গল্প
শব্দাশন
(আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে)
মৃদুল পাল
মুক্তধারা
রতন স্কুলের দিন থেকেই সকালবেলা ঘরের আগ-বারান্দায় শরীর-চর্চার অনুশীলন করে।এখনো তার এই প্রাতঃ-অভ্যেসের বদল হয়নি।এখন তার বয়েস দুকুরি।এখনো সে শীর্ষাসন,ত্রিকোণাসন,চন্দ্রাসন,প্রাণায়াম করেন।সেদিন সকালবেলা সে হস্তপদাসন করছে,আর তার বছর দুয়েকের ছেলে হামাগুড়ি কেটে তার পায়ে চাপর মারছে।
আজ একুশে জুন।আন্তরাষ্ট্রীয় যোগ দিবস।অন্যান্য দিনের মতন আজ সকালেও রতন বারান্দায় মাদুর পেতে বসেছে।দু-একটা ব্যায়াম করার পর সে শব্দাসন শুরু করে।এই আসনে সে দু চোখ বন্ধ করে,মাটিতে ধ্যানের মুদ্রায় বসে।তার পর প্রথম দু মিনিট সে তার ঘরের আভ্যন্তরীন থেকে ভেসে আসা শব্দগুলিকে শোনার যত্ন করে।যেমন ঘড়ির টিক-টিক শব্দ, বয়স্ক বাবার ঘরে সারারাত ধরে ঘুরতে থাকা ক্লান্ত সিলিং ফ্যানের ডাক ইত্যাদি।দু মিনিট পর সে ঘরের পরিধি অতিক্রম করে বাইরে কান পাতে।গ্রামীণ পাখির শিস,রাস্তার বাইকের ভ্রাম্যমাণ শব্দ,পাথারে চড়াতে নিয়ে যাওয়া গরুর ডাক এই শব্দগুলো এক এক করে শুনে।এটাই হলো শব্দাশনের নিয়ম।
কিন্ত সেদিন রতন কিছুতেই নিমীলিত নেত্রে শব্দাসন করতেই পারছিলো না।তার চোখের পাতা পির পির করছে অনবরত।জোর জবরদস্তি বালিশ চাপা দিয়ে খুন করার মতন সেও চোখের পাতা দুটি বন্ধ করতে চেষ্টা করছে।পাশের বাড়ির টিভি থেকে প্রধানমন্ত্রী সকল দেশবাসীদের প্রতিদিন যোগ প্রাসঙ্গিক বার্তা ভেসে আসছে।এই বার্তা যতই তার কর্ণগহ্বরে প্রবেশ করছে ততই তার চোখের পাতা চঞ্চল হয়ে উঠে।শেষমেশ সে চোখের পাতা খুলে দেয়।মধ্যরাতেও সে দুটো চোখের পাতা এক করতে পারেনি।অর্ধাহারে।যাদের স্বপ্ন অপুষ্টিতে ভোগে তারা সকাল বেলা কিভাবে যোগাসনে বসবে?কিভাবে?
Comments :0