প্রবন্ধ
মৃত্যু গুহা
বিশাল নাগ
মুক্তধারা
ডিসেম্বর মাসের শেষে সবাই জেঠুর সাথে রক-ক্লাইম্বিং গেল, বাবা কিছুতেই আমায় যেতে দিল না। আমি মন খারাপ নিয়ে বাড়িতে শুয়ে থাকি। জেঠু আমায় কতগুলি খবরের কাগজ-কাটিং দিয়ে বলল – মন খারাপ হবে জানি, এই কাগজগুলি পড়ে অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে কিছু লিখতে পারিস কিনা দেখ।
কাগজগুলি নাড়াচাড়া করতে গিয়ে চমকে উঠি। গত জুন-জুলাই ২০১৮-তে থাইল্যান্ডের এক গুহায় আটকে পড়া ১২ জন স্কুল-ছাত্র ফুটবলার ও তাদের তরুণ কোচ-কে উদ্ধার করে আনার সংবাদ ও ছবির পেপার কাটিং।
জেঠু আমাদের জন্য এমন সব চমকপ্রদ খবরের পেপার কাটিং সংগ্রহ করে রাখে, পরে আমাদের পড়তে দেয়। যাহোক এই মরণ গুহা এবং তার থেকে উদ্ধার করে আনার লড়াই নিয়ে লিখছি।
থাইল্যান্ডের বিখ্যাত পাটায়া উপকূলের কাছে থামলুয়া গুহা কমপ্লেক্স, বছরে অন্যান্য সময়ে বেশ শুকনো থাকে, তবে বর্ষায় হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর মরণ গুহা, অন্য সময়ে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের জন্য আদর্শ।
বর্ষা বা বৃষ্টির কোন নাম গন্ধ না থাকায় ১১-১৬ বছরের ১২ জন ফুটবলারদের নিয়ে তাদের কোচ অভিযান শুরু করে, কিন্তু হটাৎ প্রবল বৃষ্টিতে গুহা জলে ভেসে যায়, থকথকে কাদায় ভরে যায়, ঘন অন্ধকারে বন্দী হয়ে পড়ে ছেলেগুলি। ২৩-শে জুন থেকে নিখোঁজ, কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, শেষে গুহায় উদ্ধার কাজে অভিজ্ঞ “ব্রিটিশ কেভ রেসক্যু কাউন্সিল’ এই উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। তারাই দু-সপ্তাহের মাথায় খুঁজে পায় ক্ষুধার্ত-ক্লান্ত-আতঙ্কে বিধ্বস্থ ছেলেদের। কিন্তু গুহার কাদা-জল ভেঙ্গে উদ্ধারকারীরা এদের কাছে পৌঁছতে পারছে না, এদিকে বর্ষা নেমে যাওয়ার আশঙ্কা, সেটা হলে চার মাস তাদের বন্দি থাকতে হবে, সে সময়ে তাদের জল-খাবার-আলো কিভাবে পৌঁছান হবে?
গুহাটা আশ্চর্য রকমের, অনেকগুলি জায়গা খুবই সঙ্কীর্ণ, অনেকটা পথ সাঁতরে, ডুব সাঁতার দিয়ে যেতে হবে। শেষ ৪০০ মিটার শুধু সাঁতরে পৌছতে হবে। উদ্ধারের জন্য অনেকগুলি বিকল্প পথের কথা ভাবতে হয়েছিল। ১৩জন বিদেশী দক্ষ ডুবুরি, ৫জন থাইল্যান্ডের সেনা ডুবুরি, তাদের সাহায্যের জন্য ৭০ জনের টিম। উদ্ধার অভিযানের কতগুলি ছবি জেঠুর দেওয়া পেপার কাটিং গুলিতে পেয়েছি।
মূলত হেঁটে , দড়ি ধরে, অক্সিজেন মাস্ক পরে ডুব সাঁতার দিয়ে আসতে হয়েছে, দেওয়ালে লাগানো দড়ি ধরে এগোতে হয়েছে, অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ অংশটা পেতে ডুবুরিদের নিজেদের অক্সিজেন সিলিন্ডার খুলে নিতে হয়েছে।
সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন হয়ে এই উদ্ধার কাজের দিকে নজর রেখেছে, শেষে সবাই এই মুত্যু-গুহা থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে এলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
Comments :0