Editorial

ব্যর্থতারও সীমা থাকে

সম্পাদকীয় বিভাগ

কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটে গত ২২ এপ্রিল। প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদীরা গুলি করে হত্যা করে একজন স্থানীয় যুবক সহ ২৬ জন পর্যটককে। তারপর কেটে গেছে ৬০ দিন অর্থাৎ দু’মাস। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা আজও সেই হামলার কিনারা করতে পারেনি। হামলাকারী চার সন্ত্রাসবাদী সম্পর্কে কথা ও তথ্য জানা গেলেও তাদের হদিশ মেলেনি। কোথা থেকে কীভাবে এসে হামলা চালিয়ে কোথা দিয়ে কোথায় গা ঢাকা দিয়েছে বা পাকিস্তানে ফিরে গেছে তার কোনোকিছুই জানতে পারেনি এনআইএ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাগাড়ম্বরই সার এবং সন্ত্রাসবাদীদের বিশ্বের যেকোনও জায়গা থেকে খুঁজে বের করে এনে সাজা দেবার ফাঁকা আওয়াজই সার। তদন্তের নামে মনকে মন ঘি পুডিয়ে কাজের কাজ অশ্বডিম্ব।
ইতিমধ্যে জঙ্গি হামলাকে মূলধন করে একাধিকবার সফর করে ভোটের প্রচারে সুর চড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একলপ্তে তিনটি বিদেশ সফরও সেরে ফেলেছেন। শ্রীনগরে গিয়ে ট্রেন উদ্বোধন করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়েছেন। কিন্তু যেখানে ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল সন্ত্রাসবাদীরা সেখানে যাবার প্রয়োজনই বোধ করেননি। তেমনি পহেলগাম হামলার বদলায় পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে পাক সীমান্তে যেসব ভারতীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, হতাহত হয়েছেন তাদের কাছে যাওয়ারও সময় পাননি — তিনি এতটাই দেশপ্রেমী।
২২ এপ্রিলের ঘটনার পাঁচ দিন পর তদন্ত ভার হাতে নেয় কেন্দ্রীয় সংস্থা এনআইএ। জানা যায় হামলার সময় চার জঙ্গি উপস্থিত ছিল। কিন্তু তিন জঙ্গির ছবি সহ কিছু পরিচয় প্রকাশ করা হলেও এবং তাদের সন্ধান দিলে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা হলেও জঙ্গিদের টিকির সন্ধানও মেলেনি। ইতিমধ্যে নিরাপত্তাবাহিনী ও তদন্তকারীর গোটা কাশ্মীর নাকি চষে বেড়িয়েছেন। তল্লাশির নামে নিরীহ মানুষের উপর চরম অত্যাচার নামিয়ে আনা হয়েছে। অতীতে কখনো কারো জঙ্গি যো‍‌গ ছিল এমন ব্যক্তিদের বাড়িতে হামলা করে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কোনও জায়গা থেকে কোনও সূত্রের সন্ধান মিলেছে বলে জানা যায়নি। এনআইএ নীরব। অমিত শাহর দপ্তর মৌন। আর প্রধানমন্ত্রী তো ভোটের হিসাব কষতেই ব্যস্ত।
মোদী-শাহদের সরকার পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে শুরু করে পাক ভূখণ্ডের মধ্যেও কোথায় কোথায় জঙ্গি ঘাঁটি আছে, সেখানে কত জঙ্গি থাকে তার নিঁখুত হিসাব জানে। এমনকি পাক সেনাঘাঁটি থেকে জঙ্গিদের মদত দেবার সব তথ্য জানে। সেখানে ড্রোন, বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ঘাঁটি ধ্বংস করে শত শত জঙ্গি মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান থেকে চার পাক জঙ্গি নিরাপত্তারক্ষীদের কড়া নজরদারি এড়িয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পহেলগামে ২৬ জনকে খুন করে কোথায় গা ঢাকা দিল বা ফের সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে চলে গেল তার কোনও কিছুই জানতে পারল না। আইএমএফ, বিশ্বব্যাঙ্ক, এডিবি থেকে পাকিস্তানের ঋণ পাওয়া আটকাতে মরিয়া হলেও দেশে জঙ্গি খুঁজে বার করায় কোনও তাপ উত্তাপ দেখা যাচ্ছে না। তবে কি ধরে নিতে হবে পাকিস্তানে হামলা চালাতে যতখানি আগ্রহ তার ছিটেফোঁটাও নেই পহেলগামের জঙ্গিদের ধরার। এটা বিশ্বাস করতে হবে পাকিস্তানের ভেতর জঙ্গিদের গতিবিধি মোদী-শাহদের নখদর্পণে, কিন্তু দেশের ভেতরে জঙ্গিদের কোনও খবরই রাখে না। তাই দু’মাসেও জঙ্গিদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এটা কি সত্যিই ব্যর্থতা না সচেতন ব্যর্থতা।
 

Comments :0

Login to leave a comment