পরে ১৯৫৩
সালে মার্কিন কংগ্রেস তাতে সায় দেয়। ১৯৮০ সাল থেকে ৭ মার্চ শিক্ষক দিবস হিসেবে
পালন করা শুরু হয়। কিন্তু পরে মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার এটি পালিত হতে থাকে।
সিঙ্গাপুরে সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়।
আফগানিস্তানে ৫ অক্টোবরই এই দিনটি পালিত হয়।
বিশ্বব্যাপী ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালিত হলেও, ভারতে এই দিবসটি পালিত হয় ৫
সেপ্টেম্বর। ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি তথা প্রখ্যাত
শিক্ষাবিদ ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মজয়ন্তী ৫ সেপ্টেম্বর। সেদিনই শিক্ষক
দিবস পালন করা হয়। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়ার উদ্দেশে শিক্ষকদের অবদানের প্রতি
কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্যই এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৬২ সালের
৫ সেপ্টেম্বর থেকে ডঃ রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।
১৯৬২ সালে ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়েছিলেন। শোনা
যায়, কয়েকজন ছাত্র, বন্ধুবান্ধব প্রখ্যাত শিক্ষাবিদের জন্মদিন পালন করতে
চেয়েছিলেন। সেই সময় রাধাকৃষ্ণণ জানিয়েছিলেন, তাঁর জন্মদিন আলাদাভাবে পালন না
করে সেই দিনটি দেশের সব শিক্ষকের জন্য পালন করা হলে তিনি গর্ববোধ করবেন। এই
আবেদন শিক্ষকদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও সম্মানকেই প্রকাশ করে। তাই ১৯৬২
সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ড. রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা
হতে থাকে। তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদেরই
শিক্ষক হওয়া উচিত।
ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ১৮৮৮ সালের ৫সেপ্টেম্বর তামিলনাডুর তিরুট্টানিতে এক
দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম
উপরাষ্ট্রপতি (১৯৫২-৬২ খ্রি:) এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি (১৯৬২-৬৭ খ্রি:)। তিনি

একাধারে রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও অধ্যাপক | এই শান্ত মানুষটি ছাত্রজীবনে অত্যন্ত
মেধাবী ছিলেন। জীবনে কোনও পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় হননি। বিভিন্ন বৃত্তির মাধ্যমে
তাঁর ছাত্রজীবন এগিয়ে চলে। ১৯০৫ সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্বের দরবারে তিনি অতি জনপ্রিয় দার্শনিক
অধ্যাপক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ১৯৫৪ তে ভারতরত্ন সম্মান পান। প্রথম জীবনে
তিনি মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন (১৯১৮)। এমনকি তিনি এই বঙ্গের
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেছেন। তিনি দেশ-বিদেশে বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপনার আমন্ত্রণও পেয়েছেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়
লেখালিখি করেছেন। তাঁর গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘দ্য ফিলোজফি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর’
এবং ‘দ্য রিইন অফ রিলিজিওন ইন কনটেম্পোরারি ফিলোজফি’ উল্লেখযোগ্য |
ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের বাবা তাঁর ইংরেজি শিক্ষা ও স্কুল যাওয়ার বিরোধী ছিলেন।
ড. রাধাকৃষ্ণণের বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে পুরোহিত হোক। মেধাবী ড. রাধাকৃষ্ণণ নিজের
পড়াশোনার একটি বড় অংশই ছাত্রবৃত্তির সাহায্যে সম্পন্ন করেছিলেন। ড. রাধাকৃষ্ণণ
পড়ুয়াদের মধ্যে এতখানিই জনপ্রিয় ছিলেন যে, তাঁর কলকাতা যাওয়ার সময় তাঁকে ফুলে
সাজানো গাড়িতে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
প্রখ্যাত অধ্যাপক এইচ. এন. স্পেলডিঙ্গ ড. রাধাকৃষ্ণণের ভাষণে এতখানি প্রভাবিত
হয়েছিলেন যে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর জন্য চেয়ার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অবদানের জন্য ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট
উপাধিতে ভূষিত করে।
শিক্ষক দিবস শুধুমাত্র উদযাপন এবং শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত
একটি দিন নয় | শিক্ষকরা আমাদের জীবনে যে গভীর প্রভাব ফেলেছেন তা
বিনম্রচিত্তে স্মরণ করার এ এক বার্ষিক সুযোগ। বর্ণপরিচয় থেকে উচ্চশিক্ষা,
প্রতিটি পাঠের নেপথ্যে একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আছেন, যিনি আমাদের
পথপ্রদর্শন করেন, আমাদের ওপর বিশ্বাস করেন এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য
বিনিয়োগ করেন। শিক্ষকরা আমাদের পরামর্শদাতা, গাইড, আস্থাভাজন এবং প্রায়শই
আমাদের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি । একজন সফল মানুষের পিছনে শিক্ষকের যে
কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে তা নতুন করে বলার কিছু নেই। শিক্ষক মহাশয় শুধু যে
শিক্ষাদানই করেন তাই নয়। তিনি একজন শিক্ষার্থীকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ
দেন, ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে
একজন আদর্শ মানুষ হওয়ার শিক্ষাও দেন।

গোটা দেশ এই দিনটিতে সেই মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের সশ্রদ্ধচিত্তে সম্মাননা
জানায় |

 

Comments :0

Login to leave a comment