Trump Iran

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আসলে আমেরিকা

সম্পাদকীয় বিভাগ

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প মুখে যা-ই বলুন এবং বিভিন্ন সময় পরস্পর বিরোধী ভাষ্য আউড়ে যতই বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করুন ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ও উৎসাহী সমর্থক ট্রাম্প নিজে। আমেরিকার কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন, সাহায্য, সহযোগিতার গ্যারান্টি নিয়েই ইজরায়েলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইজরায়েলের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় আগ বাড়িয়ে যুদ্ধে নামার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। পশ্চিম এশিয়ায় ইজরায়েল যত শক্তিশালী দেশই হোক না কেন, তাদের সমর শক্তি যত আধুনিক, উন্নত ও বিপুল হোক না কেন আমেরিকা পেছনে না থাকলে ইজরায়েলের দম্ভের বেলুন মুহূর্তে ফে‍‌টে যাবে। আমেরিকা ছাড়া ইজরায়েল কার্যত অস্তিত্বহীন।
ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন তারা পশ্চিম এশিয়ার এই যুদ্ধে নিজেদের জড়াতে চান না। হোয়াইট হাউস থেকেও বলা হয়েছে ইজরায়েল যুদ্ধে তাদের কোনও ভূমিকা নেই। কিন্তু ট্রাম্প প্রতিদিন এই প্রশ্নে যেসব মন্তব্য করে চলেছেন তাতে তিনি নিজেই নিজেকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। বলেছেন ইরানকে তিনি পরমাণু গবেষণা বন্ধ করার জন্য ৬০দিন সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু ইরান তাতে রাজি হয়ে চুক্তি করতে উৎসাহ দেখায়নি। ৬১দিনের ইজরায়েল ইরান আক্রমণ করে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। এখনো সময় আছে ইরান যদি ট্রাম্পের কথা মতো চুক্তিতে রাজি হয় তাহলে ভালো না হলে চরম মূল্য চোকাতে হবে। অর্থাৎ ইরান পরমাণু গবেষণা করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে আমেরিকার সাথে। আমেরিকার শর্তে আমেরিকার দেওয়া সময়সীমা না মানায় ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। তাহলে আমেরিকাই কি তাদের হামলা চালানোর বরাত দিয়েছে ইজরায়েলকে। এদিকে ইজরায়েল বলছে তারা আলোচনায় বিশ্বাস করে না। ইরানের পরমাণু গবেষণা বন্ধ করার একমাত্র রাস্তা সামরিক হামলা। যুদ্ধ করেই ইরানের পরমাণু গবেষণার যাবতীয় আয়োজন ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
আমেরিকার হাতে বিপুল পরমাণু অস্ত্র আছে। ইজরায়েলের হাতেও আছে পরমাণু অস্ত্র। মার্কিন সহায়তায় ইজরায়েল পশ্চিম এশিয়ায় একমাত্র পরমাণু শক্তিধর দেশ হয়ে উঠেছে। তারা কোনও অবস্থাতেই চায় না দ্বিতীয় কোনও দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকুক। তাই যে কোনও মূল্যে সম্ভব ইরানের পরমাণু গবেষণা বন্ধ করতে তারা মরিয়া এবং বেপরোয়া। ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সনদের স্বাক্ষরকারী দেশ। অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরমাণু গবেষণার অধিকার তাদের আছে। কিন্তু আমেরিকা ও তার পশ্চিমী সহ‍‌যোগী, বিশেষ করে ইজরায়েল সেই অধিকারও কেড়ে নিতে চায়। এই আমেরিকা  ভারতের পরমাণু গবেষণাতেও পদে পদে বাধা দিয়েছিল এবং হাজারো নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সব রকমের  বাধা দিয়েছিল। অতি সক্রিয় ছিল চীনের বিরুদ্ধেও। কিন্তু পাকিস্তানের পরমাণু গবেষণায় তারা ছিল অনেকটাই নীরব। আসলে আমেরিকা চায় একাই দুনিয়াদারি চালাবে। তাই আর কারো হাতে বিশেষ করে মিত্র নয় এমন কারো হাতে পরমাণু শক্তি দিতে রাজি নয়। ইরান আমেরিকার চির শত্রু। পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্য প্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যের এজেন্ট ইজরায়েল। আর ইজরায়েলের আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণ নীতির একমাত্র বিরোধী ইরান। ইরানকে কবজা করা না গেলে মধ্য প্রাচ্যে ইজরায়েল-মার্কিন স্বপ্ন সফল হবে না। তাই ইরানকে ধ্বংস করাই ইজরায়েল-মার্কিন জুটির একমাত্র লক্ষ্য। ইরানের বিরুদ্ধে ইজরায়েলকে যুদ্ধে নামিয়ে দিয়ে আমেরিকা ইরানের চার দিকে তাদের রণসজ্জা সাজাতে শুরু করেছে। আশপাশের সমস্ত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে সেনাবল ও অস্ত্র সম্ভার বাড়াচ্ছে। একাধিক বিমানবাহী রণতরী পাঠাচ্ছে উপসাগরে ও ভূমধ্য সাগরে। যাবতীয় মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য, উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবহার করতে দিচ্ছে ইজরায়েলকে। সামনে ইজরায়েল। আসলে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ট্রাম্পের আমেরিকা।

Comments :0

Login to leave a comment