KMC DENGUE

ডেঙ্গু রোধী প্রশিক্ষণের টাকায় শোভাযাত্রা,
প্রশ্নের মুখে কলকাতা কর্পোরেশন

কলকাতা

dengue kmc nuhm  bengali news

কলকাতা কর্পোরেশনের ১৪৪টি ওয়ার্ডের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক এবং কর্মচারীদের ডেঙ্গু প্রতিরোধী ট্রেনিং দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল আর্বান হেল্থ মিশন বা এনইউএইচএম’র তরফে বরাদ্দ হয়েছিল ২১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। অভিযোগ, জাতীয় নগর স্বাস্থ্য অভিযানের এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার বদলে সেই টাকায় শোভাযাত্রা করেছে কলকাতা কর্পোরেশন। শোভাযাত্রায় ‘ডেঙ্গু বিরোধিতার’ প্রচার হয়েছে বলে দাবি কর্পোরেশনের। 

ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রতি বছরই মিছিল আয়োজন করে থাকে তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড। বিভিন্ন সময়েই এই শোভাযাত্রার যৌক্তিকতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কিন্তু সেই মিছিলগুলির ব্যয়ভার কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকেই বহন করা হত। 

কিন্তু বর্তমানে কলকাতা কর্পোরেশনের কোষাগারের বেহাল দশা। কিন্তু তারপরেও বাড়তি খরচে রাশ টানতে রাজি নয় তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড। অভিযোগ, ডেঙ্গু প্রতিরোধী প্রশিক্ষণে কাটছাঁট করে সেই টাকায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের দিয়ে মিছিল করানো হয়েছে। 

১৫ মার্চ এনইউএইচএম’র তরফে কর্পোরেশনকে তহবিল বরাদ্দের সিদ্ধান্ত চিঠি দিয়ে জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, কলকাতা কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ৩০ জন করে কর্মীকে ডেঙ্গি প্রতিরোধী ট্রেনিং দিতে হবে। এই কর্মীদের মধ্যে চিকিৎসক বা মেডিক্যাল অফিসার, নার্সের পাশাপাশি ফার্মেসিস্ট, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, ক্লার্ক, ফিল্ড ওয়ার্কার সহ সমস্ত স্তরের কর্মীদেরই থাকার কথা। 

এনইউএইচএম’র নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৪৪টি ওয়ার্ড প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ৩০ জন করে স্বাস্থ্যকর্মীকে বাছাই করলে সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩২০। ২১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে কর্মীদের খাতা, পেন এবং অন্যান্য সামগ্রীর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা। বাকি ১২ লক্ষ ৯৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ ছিল ২ দিন ধরে চলা ট্রেনিংয়ের খাবারের খরচ হিসেবে। এরজন্য বরো পিছু বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৫ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা। 

নির্দেশিকা অনুযায়ী, এই ট্রেনিংয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৯ এবং ৩১ মার্চ। কিন্তু তার বদলে ২৮ এপ্রিলকে বেছে নেয় কর্পোরেশন। স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ,  সেদিন কার্যত নাম কা ওয়াস্তে ট্রেনিং দেওয়া হয় তাঁদের। আর বাকি তহবিল ব্যবহৃত হয় কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ওয়ার্ড ভিত্তিক পদযাত্রায়। 

দুই দিনের প্রচারের প্রথম দিন ছিল শুক্রবার। সেদিন শান্তনু সেন সহ তৃণমূলের প্রথম সারির একগুচ্ছ নেতাকে সামনে রেখে ডেঙ্গু বিরোধী রোড শো করে কলকাতা কর্পোরেশন। ছিল রণপা, এবং খোল বাজিয়ে সঙ্কীর্তনের আয়োজন। ট্যাবলোর উপর ত্রিশূল বিদ্ধ ডেঙ্গুর মশার কাটআউট ও দেখা যায়। কলকাতা কর্পোরেশনের মূল ভবন থেকে শুরু হয় এই রোড শো। মোয়র ফিরহাদ হাকিম এবং ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ সামনে থেকে গোটা বিষয়টির নেতৃত্ব দেন। সরকারি তহবিল খরচ করে ডেঙ্গু প্রতিরোধী সভাও হয়। 

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে কলকাতা শহরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাড়ে পাঁচ হাজার। যা একপ্রকার রেকর্ড। সরকারি হিসেবে কলকাতা শহরে ডেঙ্গু পজিটিভিটি’র হার ছিল ২৫ শতাংশের আশেপাশে। যদিও বেসরকারি হিসেবে সেই হার ছিল ৪০ শতাংশ। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৮০০’র কাছে মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২০২২ সালে। কলকাতার পাশাপাশি বাকি রাজ্যের অবস্থাও ছিল একইরকম। বছর শেষে সারা রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮ হাজারের কিছু বেশি। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিন ধুমধাম করে সভা বা শোভাযাত্রায় ডেঙ্গু মোকাবিলা করা যায় না। অনেক বেশি জরুরি এলাকাভিত্তিক সমস্যা অনুযায়ী নির্দিষ্ট চিকিৎসা এবং প্রচারের প্রশিক্ষণ। 

শনিবার কলকাতা কর্পোরেশনের ১৪৪টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা ডেঙ্গি বিরোধী মিছিল করেন। সকাল ৯টা থেকে ১০টা অবধি চলে এই ওয়ার্ড ভিত্তিক রোড শো। শাসকদলের একাধিক কাউন্সিলর জানিয়েছেন, মিছিল আয়োজনের জন্য মেডিক্যাল অফিসার মারফৎ তাঁরা ১৫ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। 

গোটা বিষয় থেকেই স্পষ্ট, এনইউএইচএম’র নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করে নিজেদের মতো তহবিল খরচ করেছে কলকাতা কর্পোরেশন। 

এই ঘটনা সামনে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে কলকাতা কর্পোরেশনের অন্দরে। যদিও এই ধরণের কীর্তি এর আগেও করেছে কলকাতা কর্পোরেশন। বছর দুয়েক আগে শারদোৎসবের সময়ে ক্লাবগুলিকে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী প্রচার এবং প্রতিযোগিতা করার জন্য অনুদান দেয় কর্পোরেশন। অভিযোগ ওঠে, সেই টাকাও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে এনইউএইচএম’র তহবিল থেকে দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা কর্পোরেশনের অডিটও আটকে ছিল বেশ কিছুদিন। ফের একবার একই ধরণের কাজ করার অভিযোগ উঠল কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে। 

Comments :0

Login to leave a comment