গল্প
আনতে চলেছি লাল টুকটুকে দিন
সৌরভ দত্ত
মুক্তধারা
বিপ্লব কি তাহলে শেষ হয়ে গেল শম্ভুদা!কথাটা শেষ করেই কনিষ্কের দৃষ্টি গেল শম্ভুদার দিকে।পরনে সাদা পাজামা,চেয়ারে বসে একহাতে গণশক্তি’র সম্পাদকীয় কলমে নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে আছেন শম্ভুদা। বাঁ’হাতে চায়ের কাপ।কনিষ্কের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চমক ভাঙল শম্ভুদার।কাগজ থেকে ঈষৎ চোখ সরিয়ে শম্ভুদা বলল–কি যে বলিস! বিপ্লব কি শেষ হয় রে বোকা!ওটা একটা সংগ্রাম যা নিরন্তর চলতেই থাকে। এলাকায় তাত্ত্বিক কমরেড দীননাথ মুখার্জিকে সবাই শম্ভুদা নামেই চেনে।স্বয়ংভূ উদ্ভাবনী ক্ষমতা থেকেই আট থেকে আশি সকলেই ওনাকে শম্ভুদা নামেই ডাকে।একজন কট্টর কমিউনিস্ট, হার্ডকোর সিপিএম।তার কাছ থেকেই ছোটবেলায় সমাজ বদলের পাট নিয়েছিল কনিষ্ক।পুরাশ কলেজে একসময় চুটিয়ে ছাত্র রাজনীতি করত।শম্ভুদার মুখেই সে শুনেছে লেখক,শিল্পীদের কাজ চেতনায় শান দেওয়া–পুশকিনবাদ
(কলাবৈকল্যবাদ) বনাম চেরনাই শেভক্সিবাদ (সমাজবাদ) প্রসঙ্গে বামপন্থী লেখক-শিল্পীদের দ্বিতীয় অর্থাৎ মার্কসবাদী শিবিরে অবস্থানের কথা, কিউবার বিপ্লব, ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের কথা।সন্ত্রাস,ভোট লুটের জন্য বেশ কয়েকটি নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির পরাজয়ের খন্ড চিত্রগুলো ইতিমধ্যে অভিঘাত সৃষ্টি করেছে কনিষ্কের মনের মধ্যে। পূর্বের রাজনীতির সাথে বর্তমান রাজনীতির নগ্নতার বৈশ্বিক বিশ্বায়নকে সে মেলাতে পারে না।তাই লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগের দিন সাতসকালে এসে হাজির হয়েছে কমরেড শম্ভুদার উঠোনে। তার মাঝেই কনিষ্কর ফোনে বার দু’য়েক অজানা নম্বর থেকে বিজেপি-র নির্বাচনী ক্যাম্পেইন সমন্বিত মোদিবাবু ও আধিকারী মশাইয়ের গলা ভেসে এল-“হামারা ভাইও আউর বেহেনা ,ইয়ে চুনাও আপকা চুনাও হে।জান বুঝ কর মতদান কি জিয়ে, ভারতীয় জনতা পার্টি কো জিতাইয়ে”।গত কয়েকদিনে বিভিন্ন নম্বর থেকে এরকম ফোনের ঠ্যালায় তার মতো এলাকায় অনেকেই অতিষ্ঠ।ট্রু কলারে কনিষ্ক দেখল–বাবুলাল মারান্ডি ও অধিকারী মশাইয়ের নাম।শম্ভুদা বলল –ওসব ওদের আইটিসেলের কেরামতি। এভাবেই মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।ছোট কিছু কাগজে, লিটল ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠায় কবিতা ও ফিচার-গল্প লেখে কনিষ্ক। শম্ভুদা চায়ে হালকা চুমক দিয়ে বলে–শ্রীরামপুরে এবার দিপ্সীতা হাসতে হাসতে জিতছে, আর যাদবপুরে সৃজনকে তো রোখাই যাবে না, ডায়মন্ডহারবারে প্রতিকূর জোরদার লড়াই করছে। সেদিন নিউজ চ্যানেলে দেখলি তো– এই বয়সেও কমরেড সেলিম দুর্বৃত্তদের কিরকম ঘাড় ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে হটিয়ে দিল–পাগলা, এরে কয় বিপ্লব। বিপ্লবের স্ফূলিঙ্গ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। চারিদিকে পিট সিগারের গান বাজছে–তুই শুনতে পারছিস না?আমি কিন্তু স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। আমার সেই ‘নো পাসারান’ নাটকের দৃশ্যপট-সংলাপ মনে পড়ছে।কনিষ্ক ভাবে কি সব আকাশকুসুম বলছে শম্ভুদা। বাংলায় বামপন্থীরা আসন শূন্য।আর শ্রীরামপুরে দিপ্সীতা–যাদবপুরে কিনা সৃজনরা জিতবে! মানুষের ইস্যু ভিত্তিক ভোট ও রাজনৈতিক অঙ্ক ঠিকঠাক মেলাতে না পেরে খানিকটা অবাক হয় কনিষ্ক।যদিও প্রচার, জনসংযোগ, মিটিং, মিছিল সবেতেই বামপন্থীরা এগিয়ে। ছোটোখাটো পথসভা গুলোও কদিনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে জনসভায় পরিনত হয়েছে।কাজিরচকে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের পথনাটিকা-’বেচারামের বন্ধু’ দেখতে জন সাধারণের তিল ধারণের জায়গা ছিল না।৫৭ বাসস্ট্যান্ডে শতরূপের ক্ষুরধার বক্তব্য শোনার জন্য বৃষ্টি উপেক্ষা করেও কয়েকশো মানুষ বসেছিলেন।জনসমর্থনে আমাদের জয় সুনিশ্চিত। শুধু সময়ের অপেক্ষা।তবু ও মনের কোণে জমে থাকা ভয় থেকে শম্ভুদার কথাগুলো বিশ্বাস করেও– ঠিকঠাক ভরসা করে উঠতে পারে না।কারণ,কনিষ্ক খুব কাছ থেকে দেখেছে গত পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের সন্ত্রাস। বুথে বুথে বেলাগাম ছাপ্পা চলেছে, চারজনের ভোট একজন দিয়েছে।।কিভাবে কাউন্টিং হলে বন্দুক দেখিয়ে জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে বিজয়ী বাম প্রার্থীর সার্টিফিকেট, পঞ্চায়েত সমিতির সিটে সাড়ে সাতশো ভোটে হারতে থাকা সিট স্ট্যাম্প প্যাডের কালি লাগিয়ে ব্যালট নষ্ট করে পাশের গ্রামের জগমোহন সরকার ওরফে জগাদাকে একশো সাতাশ ভোটে জিতিয়ে দেওয়া হল। পাড়ায় জগমোহনকে দেখলেই বিরোধী দলের লোকজন এমনকি নিজের দলের কিছুজন সাড়ে সাতশো বলে ডাকে।এর মাঝে ফের প্রশ্ন করে বসে কনিষ্ক–তুমি বলছো দিপ্সীতা জয়ী হবে!সেবার দেখলে না–জগৎবল্লভপুর বিধানসভায় পাঁচ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকা আসনেও বাবুরা হেরে গিয়েছিল–শুধুমাত্র বাড়াং লে,বড়দ্বীপা,চকসাহাদৎ,আয়মাচক,বাঁকড়ায় কি হারে রিগিং করেছিল শাসকদলের লুটেরারা–দুজনের কথপোকথনে ইতিমধ্যে বেলা গড়িয়ে এসেছে– রান্নার কড়াইয়ে খুন্তি নাড়তে নাড়তে প্রত্যুত্তরে শম্ভুদা বলল–দেখিস এবারের ভোট এক্কেবারে অন্যরকম হবে–মানুষ এক্কেবারে চুপচাপ থ মেরে গেছে–দেশ ও রাজ্যের জনবিরোধী ইস্যুগুলোর প্রভাব ই ভি এমে পড়বে।রাতের অন্ধকারে গরীব মানুষকে টাকা-পয়সা-মদ-ত্রিপল বিলি করে কিংবা ভোটের দিন বিরিয়ানির প্যাকেট বিলি করে ও জিততে পারবে না তৃনমূল-বিজেপি।কারণ আমাদের তরুণ ব্রিগেড খোকন-বাবলা-হাসান-টাবু-অরিজিৎরা-শ্রীকান্ত-হারাধনরা তৈরি।আর মানুষ ও অত বোকা নেই যে লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছে বলেই সবাই ঘাসফুলে গিয়ে বোতাম টিপবে।যে কয়েকশো বুথে আমরা গত বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে এজেন্ট দিতে পারিনি সে সব জায়গায় কমরেডরা এবার বুথে বসবে–রাজ্য ও কেন্দ্র থেকে দুই বিষবৃক্ষকে উপড়ে বঙ্গোপসাগরে সাগরে ফেলে দেবে আম জনতা।তুই দেখেছিস না সন্ত্রাস প্রবণ এলাকায় দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে থাকা আমাদের পার্টি অফিসগুলো খুলতে শুরু করেছে–মে দিবসে ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে সব জায়গায় লাল টকটকে পতাকা উড়েছে। শহীদ বেদীতে সাদা রঙ হয়েছে। শুধুমাত্র দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কেন বামপন্থীদের ভোট দেব ? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই মানুষ আমাদের ভোট দেবে।কনিষ্ক শম্ভুদার সপাট উত্তরে এবার কিছুটা ধরাশায়ী হয়ে যায়।তার মস্তিষ্কে ক্ষরণ ঘটায় পদাতিক কবি সুভাষ মুখুজ্জের কবিতার কয়েকটি লাইন – “লাল উল্কিতে পরস্পরকে চেনা-/দলে টানো হতবুদ্ধি ত্রিশঙ্কুকে,/কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?”--ইতিহাসে অন্ধকার দিন পেরিয়ে নতুন যুগ বা লাল টুকটুকে দিনের প্রত্যাবর্তনের হাতছানি। বসে থাকতে থাকতে মাটি থেকে মেরুদন্ড সোজা করে উঠে দাঁড়ায় কনিষ্ক। আয়নার নিজের মুখোমুখি নিজে। মনের মধ্যে থেকে সব ধোঁয়াশাগুলো কাটতে থাকে।চোখে ভাসে দিনবদলের স্বপ্ন–তার অশীতিপর বাবার স্বপ্ন–ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে মনে পড়ে বছর পঁচিশ আগের নির্বাচন–হেদো কামারের জামরুল তলায় রাতে হ্যাজাক জ্বেলে শীতলপাটি বিছিয়ে মিটিং প্রধান বক্তা সোমনাথ হাজরা(ভটাইকাকু)--স্কুল হোস্টেলের নিচে হ্যাজাক জ্বেলে পঞ্চায়েত ভোটের গণনা–সে এক অন্যরকম আবেগ-উত্তেজনা–হাত কংগ্রেসের কেষ্ট সরকারকে এক ভোটে হারিয়ে দিল বামফ্রন্টের প্রার্থী বিভূতি মাস্টার –না তখন এত মারামারি বুথ জ্যাম ছিল না–তখন তৃণমূল দলটার জন্ম হয়নি।পিস্তল বা লাঠি হাতে উন্নয়ন দঁড়িয়ে থাকেনি মোড়ের রাস্তায়। জয় শ্রীরাম!কিংবা, ভারতমাতা কি জয় স্লোগান মার্কেটে আসেনি। অতীত ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কনিষ্কের চোখ প্রত্যয়ে জ্বলজ্বল করে ওঠে–চেতনায় ঘুরে আসে পিঠে কাস্তে-হাতুড়ি অথবা,হাতে চেগুয়েভারার উল্কি আঁকা তরুণদলের ছবি।অদ্ভুত কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি আমরা।সস্তার ফুটেজ পাওয়া শাসকের নবজোয়ার বা খেলা হবের মত ক্যাকোফোণিতে অতিষ্ঠ জনজীবন। কয়লা পাচার,গরু পাচার,মাটি মাফিয়াগিরি থেকে তোলাবাজি, শিক্ষায় পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি, বাজি ফাটিয়ে চন্দ্রযান উৎক্ষেপণের আহ্লাদে বীভৎস উল্লাস কিংবা রামলালার মূর্তির মস্তক বিকীর্ণ জ্যোতিপুঞ্জ যখন সমস্ত বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিকে রাহুগ্রাস করছে–তখন ফুলে উঠেছে শাসকের ছাপ্পান্ন ইঞ্চি, ছাতি
–রবীন্দ্রনাথ-রামমোহন-বিদ্যাসাগর-বিবেকানন্দের ভারতকে যারা সতীদাহ প্রথা ফিরে আসার পথ প্রশস্ত করে– ক্রমে সনাতন ভারতের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে–প্রতিনিয়ত দিকে দিকে সাম্প্রদায়িক বিভেদে রোপিত করছে হীন দাঙ্গার বীজভ্রূণ–বর্তমানে সেই মেগ্যালোম্যানিয়াক রাষ্ট্রের হাড় কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। একদিকে লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে প্রতিবাদী মানুষকে নিরস্থ করে রাখা–এবং চাকরির প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া শ্রী শ্রী চাকরিশ্বরী লিমিটেড–অন্যদিকে সংবিধান বিরোধী নাগরিকত্ব(সংশোধনী)আইন CAA–মন কি বাতের বুলি আওড়ানো ইলেক্টোরাল বন্ড কেলেঙ্কারির নায়ক– এই যুযুধান দুই পক্ষের সাথে ভোটের ময়দানে বাজছে–সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত –“পথে এবার নামো সাথী…”-- হাজার কন্ঠে জেগে উঠছে সেই রক্তপতাকার গান–বাংলার রাজপথে ঝড়-জল মাথায় করে চাকরির প্রত্যাশায় দিনগোনা চাকরি প্রার্থীদের আর্তনাদ আর, অন্যদিকে সদ্য চাকরি হারানো বা ঘুষের অর্থে প্রাপ্ত কয়েক হাজার ভুয়ো চাকরি প্রার্থীদের সাথে– ন্যায্যদের চাকরি চলে যাওয়ার আর্তনাদ–ব্যঙ্গ বিদ্রুপময় প্রতিবাদী ফেস্টুন-পোস্টার– শিক্ষক মানেই আজ যেন মুজতবা আলীর দেশে-বিদেশে রচনার ‘মা খু চিহল্ ও পঞ্চম্ হস্তম্’(আমি তো সেই পঁয়তাল্লিশ নম্বরের)--যা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছে সবই অলীক কুনাট্য বঙ্গে।অতিরিক্ত গাছ কেটে ফেলা, উন্নয়নের নামে নদী-জলাশয় বুজিয়ে অট্টালিকা নির্মাণ ,পাম্পে স্যাকসন করে অতিরিক্ত ভৌমজল তুলে নেওয়ার ফলস্বরূপ তীব্র দাবদাহ জনিত প্রকৃতির রুদ্ররোষ অনুভব করছে আসমুদ্রহিমাচল ভারতবাসী। শম্ভুদার ভাবনায়–আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের দালাল ফ্যাসিস্ট শক্তিকে সরিয়ে বামপন্থাতেই ভরসা রাখতে হবে জনসাধারণকে।এক্ষেত্রে বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়। এবারের নির্বাচনে তারুণ্যমাখা মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে দুর্নীতি মুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসন ফিরিয়ে আনতে প্রয়োগ করতে হবে নিজের ভোটাধিকার।লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো ছোটোখাটো আর্থিক প্রলোভন বা ইলেক্ট্রোরাল বন্ডের কালো টাকার ক্যুৎসিত বিজ্ঞাপনী চমকে প্রভাবিত হলে চলবে না। শাসকের অপপ্রচার, গুপ্তসন্ত্রাস উপেক্ষা করে আত্মমর্যাদা ভোট দিতে হবে। শম্ভুদার স্পষ্ট দৃষ্টিকোণ–দেশে ধর্মমোহজাত সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কদর্য রাজনীতিকে আমাদের পরাস্ত করা দরকার কনিষ্ক।বিপন্ন বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে।কবি,শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের কন্ঠ রোধ করতে দেওয়া চলবে না।সন্দেশখালির ঘটনার দিকে আলোকপাত করে গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা শাহাজাহান বাহিনীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারী স্বাধীকারের পক্ষে বামপন্থায় সমর্থন জানিয়ে শ্রীরামপুরে–দীপ্সিতা(জয়ী)--যাদবপুরে সৃজন–তমলুকে সায়ন–ডায়মন্ডহারবারে প্রতিকূর প্রমুখ লড়াকু প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়যুক্ত পার্লামেন্ট পাঠাতেই হবে। নারী শক্তিকে ভুল পথে চালিত করে বিজেপি-র ভোট ব্যঙ্ক বাড়ানোর কৌশলকে নস্যাৎ করে দিতে হবে।সত্যিই তুই ঠিকই বলেছিস কনিষ্ক–জগৎবল্লভপুরে আমাদের ঘরের ছেলে বৈদ্যনাথ(বাবু)কে আমরা সেবার জিতিয়ে আনতে পারিনি। শ্রীরামপুরে তীর্থঙ্করকে জেতাতে পারিনি।এটা আমাদের ব্যর্থতা ।কিন্তু এবারের লোকসভায় শ্রীরামপুরে দুর্নীতিগ্রস্থ ,অকল্যাণদের হটিয়ে দিপ্সীতাকে জেতাতেই হবে। কোনো রকম আত্মতুষ্টির জায়গা নেই ।চল– কনিষ্ক, রাত শেষ হওয়ার আগেই বুথ স্লিপগুলো বিলি করে আসি। রাতে পোলিং এজেন্ট ও বুথ কর্মীদের নিয়ে গোপন মিটিং করব।কনিষ্ক বলে–চলো শম্ভুদা হাতে বেশি সময় নেই, রাত পোহালেই ভোট–এলাকায় সি আর পি এফ টহল মারছে–এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। শম্ভুদা পাঞ্জাবিটা গলিয়ে নেয় ,কাঁধে ব্যাগ নিয়ে রহনা দেয় বর্গক্ষেত্রী পাড়ার দিকে। শম্ভুদার থেকে নিজের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কনিষ্ক হাঁটতে থাকে বাড়ির দিকে ইনস্ট্যাগ্রাম অ্যাকাউন্টের স্টোরিতে ভেসে ওঠে–dipsita1993 এর একটা ছবি– গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে, প্রচারের ফাঁকে দাবদাহে গাছের ছায়ায় রক্ত পতাকার নিচে বসে খানিক জিরিয়ে নিচ্ছে আগুনপাখি ।দু’পাশে লাল পতাকায় কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্ন ,ছবির নিচে লেখা:“ যবতক্ তোড়েঙ্গে নেহি, তবতক্ ছোড়েঙ্গে নেহি ”--বারবার হেরে যাওয়া জীবনে–শ্রেণি শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে– নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বিপ্লবের নতুন ট্যাগলাইন খুঁজে পায় কনিষ্ক । নিজের মনে আওড়াতে থাকে বিনয় মজুমদারের কবিতা–
“ফিরে, ফিরে এসো , চাকা,
রথ হয়ে, জয় হয়ে, চিরন্তন কাব্য হয়ে এসো।”
Comments :0