PULWAMA CONSPIRACY

পুলওয়ামা রহস্য

সম্পাদকীয় বিভাগ

Pulwama attack conspiracy bjp narendra modi bengali news

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় বিস্ফোরণের ঘটনা অনেকটাই আজও অন্ধকারেই থেকে গেছে। যে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৪০জন সিআরপিএফ জওয়ানের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল তার পুরোপুরি রহস্য উন্মোচন আজও হয়নি। সরকারে সর্বোচ্চ স্তরে গোটা ঘটনার পূর্ণ রিপোর্ট রয়ে‍‌ছে কিনা জানার উপায় নেই। 

তবে দেশপ্রেমিক জনগণ গোটা বিষয়টা সম্পর্কে আজও পুরোপুরি অন্ধকারে। ঘটনার পর থেকে অসংখ্য গুরুতর প্রশ্ন সামনে এসেছিল কিন্তু তার অধিকাংশের উত্তর দেশবাসীর গোচরে আনা হয়নি। অথচ ঘটনাটি নিয়ে শাসকদলের তরফে রাজনৈতিক হুল্লোড় চরমে উঠেছিল। নির্বাচনে মোদীর দল শহীদ জওয়ানদের মরদেহ নিয়ে নির্বাচনে রাজনীতির ঝড় তুলেছিলেন।

 দেশময় পাক-বিরোধী রণহুঙ্কার আর দেশপ্রেমের প্লাবন সৃষ্টি করে ভোটে জেতার রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছিল। অথচ কারা কীভাবে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটালো, কাদের গাফিলতিতে এত জওয়ানকে এভাবে মরতে হলো তার কোনও সদুত্তর মিলল না। শাসকদলের কাজ কারবার দেখে এমনিই মনে হয়েছিল যে ঘটনাটা তাদের কাছে শাপে বর হয়ে হাজির হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালিয়েছে ঠিক কথা। কিন্তু কাদের অপদার্থতা ও গাফিলতিতে সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষে একাজ সহজ হয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হয়নি। 

ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে দেশপ্রেম, দেশের সুরক্ষার প্রশ্নে মোদীরা যতটা হামবড়া ভাব দেখান, যত হুঙ্কার ছাড়ে এবং ছাতি ফোলান বাস্তবে সবটাই ফাঁকা আওয়াজ। ভাষণ আর কাজ যদি এক হতো তাহলে কোনও অবস্থাতেই পুলওয়ামার ঘটনা ঘটতে পারত না। জম্মু থেকে শ্রীনগরে জওয়ানদের পাঠাতে বিমান চাওয়া হলেও দেওয়া হয়নি। জওয়ানদের বাধ্য করা হয়েছিল সড়ক পথে বিশাল কনভয় নিয়ে যেতে। 

আগে থেকে রাস্তাকে নিরাপদ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হয়নি। পথে পর্যাপ্ত নজরদারি ব্যবস্থা ছিল না। নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থা এতটাই ঢিলেঢালা ছিল যে সেনা কনভয়ে  যে কোনও সময় অন্য গাড়ি ঢুকে পড়ছিল।
যে গা‍‌ড়িটি ২০০ কিলেগ্রাম আরডিএক্স নিয়ে উলটো দিক থেকে বিনা বাধায় কনভয়ে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল সেটি ১০-১৫ দিন ধরে জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ালেও কেউ সন্দেহ করেনি বা তল্লাশি করেনি। 

অথচ গা‍‌ড়িটি নাকি বিস্ফোরক নিয়ে পাকিস্তান থেকে এসেছিল। বড়সড় পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে এমন একটি ঘটনা ঘটানো হলো ৫৬ ইঞ্চি ছাতিওয়ালা শক্তিমান প্রধানমন্ত্রী কিছুই জানতে পারলেন না। অবশ্য জানতে পারলেন না নাকি জানার চেষ্টা করেননি বোঝা দুষ্কর। জেনেও নিষ্ক্রিয় ছিলেন কিনা সেটাই বা কে বলতে পারে। ঘটনাকে নির্বাচনে জেতার কাজে ব্যবহারের মরিয়া প্রয়াস দেখে এমন সন্দেহ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সন্দে‍হের নিরসন করা যেত যদি ঘটনার পূর্ণ রিপোর্ট জনসাধারণের গোচরে আনা হতো। কিন্তু তা হয়নি সবটাই আড়ালে চাপা পড়ে আছে গোড়া থেকেই।


পুলওয়ামা নিয়ে মানুষের সন্দেহ নতুন করে উসকে দিয়েছেন তৎকালীন অবিভক্ত জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে দিয়েছেন চরম নিরাপত্তা গাফিলতির কথা। ঘটনার পরপরই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সবটা জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতে বলেছিলেন। অর্থাৎ সরকারের দিকে আঙুল ওঠে এমন কোনও কিছুই প্রকাশ্যে আনা যাবে না। মালিকের ভাষ্যে সরকারের নজর ছিল নির্বাচনের দিকে বেশি।


লোকসভা ভোটের তিনমাস আগে ঘটেছিল পুলওয়ামার ঘটনা। সেই ঘটনাকে ঘিরে দেশপ্রেমের জিগির তুলে বিপুল ভোটে জিতলেন নরেন্দ্র মোদীরা। দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে তিন মাস পরে সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় এবং পূর্ণাঙ্গ রাজ্যকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়, সবটা যেন কেমন ছকে বাঁধা।

 

Comments :0

Login to leave a comment