Telangana Factory Blast

তেলেঙ্গানায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪, এখনও চলছে উদ্ধারকাজ

জাতীয়

তেলাঙ্গানার ওষুধ কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪। মঙ্গলবার পুলিশের এক আধিকারিক এ কথা জানিয়েছেন। তবে এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। সোমবার সকালে হায়দ্রাবাদের কাছে পশামিলারামে সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি ওষুধ কারখানায় এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। চুল্লিটি ধসে পড়ার সময় বেশিরভাগই শ্রমিক আটকা পড়েন। রাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ জনে দাঁড়ায়। মঙ্গলবার বিস্ফোরণস্থলে উদ্ধার ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকায় এই সংখ্যা বেড়ে বেড়েছে। মঙ্গলবার একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এখনও পর্যন্ত উদ্ধারকার্য চলছে। বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এদিন উদ্ধারকারী দল বিস্ফোরণস্থল থেকে আরও মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আগুনে রেজিস্ট্রার সহ সমস্ত কাগজপত্রই পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় কোনও শ্রমিকেরই নাম-পরিচয় জানা যায়নি। কিন্তু নিহতদের তালিকায় পরিযায়ীদের থাকার সম্ভাবনা বেশি। পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকেই চুক্তির ভিত্তিতে শ্রমিকরা এই কারখানায় কাজ করতে আসতেন। জানা গেছে বিস্ফোরণের সময় কারখানায় ১০৮ জন শ্রমিক ছিলেন। কারখানার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিস্ফোরণে আগুন লেগে যায়।
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ. রেবন্ত রেড্ডি মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। তিনি একটি সরকারি হাসপাতালে আহতদের সাথেও দেখা করবেন। তিনি বিস্ফোরণে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা এবং আহতদের ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছেন কতৃপক্ষকে। সেই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছেন তাৎক্ষণিক নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা এবং আহতদের পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রদানের জন্য। দেশের যে কোনও প্রান্তে কর্মরত শ্রমিকদের প্রাণহানি হলে কর্তৃপক্ষ, সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলে। কাজের জায়গায় শ্রমিক-মৃত্যু ফের তাঁদের প্রাণের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু এধরনের ঘটনা আটকাতে কোনও যথার্থ পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রে কেন চুল্লিতে তাপমাত্রা বেড়ে গেল, চুল্লির রক্ষণাবেক্ষণ আদৌ ঠিক মতো হতো কি না,  এরকম নানাবিধ প্রশ্ন উঠছে।
জেলা পুলিশ সুপার পরিতোষ পঙ্কজ জানিয়েছেন, ‘‘ধ্বংসাবশেষ সরানোর সময় আরও বেশ কয়েকজনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। উদ্ধার কাজ এখনও চলছে। ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’’
ইতিমধ্যে,  ময়নাতদন্ত এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহে সহায়তা করার জন্য ওসমানিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে একটি বিশেষ ফরেনসিক দল আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৫টি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে,  যার মধ্যে মাত্র চারজন নিহত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে।
রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের প্রধান ওয়াই নাগি রেড্ডি বলেন, বিস্ফোরণের পরে ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়া মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে উদ্ধারকারী আধিকারীকরা নিশ্চিত নন। তবে তল্লাশি এখনও চলছে। "সব কাজ শেষ হয়ে গেলে আমরা বলতে পারব যে ধ্বংসাবশেষের নিচে আর কোনো মৃতদেহ রয়ে গেছে কিনা বা সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে কিনা।
তেলঙ্গনার বিস্ফোরণ ঘটনায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দুই পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ এখনও পর্যন্ত নিঁখোজ। একজন আশংকা জনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। দাসপুর থানার নাড়াজোল গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার হরিরাজপুরে শ্রমিকদের পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। সিআইটিইউ ও পরিযায়ী শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পরিবারের সাথে দেখা করেন। পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা দেন। জানা গেছে  তেলঙ্গানার ওই ওষুধ ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন দাসপুরের চারজন। সোমবার সকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর থেকে অসীম টুডু(৩৯)এবং শ্যামসুন্দর টুডু(২৮)’র খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তাদের সহকর্মী ও পড়শি রাজীব টুডু। বছর ৫৫’র তারাপদ টুডু জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন রাজীব। তিনি বলেন,  ওই ফ্যাক্টরিতে তিন বছর ধরে কাজ করছিলেন তাঁরা। অসীম প্রায় এক বছর ধরে কাজ করছিলেন। শ্যামসুন্দর এবং তারাপদ গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ওখানে কাজে যোগ দেন। তারাপদ সম্পর্কে রাজীবের কাকা হয় বলে জানা গিয়েছে।
রাজীব বলেন,‘‘ রবিবার রাত ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি সেরে আমি ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসায় সে প্রাণে বেঁচেছে। তারাপদ টুডু সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন হলেও তার ছেলে শ্যামসুন্দর টুডু নিখোঁজ থাকায় মা চম্পা টুডু ও স্ত্রী সবিতা টুডু উদ্বিগ্ন। 
নিখোঁজ অসীম টুডুর স্ত্রী জয়শ্রী টুডু বলেন,  তার স্বামী গতমাসে কাজে গিয়েছিলো। প্রতিবেশী পরিযায়ী রাজীব টুডু পাশাপাশি সব হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও এই দুজনের কোনো নাম পায়নি হাসপাতালের তালিকায়। মর্গে ৩৫টি দেহ থাকলেও সেখানেও এই দুই জনকে পাওয়া যায়নি।
সোমবার সকাল ১০ টা নাগাদ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ১০০ মিটার দূর পর্যন্ত ছিটকে পড়ে শ্রমিকদের দেহ। ৩৫ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে বলা হলেও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশী বলে বলেন রাজীব। এখনও পুরো ধ্বংস্তূপ সরানো সম্ভব হয়নি। এখন নিখোঁজ থাকা দুই পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য জেলা প্রসাশন সহ রাজ্য সরকার কি পদক্ষেপ নেয় তার দিকে তাকিয়ে পরিবারের লোকজন।
পাটানচেড়ুর হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট শ্রীনিবাস রেড্ডি বলেন,‘‘ পোড়ার তীব্রতা এবং দেহাবশেষের অবস্থা বিবেচনা করে,  সোমবার গভীর রাতে হাসপাতাল কর্মীরা ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন। রাতে প্রায় ২০টি মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা নমুনা সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। ডিএনএ তাদের আত্মীয়দের সাথে মিলে গেলে,  মৃতদেহগুলি তাদের নিজের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘সংগৃহীত ডিএনএ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পেয়ে ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে  পাঠানো হচ্ছে,  যাতে পরিচয় নিশ্চিত করা যায়। তেলেঙ্গানা সাম্প্রতিক সময়ে এত বড় আকারের হতাহতের সাক্ষী হয়নি। এটি আমাদের সকলের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ হতে চলেছে।’’

Comments :0

Login to leave a comment