নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিগৃহীতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের, তাঁদের আটক-গ্রেপ্তার, একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা ‘মোদীতন্ত্র’র স্বৈরাচারে নতুন কিছু নয়। তাই সাক্ষী মালিক, বীনেশ ফোগটদের বিরুদ্ধেও শাহের পুলিশ যে এফআইআর দায়ের করবে, তা নিশ্চিতই ছিল। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে রবিবার রাতেই বজরঙ পুনিয়াদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। যে তৎপরতা যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে দেখানোর ছিল, সেই তৎপরতাই দেখা গেল অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ প্রশাসনের কদর্য রূপ দেখার পর সোমবার সাক্ষী মালিক প্রশ্ন করেছেন, ‘‘দেশে কি তবে সত্যিই স্বৈরাচার চলছে? ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে যে পুলিশ সাত দিন সময় নিয়েছিল, সেই পুলিশেরই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখতে সাত ঘণ্টা সময়ও লাগল না। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। গোটা বিশ্ব দেখছে, অ্যাথলেটদের সঙ্গে এই সরকার কী ব্যবহার করছে।’’ একটি ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি এদিন রাতে বলেন, ‘‘আন্দোলন জারি আছে। আজ গোটা দিন কেটে গিয়েছে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা ঠিক করতে। আমরা কোনও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করিনি। তবু অভিযোগ দায়ের করে দেওয়া হয়েছে। এক-একজন মেয়ের উপর ২০ জন পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সেই ছবি-ভিডিও আপনারা দেখেছেন। ফলে বুঝতেই পারছেন, আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে।’’ বজরঙ বলেন, ‘‘আমাকে কিছু না বলেই আটকে রাখে পুলিশ। কী অপরাধ আমাদের? জেলে তো ব্রিজভূষণের থাকার কথা ছিল।’’ রবিবার সকালে যখন কুস্তিগিরদের ধরপাকড় করা হচ্ছে, তখনই অন্য হাতে পুলিশ যন্তর মন্তরে তাঁদের ধরনা স্থল ভেঙে দেয়। আন্দোলনকারীদের সমস্ত জিনিসপত্র সরিয়ে দিয়ে পুরো ময়দান ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে।
বীনেশ একটি ভিডিও টুইট করে ওইদিন রাতে মারাত্মক অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, কালকাজি থানায় তাঁদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর মেয়েদের নিয়ে গোপন ভিডিও তৈরি করছিল এক পুলিশ আধিকারিক। তাঁরা বুঝতে পেরে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন। মোবাইল ঘেঁটে তেমন ভিডিও পাওয়াও যায়। বীনেশ আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সেই ভিডিও ইতিমধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কি না, তা বুঝতে পারছি না। তিনি প্রশ্ন করেন, কোন সংবিধানে কোন নিয়মে বলা আছে, বিনা অনুমতিতে ভিডিও করা যায়?
মোদী একদিকে যখন হিন্দুত্বের ধ্বজা উঁচিয়ে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করছিলেন, তখন পুলিশ যৌন নির্যাতনের ন্যায় বিচার চাওয়া এই অ্যাথলেটদের নির্মমভাবে মারছিল। অভিযুক্ত সাংসদকে সংসদে বসিয়ে পদকজয়ী কুস্তিগিরদের সঙ্গে এই ব্যবহার, মোদীর স্বেচ্ছাচারের অন্যতম জঘন্য উদাহরণ হিসাবে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। তার সাফাই দিয়ে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে এদিন কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, ‘‘যন্তর মন্তরের নির্দিষ্ট জায়গায় যতদিন আন্দোলন দেখিয়েছেন, ততদিন তো তাঁদের গায়ে কোনও আঁচড় পড়েনি। মোমবাতি মিছিলও করতে দেওয়া হয়েছে। দেশবাসী ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালন করছেন। আমাদের কাছে গর্বের বিষয় যে, গণতন্ত্রের পীঠস্থানে নতুন সংসদ ভবন তৈরি হলো।’’ আর তাই কোনও প্রতিবাদ-আন্দোলন চলবে না, বুঝিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রি রবিবার রাতেই কুস্তিগিরদের সমর্থন জানিয়েছেন। এদিন ফের টুইট করেছেন শ্যুটার অভিনব বিন্দ্রা।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি বিজেপি সরকারের আচরণের তীব্র নিন্দা করেছে। বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে তারা। কংগ্রেস এদিন ফের সোচ্চার হয়েছে, ‘‘বিজেপি ব্রিজভূষণের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েদের বিরুদ্ধে নির্যাতনে উৎসাহ জোগাচ্ছে।’’ সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব, বিএসপি নেত্রী মায়াবতী কুস্তিগিরদের আন্দোলনে সমর্থন করেছেন। কেন্দ্রের কাছে ন্যায়বিচারের আরজি জানিয়েছেন। শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ দিল্লি পুলিশের এই ব্যবহারের চূড়ান্ত সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কেউ যখন একটি অভিযোগ করছে, তখন তার তদন্ত হওয়া উচিত। ওই সাংসদ যদি নির্দোষই হন, তাহলে তদন্ত করতে সমস্যা কোথায়?’’
Wresters protest
দেশে স্বৈরাচার চলছে, ক্ষুব্ধ সাক্ষীর বয়ান
.jpeg)
×
Comments :0