STORY — PALLAV MUKHAPADHAYA | MOHUNBAGAN — MUKTADHARA | MONDAY 29 JULY 2024

গল্প — পল্লব মুখোপাধ্যায় | মোহনবাগান — সোনালী গর্বের অতীত | মুক্তধারা — সোমবার ২৯ জুলাই ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

STORY   PALLAV MUKHAPADHAYA  MOHUNBAGAN   MUKTADHARA  MONDAY 29 JULY 2024

গল্প

মোহনবাগানসোনালী গর্বের অতীত
পল্লব মুখোপাধ্যায়

মুক্তধারা

অমূল্য শীল ছাপাখানার কর্মী। সামনেই শারদোৎসব আসছে। আর বাঙালির
শারদোৎসব মানেই শারদ সংখ্যা প্রকাশ। তাই জুলাই-এর শেষে এখন প্রেসে বেশ চাপ।
কিন্তু ভাগ্নে বাবু কদিন ধরেই বলছে মামা যুবভারতীতে খেলা দেখাতে নিয়ে চলো।
অমূল্যবাবু ছাপোষা মানুষ। দুপুরে টিফিনের সময় রুটি খেতে খেতে সবার হাত ঘুরে আসা
কাগজের পাতায় চোখ রেখেই তাঁর মাঠ পরিক্রমা। বাড়ি আর প্রেস এই চৌহদ্দির মধ্যেই
কাটে তাঁর দিন। সময় কোথায় বাবুকে নিয়ে খেলা দেখতে যাওয়ার? কিন্তু বাবু
নাছোড়বান্দা। অযাচিত ভাবেই সেদিন দুটি টিকিট জুটে গেলো অমূল্যবাবুর। পাড়ারই
একজনের সুবাদে শেষমেশ বাবুকে নিয়ে মাঠে পৌঁছলেন তিনি। এত বড় মাঠ, এত দর্শক,
এত চিৎকার, রঙিন গ্যালারি। গোলের পরে মাঠ জোরে চিৎকার শুধুই ‘সুহেল-সুহেল’।
কিন্তু অমূল্যবাবুর মানসপটে ভেসে ওঠে কতগুলি কথা। অবশ্যই সংবাদপত্রের পাতা
থেকেই তাঁর এই সংগ্রহ।
১৯১১ সালে প্রথম ভারতীয় ফুটবল ক্লাব হিসেবে ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন
(আইএফএ) শিল্ড-এর মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব
অর্জন করে মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব। মোহনবাগান ইস্ট ইয়র্কশায়ার
রেজিমেন্ট দলকে ২-১ গোলের ব্যবধানে পরাস্ত করে। ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টএর
খেলোয়াড়রা ফুটবলের উপযোগী পোশাক ও ক্রীড়াসামগ্রী নিয়ে মাঠে নামলেও
মোহনবাগানের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই খেলেন খালি পায়ে। ১৯১১ সালে ভারত ব্রিটিশ
ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রটি ছিল ব্রিটিশদের আধিপত্যের
অনেকগুলি অঞ্চলের মধ্যে একটি। ব্রিটিশ দলগুলি এই শিরোপা একচেটিয়া অধিকার
করেছিল। যখন মোহনবাগান ক্লাবের ‘অমর একাদশ’ ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে
পরাজিত করে, তখন এটি নিছক একটি ফুটবল ম্যাচ ছিল না, এটি ছিল ব্রিটিশ
আধিপত্যের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বিবৃতি। এই বিজয় ভারতীয়দের মধ্যে গর্ব ও
ঐক্যের অনুভূতি জাগিয়েছিল। দেখা দিয়েছিলঔপনিবেশিক আধিপত্যকে জয় করার
সম্ভাবনার ইঙ্গিত। দিনটি ছিল ২৯ জুলাই, ১৯১১।

অধিনায়ক শিবদাস ভাদুড়ী ও অভিলাষ ঘোষ মোহনবাগানের পক্ষে গোল করেন। ওই
দলের স্ট্রাইকার জিতেন্দ্রনাথ (কানু) রায় লিখেছেন, চূড়ান্ত বাঁশি বাজানোর পরে মাদুর,
টুপি, রুমাল, ছাতা এবং লাঠিগুলি নেড়ে বাতাসে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল এবং প্রচণ্ড উল্লাসে
মাটি কেঁপে উঠেছিল। যেন জনসাধারণ পাগল হয়ে গেছে। এই কৃতিত্বের জন্য মানুষের

অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন খেলোয়াড়রা। বাস পরিচালকরা বলেছিলেন এই খেলোয়াড়দের
ভাড়া লাগবে না। মিষ্টি বিক্রেতা দ্বারিক ঘোষ তাঁদের দোকানে খেলোয়াড়দের খাওয়ার
আমন্ত্রণ জানান । জবাকুসুম বিনামূল্যে খেলোয়াড়দের সুগন্ধি তেল উপহার দেবে বলে
ঘোষণা করে । সেন-রালে খেলোয়াড়দের সাইকেল উপহার দেয়। স্বদেশী পণ্যের পক্ষে
বিদেশী পণ্য বয়কট করা হচ্ছিল এবং শিল্ড বিজয়ের সাথে আবেগ উচ্ছ্বসিত হয়েছিল।
আবারও এক ২৯ জুলাই আসছে। অমূল্যবাবুর মনে হল কারা যেন চিৎকার করছেন
‘শিবদাস-শিবদাস’, ‘অভিলাষ-অভিলাষ’। গর্বের আনন্দাশ্রু অমূল্যবাবুর দুচোখে।
ভাগ্নে বাবুর হাত ধরে মাঠ ছাড়তে ছাড়তে ভিড়ের স্রোতে মিশে যেতে যেতে ভিজে ওঠা
চোখের পাতা মুছে নিলেন অমূল্যবাবু।

Comments :0

Login to leave a comment