গল্প
ছিন্নপাতায় আঁকা জীবন
মনীষ দেব
মুক্তধারা
সে গেছে হেটে — কোপাই-এর পাড় ধরে, রাঙামাটির পথে। সে পথ ধরেই কোনও বোষ্টমী গেয়ে গেছে একতারায় বাঁধা তার সুর। কোপাই-এর জলে কতবার সূর্য গেছে পাটে, জীবন রাখেনি হিসাব। গোধুলির ধুলি উড়িয়ে — ধবল-কালো-রাঙীগাইরা ফিরেছে — যুগীপাড়ার পথ ধরে। ভোরের আলো ফোটার আগে হয়তো কোনও কালো কৈবর্ত্য মাছ ধরতে গেছে কোপাই-এর খাঁড়িতে। দীনু মাঝির ডিঙিখানি গ্রীষ্মের নদীর চড়ায় বাঁধা পড়ে আছে। রুক্ষ উষর রাঙামাটির দেশে শিমুল-পলাশে রঙীন আকাশ আর মলিন ধূসর ধুলোমাখা এক ভবঘুরের হাতে রাঙামাটি। তাকে কেউ বাঁধেনি শেকলে — না জীবনে — না কল্পনায় — না সৃষ্টিতে।
সেই কুমোড়পাড়া — সেই পুতুল গড়া — মাটির ঘর — খড়ের চালা — খোয়াইয়ের পথে ছুটে চলা গরুর গাড়ি। জীবন যেথা ছবি এঁকে গেছে। সেই ছিন্নপাতা থেকে উঠে আসা — রুদ্রাক্ষের মতো ক্ষত-বিক্ষত-কঠোর এক জীবনের কি নির্মল পথচলা।
তোমার সাথে যেতে চাই — শিমূলের বনে, যেখানে ক্লান্ত দুপুরের কোকিল ডেকে যায় তুমি ছবি আঁকবে তাই। রাঙা পলাশের বুকে সেই ছেলেটা আসবে বলে — ফুটে আছে পলাশ আজও। সে গেছে মহুয়ার মাতাল সমীরণে — গাইছে বিশু পাগলের গান —
আমায় পরশ ক'রে প্রাণ সুধায় ভ'রে
তুমি যাও যে সরে —
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক ....
— রামকিঙ্কর।
Comments :0