Minati Sen

প্রয়াত জলপাইগুড়ির প্রাক্তন সাংসদ মিনতি সেন

রাজ্য

প্রয়াত হলেন জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ মহিলা নেত্রী কমরেড মিনতি সেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। ১৯৯৮ সাল থেকে টানা তিন বার জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। জন্মসূত্রে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাসিন্দা কমরেড মিনতি সেন রায়গঞ্জ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্কুল জীবন শেষ করেন।   

রাজনীতিতে আসার আগে বাবার মতো নাট্য জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শৈশব থেকেই বাবার দেখভালে জড়িয়ে ছিলেন সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে। যৌথ পরিবারের অন্যান্য ভাইবোনের মতো তিনিও হয়ে ওঠেন একজন পটু অভিনয় শিল্পী, ভালোলাগার জায়গা ছিল নাচ, কত্থক শিল্পী হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলছিলেন কিশোরী মিনতি সেন। 

 

স্বাধীনতা উত্তর অবিভক্ত দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁ মহকুমার মালদুয়ারে ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ  করেন তিনি। স্কুল ও কলেজ জীবন কাটে পশ্চিম দিনাজপুরের রায়গঞ্জে। শৈশব থেকে বেড়ে ওঠেন এক পরম্পরাগত সাংস্কৃতিক পরিবারে। 

 

১৯৬৩ সালে  জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের কর্মচারী প্রয়াত আশিষ সেন এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চলে আসেন জলপাইগুড়ি শহরে পুরাতন পুলিশ লাইন এলাকায়। জলপাইগুড়ি জেলা শহরের উদবাস্তু কলোনির কো-এডুকেশান স্কুল দেশবন্ধুনগর বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং সেখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন তিনি। সেখান থেকেই শিক্ষক আন্দোলনে সাথে জড়িয়ে পরেন তিনি। জেলার মহিলা আন্দোলনের একজন সংগঠক হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। মহিলা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৮০ সালে তিনি পার্টির সদস্যপদ লাভ  করেন। পরবর্তিতে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা, সংগঠনের জেলা সভাপতি, রাজ্য কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন। ২০০০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত  সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি। 

সংসদে তিনি বিভিন্ন বিষব সরব হয়েছিলেন। তাঁর সময়েই হলদিবাড়ি থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে কলকাতাগমী তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস চালু হয়। তাঁর সময়কালে জলপাইগুড়ি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুল গেমস অনুষ্ঠিত হয়, জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন কে মডেল স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব তিনি জমা দেন। 

অসুস্থতা জনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে তিনি গত প্রায় ৬ মাস ধরে বিভিন্ন সময় শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির বিভিন্ন নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিভিন্ন পরিক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছেন। 

পরবর্তীতে জেলা পার্টি ও পরিবারের সদস্যদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। গত কয়েকদিন আগে তাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। শনিবার ভোরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক যাপন করেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টির রাজ্য সম্পাদক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম, মহিলা নেত্রী কনিনীকা ঘোষ, মিনতি ঘোষ, জাহানারা খান, পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য সলিল আচার্য, জেলা সম্পাদক পীযূষ মিশ্র সহ অন্যান্য রাজ্য ও জেলা নেতৃবৃন্দ। কমরেড মিনতি সেনের পরিবারে দুই নাতনি, দুই পুত্রবধূ ও এক পুত্র বর্তমান। রবিবার জলপাইগুড়িতে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ নিয়ে আসা হবে বলে জানা গেছে। কমরেড মিনতি সেনের মরদেহ রবিবার জলপাইগুড়ি জেলা পার্টি দপ্তরে (সুবোধ সেন ভবন) সকাল ৭ টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শায়িত থাকবে। 

Comments :0

Login to leave a comment